ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শুরু হয়ে গেছে জোট-গঠন রাজনীতি, সব থেকে বড় জোট ড. কামালের নেতৃত্বে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২০ জুলাই ২০১৭

শুরু হয়ে গেছে জোট-গঠন রাজনীতি, সব থেকে বড় জোট ড. কামালের নেতৃত্বে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ আগামী দুই মাসের মধ্যে আরও তিনটি রাজনৈতিক জোটের যাত্রা শুরু হচ্ছে। ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে গাঁটছড়া বাঁধার পরিকল্পনা এসব দলের নেতাদের। জোট গঠনের মধ্য দিয়েই ভোটে যেতে চায় এসব রাজনৈতিক দলগুলো। সম্প্রতি বাম নেতা আসম আবদুর রবের বাসায় জোট গঠনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতাদের ডাকা হয়েছিল। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপের কারণে তরিঘরি করে বৈঠক শেষ করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ১৪ দল, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট, এরশাদ ও নাজমূল হুদার জোটের বাইরে সবচেয়ে শক্তিশালী জোট হবে গণফোরাম সভাপতি ড. কামালের নেতৃত্ব। অন্তত মাঝারি গোছের প্রায় আটটি দল থাকতে পারে এ জোটের মধ্যে। নতুন রাজনৈতিক জোট গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একাধিক রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় দেড় বছর বাকি থাকলেও প্রস্তুতি আগেভাগেই শুরু করতে চান তারা। এরি ধারাবাহিকতায় জোট গঠন প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে বলেও জানান তারা। রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে এ মুহূর্তে সব নেতাদের একসঙ্গে বৈঠক করার সুযোগ নেই। তাতে আলোচনা থেমে আছে তা নয়। আলোচনা ও জোট গঠন বিষয়ে অগ্রগতি যথেষ্ট বলেও জানান তারা। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বাইরে আরও তিনটি রাজনৈতিক জোট আত্মপ্রকাশের তথ্য পাওয়া গেছে। নেতারা বলছেন, গণফোরাম, জাসদ (জেএসডি), বিকল্পধারা বাংলাদেশ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্য ছাড়া সমমনা আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিয়ে একটি জোট গঠন হতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদ ও বামমোর্চা সমন্বয়ে বামপন্থীদের একটি বৃহত জোট এখন আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায়। অপরদিকে বিভিন্ন ইসলামি দলও নিজেদের আলাদা জোট গঠন করে ভোটে যেতে চায়। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়ায় জামায়াতের রাজনীতি এখন খুব একটা চাঙ্গা নয়। তাছাড়া মানুষ তাদের প্রতি নানা কারণে সন্তুষ্ট হতে পারছে না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জামায়াতসহ ধর্মীয় মতাদর্শে বিশ্বাসী ভোটারদের ভোটগুলো কাজে লাগাতে চায় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো। জানতে চাইলে গণফোরামের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা অনেকদিন আগে থেকেই জোট গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিগত নির্বাচনের সময় আমাদের জোট ছিল। কিন্তু নানা কারণে এখন আর আমরা জোটে নেই। কথা ছিল ১৪ দলে থাকার। সেখানেও আমরা যাইনি। তাই সবাই এখন নির্বাচনী জোট নিয়ে কথা বলছি। আমরাও এ ব্যাপারে আগ্রহী। সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে নানাভবে আলোচনা চলছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে অগ্রগতি হবে। তিনি বলেন, জোট করেই আমরা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আশা করি মানুষ আমাদের ভোট দেবে। বাম দলগুলোর বৃহত্তর জোটের প্রস্তুতি ভোট না থাকলেও জোট করার ক্ষেত্রে বেশ দক্ষ বাম দলগুলো। বিগত কয়েক নির্বাচনে একাধিক বাম নেতার জামানত পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তবুও রাজনীতি বলতে কথা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোট গঠনের বিষয়ে সরব রাজধানীর পল্টন এলাকা। এ এলাকাতেই বাম রাজনৈতিক দলগুলোর বেশিরভাগ অফিস। অফিসে অফিসে এখন নেতাদের যাতায়াত বেড়েছে। চলছে নানামুখী আলোচনা। জোটের আকার বাড়ানোর চূড়ান্ত মহড়া। অবশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করার লক্ষ্যে জোট করেছে দেশের প্রধান তিন বাম রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাসদ ও গণতান্ত্রিক বামমোর্চা। গত ১৫ জুলাই সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত তিন দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে আগামী ২৭ জুলাই ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সমাবেশ থেকেই সিপিবি, বাসদ, বামমোর্চা জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। বৈঠকে ড্রাফটিং কমিটিও গঠন করা হয়। এ কমিটির সদস্যরা হলেন, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহ আলম, বাম মোর্চার সমন্বয়ক সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী) সেক্রেটারি শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, সিপিবি প্রেসিডিয়ামের সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহ আলম বলেন, সিপিবি, বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দুর্যোগ, সঙ্কট অবক্ষয় থেকে দেশকে মুক্ত করা জরুরী কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করে গণতন্ত্রহীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ ও লুটপাটতন্ত্র থেকে দেশকে বাঁচাতে কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও আমরা মানুষের প্রয়োজনে মাঠে থাকতে চাই। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে অগ্রসর করতে রাজনীতিতে বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ২৭ জুলাই আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে ঢাকায় সমাবেশ আহ্বান করেছি। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, দেশে যদি নির্বাচনের একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হয় তাহলে অবশ্যই আমরা জোটগতভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেব। তিনি আরও বলেন, বামপন্থী শক্তির এ আন্দোলনের ধারা কেবল সেøাগাননির্ভর হবে না। বিকল্প কর্মসূচী তুলে ধরে আমরা মানুষের কাছে হাজির হব। দেশে চলমান সাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্রহীনতা, লুটপাটতন্ত্রেও যে ধারা চলছে, তার বিপরীতে বিকল্প শক্তি-সমাবেশ ও জনগণের ঐক্য গড়ে তুলব। গত ১৩ জুলাই রাতে জোট গঠনের লক্ষ্যে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় বৈঠক করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। বড় দুই দলের নেতৃত্বাধীন জোট দুটির বিপরীতে বিকল্প একটি জোট গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন নেতারা। সিদ্ধান্ত হয় দ্রুতই আবার বৈঠক করে এর রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এ ব্যাপারে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, অনেককেই ডাকা হয়েছিল। অনেকে এসেছেন, অনেকে আসেননি। জোট করার চেষ্টা ইসলামী দলগুলোর জাকের পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলনসহ একাধিক ইসলামি দলও নির্বাচনের আগে জোটগতভাবে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
×