ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেয়ার বিক্রির আনুষ্ঠানিক অনুমোদন নিতে শেভরনের দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২০ জুলাই ২০১৭

শেয়ার বিক্রির আনুষ্ঠানিক অনুমোদন নিতে শেভরনের দৌড়ঝাঁপ

রশিদ মামুন ॥ নিজেদের শেয়ার বিক্রির আনুষ্ঠানিক অনুমোদন নেয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছে মার্কিন কোম্পানি শেভরন। গত এপ্রিলে চীনা কোম্পানি হিমালয় এনার্জির কাছে বাংলাদেশে থাকা গ্যাস কোম্পানিতে নিজেদের শেয়ার বিক্রির খবর জানায় শেভরন। যদিও এর আগে থেকেই বাংলাদেশ গ্যাসক্ষেত্রগুলো কেনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য একটি কোম্পানিকে দিয়ে শেভরনের সম্পদ মূল্যায়ন করছিল পেট্রোবাংলা। শেভরনের শেয়ার বিক্রির পর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে বেঁকে বসে পেট্রোবাংলা। এর পর থেকেই মার্কিন কোম্পানিটি নানাভাবে সরকারের সিদ্ধান্তে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বুধবার পেট্রোবাংলায় শেভরনের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল দুপুর পৌনে একটা পর্যন্ত বৈঠক করেছে। এসময় পেট্রোবাংলার অভ্যন্তরে কোন সাংবাদিককে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। কেন হঠাৎ সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, শেভরনের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটকে বলা হয়েছে যেন সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া না হয়। বৈঠকের পর পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোঃ ফয়জুল্লাহ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন আমাদের এমন নির্দেশনা ছিল না। তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি কেন পেট্রোবাংলার অনুমতি না নিয়ে শেয়ার হস্তান্তর করা হলো। আমরা শেভরনের সম্পদ মূল্যায়ন করেছি। এখন সেটা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে শেভরনের সম্পদ হস্তান্তরের বিষয়ে কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনে যা বলা হয়েছে সে অনুযায়ী কাজ হবে। তবে আইনে কি বলা আছে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান কিছু বলেননি। সমস্যা উত্তরণের প্রথম বৈঠক শেষে চেয়ারম্যান বলছেন, এ বিষয়ে তাদের আরও আলোচনার প্রয়োজন। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, শেভরন এর আগেও শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়ে জ্বালানি বিভাগে দেনদরবার করেছে। এছাড়াও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে মার্কিন কোম্পানিটি যোগাযোগ করেছে। তবে সরকারের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত পেট্রোবাংলার সঙ্গেই আলোচনায় বসে প্রতিষ্ঠানটি। আলোচনায় বসার ক্ষেত্রে নিজেদের নামও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ না করার শর্ত দেয় শেভরণ। এজন্য পেট্রোবাংলা থেকে শেভরনের প্রতিনিধি দলের নাম প্রকাশ করা হয়নি। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, শেভরনের সঙ্গে যে চুক্তি ছিল পেট্রোবাংলার সেখানে সম্পদ হস্তান্তরের আগেই পেট্রোবাংলার অনুমোদন নেয়ার শর্ত ছিল। কিন্তু শেভরন কোন প্রকার অনুমোদন না নিয়েই সম্পদ হস্তান্তরের চুক্তি করেছে। অনুমোদন দেয়ার আগে গ্যাসক্ষেত্রগুলো কিনতে আসা কোম্পানিটির আর্থিক এবং কারিগরি যোগ্যতা যাচাই করে পেট্রোবাংলা। কিন্তু শেভরন চীনা কোম্পানির ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলকে নিয়ে এসে সাত দিন ধরে গ্যাসক্ষেত্রগুলো দেখালেও পেট্রোবাংলার কাছ থেকে অনুমোদন নেয়নি। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে গ্যাস সঙ্কটের কথা বলে বিদ্যমান খনি থেকে গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। এরমধ্যে শেভরন বিবিয়ানাতে সাড়ে চার ট্রিলিয়ন ঘনফুটের (টিসিএফ) ওপর মজুদ থাকার দাবি করে। পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয় শেভরনের দাবি মানতে না চাইলে পিএসসির শর্ত অনুযায়ী তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে মজুদ নির্ধারণ করা হয়। সেখানেও একটি মার্কিন কোম্পানিকে দিয়ে মজুদ নির্ধারণ করে শেভরন তাদের দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করে। এরপর শেভরন বিবিয়ানাতে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে নতুন কূপ খননের পাশাপাশি প্রসেস প্লান্ট এবং অন্য অবকাঠামো নির্মাণ করে। পরবর্তীতে শেভরন গ্যাস ক্ষেত্রটিতে কম্প্রেসার স্থাপন করতে চাইলে পেট্রোবাংলা পূনঃবিনিয়োগের অনুমতি দেয়নি। বেশি মজুদ দেখিয়ে অতিরিক্ত গ্যাস তোলার ফলে দেশের সাগরবক্ষের একমাত্র গ্যাসক্ষেত্র সাঙ্গু পরিত্যক্ত হয়েছে। অনেক দিন ধরেই শেভরনের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিবিয়ানার ক্ষেত্রের পরিণতিও একই দিকে এগুচ্ছে বলে সতর্ক করা হচ্ছিল।
×