ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হুমায়ূন স্মরণে আবেগঘন দিন

তোমার করিয়া নিয়ো গো আমারে বরণের মালা পরায়ে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২০ জুলাই ২০১৭

তোমার করিয়া নিয়ো গো আমারে বরণের মালা পরায়ে

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে/নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে...। আহা, কী আকুতি হুমায়ূন আহমেদের! ভালবাসার মানুষ আর প্রিয় পৃথিবী তিনি ছাড়তে চাননি একদম। আঁকড়ে ধরে থাকতে চেয়েছিলেন। কোন শঙ্কা কি কাজ করছিল ভেতরে? বইয়ের পাঠক টেলিভিশনের দর্শক ভালবাসেন বটে। কতদিন? মনে একটা দ্বিধা হয়ত কাজ করত। এবং অতঃপর দেখা গেল দিব্যি আছেন হুমায়ূন। প্রয়াণের পঞ্চম বার্ষিকী ছিল বুধবার। বিশেষ দিবসে ক্ষণজন্মা লেখককে শ্রদ্ধা ভালবাসায় স্মরণ করেন ভক্তরা। সৃষ্টি সম্ভার থেকে তাঁকে খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করেন। নানা ভাব ও ভাষায় প্রকাশ করেন মুগ্ধতা। এই মুগ্ধতা, না, সহজে কাটার নয়। প্রতিবারের মতো এবারও প্রয়াণ দিবসে নতুন করে প্রাণ পেয়েছিলেন হুমায়ূন। বিপুলভাবে সামনে এসেছিলেন। এখন মানুষ নিজের মনের ভাব সবচেয়ে বেশি প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। কত শত বিষয় নিয়ে কথা বলেন ব্যবহারকারীরা! বুধবার অন্য সব বলা পেছনে পড়ে গিয়েছিল। বার বার ভেসে ওঠছিল হুমায়ূন আহমেদের মুখটি। তাঁর লেখা থেকে শেয়ার করা হচ্ছিল। চলছিল স্মৃতিচারণ। লেখকের বিভিন্ন উপন্যাসের আকর্ষণীয় চরিত্রগুলোর মাঝে নিজেকে খুঁজছিলেন পাঠক। হিমু, মিসির আলী, ও শুভ্রকে আবারও পাঠ করছিলেন। লেখকের ব্যক্তি জীবন ও দর্শন নিয়ে যে মুগ্ধতা, প্রকাশিত হয়েছে। এভাবে পুরোটা দিন। দেখে অনুমান করা গেছে, ভক্তদের হৃদয়ে যে দোলা দিয়ে গিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ সেটি এখনও একই রকম ক্রিয়া করছে। বিপরীত চিন্তা কারও মাথায় নেই- এমন কথা বলা যাবে না। সেটি মাথায় নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তার বলাটি হুমায়ূন ভক্তদের আবেগকে আরও গাঢ় করবে। তিনি লিখেছেনÑ একজন লেখকের লেখা সবারই ভাল লাগতে হবে এমন কোনো কথা নাই। সেটা নিয়ে ভালো-মন্দ আলোচনা সব সময়ই চলতে পারে। সেই আলোচনা একেক কালে একেক রংও ধারণ করতে পারে। কিন্তু ‘হুমায়ূন আহমেদ ইতিহাসে টিকবে না’ বলে যারা রায় দিয়েছিলেন তাদেরকে বোধ হয় এই রায়ের বাস্তবায়ন দেখতে ম্যালা দিন অপেক্ষা করতে হবে, এবং আদৌ সেই রায় কোনোদিন বাস্তবায়ন হবে কিনা সেই প্রশ্ন তো থাকছেই। হুমায়ূন আহমেদকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক ফেনোমেনা বলেও উল্লেখ করেন তিনি। দিনের শুরুটা হয় গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে। ওখানে যে সবুজ, সেই সবুজে মিশে আছেন হুমায়ূন আহমেদ। সেখান থেকে জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার জানান, হুমায়ূন আহমেদের সমাধিতে ফুল দিয়ে ভালবাসার কথা জানাতে সেখানে ভিড় করেছিলেন ভক্ত অনুরাগীরা। দুই শিশু সন্তান নিষাদ ও নিনিত মা মেহের আফরোজ শাওনের হাত ধরে সেখানে যায়। ছিলেন হুমায়ূনের ছোট বোন সুফিয়া হায়দারও। সঙ্গত কারণেই আবেগঘন হয়ে ওঠেছিল পরিবেশ। এ সময় মেহের আফরোজ শাওন বলেন, নুহাশপল্লী হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে প্রিয় স্থান। সবুজ বৃক্ষের ছায়ায় তিনি শুয়ে আছেন। যেভাবে তিনি চাইতেন সেভাবেই সাজানো গোছানো রয়েছে নুহাশপল্লী। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদকে কেড়ে নিয়েছে ক্যানসার। অসুস্থ অবস্থায় তিনি একটি ক্যানসার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু এই স্বপ্ন আমার একার পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এছাড়াও নুহাশপল্লীতে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার কথা জানান শাওন। লেখকের বোনও জানান, ঢাকায় ভাইয়ের নামে একটি জাদুঘর করবেন তারা। একই দিন গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহে ৫শ বনজ, ফলদ ও ঔষুধী গাছের চারা রোপণ করা হয়। নুহাশপল্লীর শোক বইতে ভক্ত-দর্শনাথীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ চলছে। আগামী তিন দিন এ কর্মসূচী চলবে। লেখকের শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত নেত্রকোনায়ও নানা কর্মসূচী পালন করা হয়। নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বুধবার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে নানা আয়োজনে স্মরণ করা হয় প্রয়াত লেখককে। বিভিন্ন সময় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শোকর‌্যালি, আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আয়োজন করা হয় একটি চক্ষু শিবিরের। এ সময় হুমায়ূন আহমেদের চাচা আলতাবুর রহমান আহমেদ ও শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া কেন্দুয়া উপজেলা সদরে হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি সংসদ ও চর্চা সাহিত্য আড্ডার যৌথ উদ্যোগে দুপুরে শোকর‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ফরিদপুর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জননন্দিত কথাসাহিত্যিক ঔপন্যাসিক টিভি নাট্যব্যক্তিত্ব হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার সকালে ফরিদপুরে সাহিত্য পত্রিকা ‘উঠোন’র আয়োজনে স্মরণসভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাইট ট্র্যাক স্কুলে উঠোনের উপদেষ্টা শামীম-আরা বেগমের সভাপতিত্বে আলোচনা করেন শিক্ষাবিদ হুমায়ূন অনুরক্ত প্রফেসর হাসিনা বানু, হুমায়ূন আহমেদের বন্ধু সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রফেসর আলতাফ হোসেন, উঠোনের সম্পাদক ম-লীর সদস্য মৃধা রেজাউল, শর্টফ্লিম মেকার জ্যোর্তিময় করিম এবং উঠোন সম্পাদক মফিজ ইমাম মিলন। অনুষ্ঠানে হুমায়ূনকে নিবেদিত কবিতা পাঠ করেন আব্দুর রাজ্জাক রাজা। স্মরণসভা শেষে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
×