ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ রংপুর সিটি নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২০ জুলাই ২০১৭

ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ রংপুর সিটি নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এখনও এ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা না হলেও ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের পরে যে কোনদিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। বুধবার কমিশনের এক সভায় রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সংক্রান্ত এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রংপুর সিটিতে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তাও রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ইসি সচিব। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে মেয়র পদে জয়লাভ করে দায়িত্ব পালন করছেন শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও মেয়র শপথ নেন ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। আর প্রথম সভা হয় ওই বছর ১৭ ফেব্রুয়ারি। সিটি কর্পোরেশন আইন অনুযায়ী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রথম সভার পরবর্তী ৫ বছরের মেয়াদ শেষের ১৮০ দিন বা ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসেবে আগামী ২০ অক্টোবর হতে ২০১৮ সালের ১৮ মার্চের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে রংপুরে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, কমিশন সভায় নির্বাচন ও ভোটারসহ প্রস্তুতিমূলক সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ভোটের তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের পরে যেকোন দিন নির্বাচন হবে। সাধারণত যে কোন নির্বাচনে ভোটের দিনের ৪৫ দিন আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তিনি বলেন, কমিশন রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্কুল-কলেজগুলোর বার্ষিক পরীক্ষার পর ভোটগ্রহণ করা হবে। আর ৪৫ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। ২০১২ সালে রংপুর সিটিতে নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হলেও এবার দলীয় ভিত্তিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। ইসির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাই দলীয় ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের সুযোগ পাবেন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, রাজনৈতিক দলের বাইরেও যে কেউ ইচ্ছা করলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন। তবে সিটি নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তিনশ’ ভোটারের সমর্থনযুক্ত স্বাক্ষর লাগবে। আর দলীয় প্রার্থী হলে দলের প্রধানের বা অনুমিত যে কোন ব্যক্তির প্রত্যয়নপত্র থাকতে হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, রংপুর সিটি কর্পোরেশনে বর্তমানে ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯ এবং নারী ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৬২ জন। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ১৯৬টি, ভোটকক্ষ ১ হাজার ১৭৭টি। পাঁচ বছর আগে প্রথম ভোটের সময় এ সিটির ভোটার ছিল ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এক বা একাধিক ওয়ার্ডে ডিজিটাল ভোটিং মেশিন পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা যায় কি না, সে বিষয়ে ইসির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সম্ভব হলে দু-তিনটি ওয়ার্ডে ভোটিং মেশিন ব্যবহার করা হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান ২০১২ সালে এ সিটিতে প্রথমবারের মতো নির্বাচনেও চারটি কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হয়েছিল। ওই নির্বাচনে রংপুর সিটির ১৮২টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের চারটি কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করে ভোট গ্রহণ করা হয়। এর আগে দেশে প্রথমবারের মতো দেশের ভোটারদের সঙ্গে ইভিএমের প্রথম পরিচয় ঘটে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। এরপর কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে প্রথমবারের নির্বাচনে সবক’টি কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হয়। রকীব কমিশনের সময় দেশের প্রধান চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সীমিত আকারের ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। পরে জটিলতার কারণে নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার বাদ দেয়া হয়। বর্তমান ইসি ক্ষমতা নেয়ার পর আবারও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি আলোচনায় আসে। বিএনপির পক্ষ থেকে এই ভোটিং মেশিন ব্যবহারে ইসির উদ্যোগের সমালোচনা করা হয়। আগামী নির্বাচনে যে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে ইভিএম মেশিন ব্যবহারের বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। তবে সাংবাদিকদের সিইসি বলেন, ইসির সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করবে ইসি। এজন্য সময়ের প্রয়োজন হলেও ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা সমস্যা হবে না ইসির পক্ষে। তবে ইসি কর্মকর্তারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ভাবনা থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে ইতোমধ্যে সেই উদ্যোগ থেকে সরে এসেছে ইসি। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোয় তা ব্যবহারের উদ্যোগ তাদের রয়েছে। সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের সংলাপের সময়সূচী আমরা ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত করব। এছাড়া ৩১ জুলাইয়ে সুশীল সমাজের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকটি বিকেল ৩টার পরিবর্তে ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষিত রোডম্যাপ রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন না পেলে তা বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জ হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই কর্মপরিকল্পনা নির্বাচন কমিশনের। ইসি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা পাব। কমিশন বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা।
×