ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিল

শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে ১০ শতাংশ কাটা হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২০ জুলাই ২০১৭

শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে ১০ শতাংশ কাটা হচ্ছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশের শিক্ষকদের তীব্র আন্দোলনের মুখে বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের তহবিলে ৬ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ কর্তনের প্রজ্ঞাপন আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদিকে বুধবারও সরকার সমর্থক একাধিক শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিতর্কিত ওই প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় ক্লাস বর্জনসহ আরও কঠোর কর্মসূচী পালন করার হুমকি দিয়েছে বৃহত্তর শিক্ষক সংগঠনগুলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষকদের ওপর বড় ধরনের একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে শিক্ষক সংগঠনগুলোর মতামত নেয়া উচিত ছিল। শিক্ষামন্ত্রীকেও যথাযথভাবে অবহিত করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। এর ফলে শিক্ষকরা আন্দোলনে নামে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এজন্য ওই সিদ্ধান্ত (বেতনের ১০ শতাংশ কর্তন) স্থগিত রাখা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের সবচেয়ে পুরনো শিক্ষক সংগঠন ‘জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টে’র অন্যতম সমন্বয়কারী ও কারিগরি কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের পরিষ্কার দাবি- বিতর্কিত ওই প্রজ্ঞাপন স্থগিত নয়, পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ ওই প্রজ্ঞাপন পাঁচ লাখ শিক্ষকের স্বার্থবিরোধী। এর মাধ্যমে শিক্ষকদের কৌশলে সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামানো হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতনের ১০ শতাংশ কর্তনে গত ১৫ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সারাদেশের প্রায় লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর স্বার্থবিরোধী এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে অবসর কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর বোর্ডের পক্ষ থেকে বৃহৎ শিক্ষক সংগঠনগুলোর কোন মতামত নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন বাতিল না করলে ক্লাস বর্জন আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ১০ শতাংশ বেতন কর্তনের প্রজ্ঞাপন (গেজেট) বাতিল না করলে শিক্ষকগণ ক্লাস বর্জনসহ অন্যান্য কঠোর কর্মসূচী দেয়ার হুমকি দিয়েছে ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’র নেতারা। শিক্ষক সমিতির মহাসচিব ইয়াদ আলী খান গতকাল এক বিবৃতিতে বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের তহবিলে ৬ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ কর্তন করার সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে যদি ১০ শতাংশ কর্তনের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা না হয় তবে বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীগণ ক্লাস বর্জনসহ অন্যান্য কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবে। বিবৃতিতে আরও বলেন, সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীগণ প্রতিবছর তাদের বেতনের ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও বৈশাখী ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু বেসরকারী শিক্ষকগণকে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও বৈশাখী ভাতা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই মাস শেষ হতে যাচ্ছে, কিন্তু আজও সরকার বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এখনও জুন মাসের বেতন ভাতা প্রদান করেনি। অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিবদের পদত্যাগ দাবি অবসর-কল্যাণের বর্ধিত চাঁদার গেজেট প্রত্যাহার ও দুই সদস্য সচিবের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন ‘মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ কমিটি’র নেতারা। তারা এ দাবিতে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। নেতারা বলেন, অবসর ও কল্যাণের বর্ধিত চাঁদার গেজেট ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে বাতিল না হলে ওইদিন সকল জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করা হবে। লিয়াজোঁ কমিটির ধর্মঘট কর্মসূচীতে কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব প্রীপ কুমার সাহা বলেন, সরকার মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষা জাতীয়করণের উদ্যোগ না নিয়ে বেতন কমিয়ে ফেলার গেজেট জারি করেছে। এতে সারা দেশের শিক্ষক-কর্মচারীদের চরম হতাশায় নিমজ্জিত করেছে। কমিটির সভাপতি ড. ইদ্রিস আলীর সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির একাংশের মহাসচিব জসিম উদ্দিন আহমেদ, কমিটির প্রধান উপদেষ্টা এসএম আব্দুল জলিল, ঢাকার উত্তরার কাচকুরা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন খান, যুগ্ম আহবায়ক নূরুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, শেখ মোহাম্মদ আলী, হাফিজুর রহমান, আরজান আলী প্রমুখ।
×