ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানে বখরা, প্রতিবাদ করলে ছাঁটাইয়ের হুমকি

যমেক কর্মচারীরা ফতুর

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২০ জুলাই ২০১৭

যমেক কর্মচারীরা ফতুর

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোর মেডিক্যাল কলেজে (যমেক) আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগকৃত কর্মীদের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত সার্ভিস চার্জ ছাড়াও সুপারভাইজারের মাধ্যমে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রতিবাদ করলে ছাঁটাইয়ের হুমকি দেয়া হয়। ফলে কর্মীদের মাঝে প্রচ- ক্ষোভ থাকলেও প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। যেহেতু জনবল সরবরাহ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেকারণে এ বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর (এমএলএসএস, আয়া, পিয়ন, কুক, মশালচি, ক্লাম্বার, গার্ড, টেবিল বয় ইত্যাদি পদে) ৬৫ জন কর্মচারী দীর্ঘ ৫ বছর ধরে চাকরি করলেও স্থায়িত্ব নেই। আর চাকরি যাতে বহাল থাকে, সেকারণে প্রতি মাসে তাদের বাধ্যতামূলক গুনতে হয় নগদ ৫ হাজার করে টাকা। জানা গেছে, আউটসোর্সিং টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঊষা এসসি লিমিটেড যমেকে জনবল সরবরাহ করে। সরকার সার্ভিস চার্জ বাবদ ১৫ শতাংশ টাকা দিলেও এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজাররা কর্মচারীদের কাছ থেকে জোর করেই টাকা আদায় করে থাকে। কর্মচারীরা জানান, ২০১২-১৩ অর্থবছরে টেন্ডারের মাধ্যমে গালফ নামে একটি প্রতিষ্ঠান জনবল সরবরাহের কাজ পায়। সেইসময় ৪৫ জন কর্মীকে নিয়োগ দেয়া হয়। এরা প্রত্যেকে রাজস্ব খাত থেকে বেতন পান। পরবর্তীতে আরও দু’দফায় ২০ জন কর্মচারী নিয়োগ হয়। তাদের বেতন দেয়া হয় উন্নয়ন খাত থেকে। গালফ কাজ করে দু’বছর। পরবর্তীতে ঊষা এসসি লিমিটেড টেন্ডার বিট করে জনবল সরবরাহের কাজ পায়। এখনও তারাই কাজ করছে। এমএলএসএস পদের কর্মচারী ইসমাইল হোসেন বলেন, শুরু থেকেই আমি এখানে কর্মরত। প্রতি দুই বা তিন মাস অন্তর বেতন পাই। চাকরি যাতে না যায়, সেই ভয়ে প্রতি মাসে ৫ হাজার করে টাকা দিয়ে আসছি। অফিস সহায়ক শান্তা জানান, ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা বেতন হলেও মাস শেষে আমাদের থাকে ৯ হাজার ৪৫০ টাকা। টাকা না দিলে পরের বছর চাকরি রিনিউ করা হবে না বলে হুমকি-ধমকি দেন সুপারভাইজার। সেকারণে বাধ্য হয়েই টাকা দিতে হচ্ছে। আউটসোর্সিং ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোঃ খায়রুল হাসান বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঊষা এসসি লিমিটেড কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ বাবদ ১৫ শতাংশ হারে সরকারের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। কিন্তু তারপরও সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে কর্মী প্রতি মাসে ৫ হাজার করে টাকা নিয়ে থাকে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, যারা কাজ করছেন, তাদের প্রায় সবাই দরিদ্র ঘরের সন্তান। প্রায় ৫ বছর ধরে তারা এখানে কর্মরত। এবং এই সময় ধরে তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কেননা বলা হয়েছে- টাকা না দিলে পরবর্তীতে তাদের আর চাকরি থাকবে না। আর যারা চাকরি করছেন, তাদের অনেকেরই সরকারী চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। ঊষার নিয়োগকৃত সুপারভাইজার কোরবান আলী বলেন, প্রথম দফায় যে ৪৫ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়, আমিও তাদের একজন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩ বছর পর আমাকে কর্মচারীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করতে সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব দেয়। সে অনুযায়ী আমি কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে জনপ্রতি ৫ হাজার করে টাকা তুলে প্রতিষ্ঠানকে দিতাম। সম্প্রতি আমার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ফয়সল ইসলাম নামে আরেকজন। জানতে চাইলে সুপারভাইজার ফয়সল ইসলাম বলেন, আমি কেন সুপারভাইজার হতে যাব, হলে মালিকের পার্টনার হবো। আমার ছোটভাই মুন্না সেখানে কাজ করে। ঈদের আগে তাদের বেতন বকেয়া পড়েছিল, সবাই যাতে দ্রুত টাকাটা পেতে পারে সেলক্ষ্যে আমি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বেতন পাইয়ে দিয়েছি। যশোর মেডিক্যাল কলেজের এ্যাকাউনটেন্ট জয়নাল আবেদীন বলেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বিল করে মাসিক বেতনের চেক নিয়ে যান। আমরা কর্মচারীদের চেকের ফটোকপি গ্রহণ করি যে তারা নিয়মিত বেতন পাচ্ছে কি না। দুই মাস বা তিন মাস বেতন ডিউ আছে- এমন ঘটনা এখানে ঘটেনি। তিনি বলেন, ফয়সল ইসলামকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঊষা ৬৫ কর্মচারীকে নিয়ন্ত্রণে সার্বিক ক্ষমতা দিয়ে একটি পত্র দিয়েছে। অর্থাৎ তিনিই ওই প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার। ঊষা এসসি লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ফিরোজ সাহেবের সেলফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি। জানতে চাইলে যশোর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ এএইচএম মাহবুব উল মওলা চৌধুরী বলেন, টেন্ডারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার জনবল সরবরাহ করে থাকেন। এখানে কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ দেয়। তাদের বেতন এ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। তিনি জানান, বেতন মূলত কর্মচারীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের চুক্তির ব্যাপার। এখানে বেতন বিষয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কোন সম্পর্ক নেই।
×