ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জননীর যন্ত্রণা!

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২০ জুলাই ২০১৭

জননীর যন্ত্রণা!

দেশের প্রথম শ্রেণীর একটি পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার পুটিজানা ইউনিয়নের মরিয়ম নামের ৮৬ বছরের এক বৃদ্ধ মাকে রাতে গোয়ালে রাখার কারণে শিয়ালে কামড়ায়। এটা তো গেল ময়মনসিংহের কথা। সারাদেশজুড়েই রয়েছে এমন হাজারও অপ্রকাশিত লজ্জাজনক ঘটনা। যে লজ্জার ভার জাতি কখনও সহ্য করতে পারবে না। সন্তান মানুষ করার জন্য একজন পিতা তার নিজের যৌবনের সবটুকু দিয়ে সাধ্যের বাহিরে গিয়েও বাস্তবতার সঙ্গে সংগ্রাম করে থাকেন। নিজে না খেয়ে না পরে সন্তানের সকল চাহিদা পূরণ করার চেষ্টায় পরিশ্রম করেন। সন্তানের পরীক্ষার ফি দেয়ার তাগিদে মা-বাবার অনেকেই তাদের শরীরের রক্ত পর্যন্ত বিক্রি করছেন। পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে নিজের সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন অনেক মা। দশ মাস দশ দিন গর্বে ধারণ করে একজন মা শত কষ্ট সহ্য করে সন্তানকে জন্ম দিয়ে থাকেন। সন্তান জন্ম দেয়ার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অনেক মা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। প্রসব বেদনা এতটাই কঠিন যে সন্তান জন্ম দেয়ার সময় যে জননীর মৃত্যু হয় ইসলাম ধর্ম তাকে শাহাদাতের মর্যদা দিয়েছে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মায়ের পরিশ্রম যেন আরও বেড়ে যায়। রাতভর সন্তানকে দুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে সারাক্ষণ তাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। একটা কিছু হলেই কলিজার টুকরাকে নিয়ে বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। এভাবে নিজেদের সুখ-শান্তি সব বিসর্জন দিয়ে মা-বাবারা নিজেদের সন্তানকে বড় করে তোলেন। আর সেই সন্তানরাই অকৃজ্ঞতার পরিচয় দেয়। মা-বাবা যখন সংসারের ঘানি টানতে টানতে বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েন ঠিক তখনই কিছু অকৃতজ্ঞ কুলাঙ্গার সন্তানেরা তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। যতদিন পর্যন্ত বাবা-মা দিতে পারে ততদিন পর্যন্তই ওই সমস্ত কুলাঙ্গার সন্তানদের কাছে মা-বাবাকে ভাললাগে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে বাবা-মাকে তিনবেলা তিন মুঠো ভাত দেয়ারও কেও থাকে না। অর্ধহারে অনাহারেই কাটাতে হয় অনেক বৃদ্ধ বাবা-মাদের। আবার কিছু কুলাঙ্গাররা বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। হায়রে সন্তান! হায়রে তার শিক্ষা! যারা জন্ম না দিলে পৃথিবীর আলো বাতাসের মুখ অবধি দেখা হতো না, রক্তমাংস এক করে যে সন্তানদের বড় করে তুলল তাদের সঙ্গেই এমন আচরণ! শিশু বয়সে সন্তান যখন বার বার প্রশ্ন করত মা-ওমা, মাগো এটা কী? হাজার বার এক কথার উত্তর দিতে হতো মাকে। সেই মার সঙ্গে বুড়ো বয়সে কথা বলার কেউ নেই এমনকি তাকে থাকতে হচ্ছে গরুর গোয়ালে। এই সন্তানরা কোন্ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এমনটি করছে তা কোন সভ্য মানুষের বোধগম্য হয় কি? শ্রীপুর, গাজীপুর থেকে
×