ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তুফফাহুল জান্নাত মারিয়া

গোধূলিবেলার গল্প

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২০ জুলাই ২০১৭

গোধূলিবেলার গল্প

সেদিন চাঁপা গাছের নিচে বসেছিলাম। পেছন থেকে হঠাৎ একজন বলে উঠল, ‘কি ব্যাপার এখানে একা একা বসে পিঁপড়া গুনছো’? কথা শুনে রাগে আমার গা জ্বলে গেল। প্রথম সাক্ষাতে কেউ কখনও এভাবে কথা বলে? ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম, বেয়াদবটা আমাদের ক্লাসেই পড়ে। ক্যাম্পাসে প্রথম পরিচয় এভাবেই হয়েছিল। ডায়েরির একটা পাতার লেখা পড়ে চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে আমার। ইচ্ছে ছিল পুরোটা পড়ব। সালটা দেখে চমকে গেলাম। পঞ্চান্ন বছর আগের সেই লেখা। ডায়েরির মলাট পোকায় খেয়ে ফেলেছে, বেশ কয়েকটা পাতা ছেঁড়া, সেগুলো ভাঁজ করে রাখা হয়েছে, মলিন লেখা। কিছু কিছু লেখা পড়তে কষ্ট হচ্ছে, বেশ অস্পষ্ট। কী অদ্ভুত! ইদানীং আমার সেই আগের রোগে ধরেছে, একদম ঘুম পায় না। বিছানায় শুয়ে ছটফট করি, এত বিশাল বিছানা অথচ এক কোনে চুপটি করে শুয়ে থাকি। একদিন শ্বশুর বাড়ি এলামও, তবে আমার চেয়ে সে বেশি গোছালো, তাই ভাবতে হয়নি। মাঝে মাঝে শুধু ভেংচি কেটে বলত, ‘থাক তোমার গোছাতে হবে না, তুমি বরং পিঁপড়া গুণতে থাক।’ বিশাল খাটের এক কোনায় পড়ে থাকা বুড়ির খোঁজ নেওয়ার সময় হয় না আমার দুই ছেলের, দুজনই আমেরিকায়। কখনও কখনও আসে মন চাইলে। নাতনী দুটোকে কাছে পেতে ভীষণ ইচ্ছে করে। আজ বিকেলে একটু বের হব ভাবছি। কিন্তু একা একা বের হতেও পারব না। হাড়ের গিঁটে গিঁটে ব্যথা, চোখে কম দেখি,আস্তে আস্তে হাঁটতে হয়। আমি কি কখনও ভেবেছিলাম আমার জীবনেও বার্ধক্য আসবে? কাজের মেয়েটাকে অনুনয় বিনয় করে আমার সাথে নিয়ে এসেছি, বুঝতে পারছি মেয়েটার ভীষণ বিরক্ত লাগছে। কি আর করার, এখানে না এলে যে আমার দম বন্ধ লাগে। আমি ঘোমটা দিয়ে মানুষটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। একদিন লাল শাড়ির ঘোমটা ছিল, আজ ঘোমটার রং বদলেছে। আমার মানুষটাকে অনেক প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে, জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছেÑ আবার সেই চাঁপা গাছতলার নিচে যাবে? জানি কোন উত্তর আসবে না। আমার কাঁপা হাত দিয়ে ওকে ছুঁয়ে দেই, সাড়ে তিন হাত কি খুব বেশি দূরত্ব? কঠিন মাটি ছুঁয়ে দিলে সে স্পর্শ পৌঁছুবে না? আমার কুঁচকানো হাত দিয়ে নীরবে চোখের জল মুছে ফেলি। হঠাৎ আমার কাঁধে কে যেন হাত রাখে। মৃৃদু গলায় বলে, আর কাঁদবেন না চাচী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×