ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিষয় ॥ সঙ্গীহীন সায়াহ্ন ॥ সমাজ ভাবনা

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২০ জুলাই ২০১৭

বিষয় ॥ সঙ্গীহীন সায়াহ্ন ॥ সমাজ ভাবনা

দীর্ঘ অর্ধ শতক জীবন সঙ্গী নিয়ে কাটিয়ে, প্রকৃতির নিয়মে আজ আমি সঙ্গীহীন সায়াহ্নে। ‘সঙ্গীহীন সায়াহ্ন’Ñ কথাটা যতোটা সহজে কলমের কালির মাধ্যমে সাদা কাগজের পাতায় আলপনা করা যায়, ততোটা সহজে মেনে নেওয়া যায় না। তবু সৃষ্টিকর্তার বিচারের রায় মেনে নিতে বাধ্য আমরা, তাই আজ আমি সঙ্গীহীন। যে মানুষটা আমার কাছে চির অচেনা, যাকে কখনোই দেখিনি, তারই হাত ধরে উঠোন পেরিয়ে চার পা বাড়ালাম। প্রিয়জনের প্রতি অভিমান, আর অজানা এই পৃথিবীকে জানার উদ্দেশ্যে শুরু হলো হাতে হাত রেখে পথ চলা। আমার এই অচিন ভুবনে যখন পুরো পৃথিবী আমার প্রতিকূলে তখন একমাত্র তিন কবুলে আবদ্ধ সঙ্গীটিই অনুকূলে এসে দাঁড়ায়। আস্তে আস্তে গোটা বিশ্ব আমার হয়ে যায়। যখন হারানো ছেলেবেলা খুঁজে কান্নার সাগরে ভাসি, তখন এই চির সঙ্গী আমার নামের আগে মিসেস বলে ডেকে পকেটের রুমালে মুছে নিল দু-ফোঁটা বৃষ্টি। তৈরী করল রচনা, বললÑ ভালোবাসি। শুরু হয়ে গেল সংসার নামের পুতুল খেলার অনুশীলন। দুইজন দুইজনের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হলাম। ভাগ করে নিলাম আনন্দ দুঃখ। সাজাতে লাগলাম চার হাতে ইটের দেয়াল। আসলো নতুন অতিথি। শুরু হয়ে গেল দুই সঙ্গীর যুদ্ধ। নিজেদের সবটুকু দিয়ে যুদ্ধে জয়ী হতে লাগলাম, শত বিপরীত হামলা আসলো। তবু দুজনের পথ চলা থামল না, লড়ে গেলাম। লড়তে লড়তে সময় গত হলো। প্রকৃতির নিয়মে আজ আমি সঙ্গীহীন হয়ে গেলাম। এখন আর উঠোন পেরিয়ে চার পা চলে না, দেওয়া হয় না সুখ দুঃখের ভাগ। বলে না কেউ ভালোবাসি। অথচ সেই জীবনপথ রয়ে গেল। হারিয়েছি সঙ্গীকে, হারিয়েছি কর্মক্ষমতা, ধীরে ধীরে হারাচ্ছি একা চলার জোর। স্বজনের কাছে আছি, পরগাছার মতো। নিড়ানিতে উপড়ে ফেলতে পারলেই পরিষ্কার। নেই কোনো মতামতের জায়গা। শুধুই অবহেলা। সবাই ব্যস্ত, শুধু আমিই একাকীত্বের প্রহর গুনি। যে বৃক্ষ নিজে বিগলিত হয়ে দিয়েছে ছায়াময় আশ্রয়। বিনিময়ে পেয়েছে ডাল ভাঙার নিয়তি আর অমর্যাদা। তবে হ্যাঁ এই অবহেলার দায় শুধু স্বজনের নয়, কিছুটা সমাজও দায়ী। সমাজ তার মূল্যায়ন করতে গিয়ে তৈরি করছে শত বৃদ্ধাশ্রমের অভিশপ্ত কুটির। পরিশেষে এটাই বলবো, প্রকৃতির নিয়মে আমাদের অনেককেই এই সঙ্গীহীন সায়াহ্ন কাটাতে হবে। তাই সবার উচিত এইসব সঙ্গীহীনদের সঙ্গ দেয়া। মিঠাপুকুর, রংপুর থেকে
×