ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অপহরণ নাটকের জন্য ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থার চিন্তা

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ১৯ জুলাই ২০১৭

অপহরণ নাটকের জন্য ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থার চিন্তা

শংকর কুমার দে ॥ কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার আদালতে যে জবানবন্দী দিয়েছেন এবং তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে গরমিল পেয়েছে তদন্তকারী পুলিশ। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) ডেকে এনে প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাকে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে- তার আদালতে দেয়া অপহরণের জবানবন্দীর সঙ্গে তার ভক্ত অর্চনা রানীর দেয়া জবানবন্দী, অপহরণের ঘটনার পর স্ত্রী ফরিদা আখতারের সঙ্গে মোবাইলে কথোপকথন, অডিও, ভিডিও, সিসি টিভির ফুটেজের প্রাপ্ত তথ্য প্রসঙ্গে। ফরহাদ মজহার গরমিল তথ্য দিয়ে অপহরণের নাটক সাজিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হয়রানি করার কারণে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে পুলিশের দাবি। তদন্তকারী পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান ফরহাদ মজহার। অপহরণের ঘটনাটি সাজানো নাটক হয়েছে বলে তদন্তে প্রতীয়মান হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে। জানা গেছে, ফরহাদ মজহার অপহরণের ঘটনা নিয়ে তার নিজের দেয়া জবানবন্দীতে অপহরণের যে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তাকে ডেকে আনা হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) কার্যালয়ে। রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুর সোয়া একটার দিকে সেখান থেকে বের হয়ে আসেন তিনি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরহাদ মজহারকে রাজধানীর শ্যামলীর হক গার্ডেনের বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে। মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয় থেকে বের হয়ে ফরহাদ মজহারকে একটি প্রাইভেটকারে উঠে চলে যেতে দেখা যায়। তার সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী ফরিদা আখতারও। ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার বলেছেন, তদন্তের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি পুলিশ আমাদের তাদের কার্যালয়ে যেতে বলেছিল। আমি ও ফরহাদ মজহার বেলা ১১টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে ঢুকি। তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলে নানা বিষয়ে জানতে চান। আমরা যা জানি তাদের তা বলেছি। পরে দুপুর একটার দিকে আমরা ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসি। তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ফরহাদ মজহারের বক্তব্য ও তদন্তে পাওয়া তথ্যের মধ্যে গরমিল থাকায় বিষয়গুলো স্পষ্ট করার জন্য তাকে ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় কথোপকথনের রেকর্ড, খুলনায় নিউমার্কেটের সিসি টিভির ফুটেজ ও অর্চনাকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানো- এসব বিষয়ে গোয়েন্দারা তাকে প্রশ্ন করেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের প্রশ্নগুলো শুনে ফরহাদ মজহারের মুখম-ল মলিন হয়ে যায়, ভ্যাবচ্যাকা খেয়ে যান তিনি। তবে ফরহাদ মজহার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে অডিও, ভিডিও, মোবাইলে কথোপকথন সম্পর্কে বলেন, আপনারা কোথা থেকে পেয়েছেন আমি জানি না। আপনাদের তদন্ত আপনারা করেন, আমি যা বলব আদালতে গিয়ে বলব। তদন্তকারী একজন কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বলেন, ফরহাদ মজহার একজন সেয়ানা মাল। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম-কমিশনার আব্দুল বাতেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তিনি (ফরহাদ মজহার) আদালতে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তার সঙ্গে আমাদের তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের মিল না থাকায় তাকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি যদি সত্যিকারার্থে অপহৃত হয়ে থাকেন, তাহলে একমাত্র সাক্ষী তিনি নিজেই এবং যারা অপহরণ করেছে তারা। এ পর্যন্ত তদন্তে আমাদের মনে হয়েছে, তিনি অপহৃত হননি। এ অবস্থায় পুলিশের করণীয় প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কেউ মিথ্যা তথ্য দিলে আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেয়ার পর প্রায় আড়াই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুর সোয়া ১টার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
×