ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অরেলির দৃষ্টি সুদূরপ্রসারী

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৯ জুলাই ২০১৭

অরেলির দৃষ্টি সুদূরপ্রসারী

ভুলটা ছিল অখেলোয়াড়সুলভ। দারুণ লড়েছিলেন, কিন্তু শেষ সীমারেখা ছোঁয়ার আগে প্রতিপক্ষের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে তাকে পেছনে ধাক্কা দিয়ে সমাপ্ত করেন অরেলি মুলার। উন্মুক্ত জলের ১০ কিলোমিটার ম্যারাথন সুইমিংয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। কিন্তু বিচারকদের চোখ এড়ায়নি এ প্রযুক্তির যুগে এত বড় অপরাধ। সে কারণে ফরাসী এ দূরপাল্লার ফ্রিস্টাইল সাঁতারুকে ডিসকোয়ালিফাইড করে রিও অলিম্পিক কর্তৃপক্ষ। আর কোন পদকই জেতা হয়নি। অথচ স্বাভাবিকভাবে শেষ করলেও অন্তত তৃতীয় হতে পারতেন এবং জিতে যেতেন ন্যূনতম ব্রোঞ্জ। ২৭ বছর বয়সী অরেলিকে দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে অলিম্পিক ভিলেজ ত্যাগ করে দেশে ফিরতে হয়েছিল। সমাপনী অনুষ্ঠানেও থাকেননি। এখন সেই ব্যথাটাই বুকে শেল হয়ে বিঁধছে তার। বিশেষ করে ফিনা বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপসের একই ইভেন্টে স্বর্ণপদক জেতার পর কষ্টটা আবার ফিরে এসেছে। কিন্তু হতাশা ভুলে গেছেন এমন জয়ে। নতুন করে আশাবাদী ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন অরেলি। জানিয়েছেন এখনও তার চলার পথ শেষ হয়নি। গত বছর রিও অলিম্পিকে বড় ধরনের দুঃখ পেয়েছিলেন। অন্যতম ফেবারিট থাকলেও ডিসকোয়ালিফাইড হওয়ার কারণে কোন পদকই জিততে পারেননি। তবে সেই দুঃখটা এবার ভুলেছেন ফরাসী দূরপাল্লার সাঁতারু অরেলি মুলার। ফিনা বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপসের ১০ কিলোমিটার ম্যারাথন সুইমিংয়ে স্বর্ণ জিতেছেন তিনি। আর রিও অলিম্পিকে চ্যাম্পিয়ন হল্যান্ডের শ্যারন ভ্যান রুয়েনডাল হতে পেরেছেন ১৬তম! রিও অলিম্পিকে অরেলিকে ডিসকোয়ালিফাইড ঘোষণার পর অনেক বিতর্ক হয়েছিল। কিন্তু সেসব বিতর্কে কোন লাভ হয়নি, কপর্দকহীন হয়েই মনোকষ্ট নিয়ে ব্রাজিল থেকে চলে এসেছিলেন অরেলি। দুঃখটা ভোলার জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে পুরো একটা বছর। এবার তিনি সেই দুঃখটা হাঙ্গেরির লেক ব্যালাটনে এসে ঘুচাতে সক্ষম হলেন। গত বিশ্ব সাঁতারেও স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। এবার সেটা ধরে রাখলেন। ২৭ বছর বয়সী অরেলি সময় নিয়েছেন ২ ঘণ্টা ১৩.৭০ সেকেন্ড। ১৭তম বিশ্ব আসরে তার মাধ্যমে দারুণ সূচনাই পেয়েছে ফ্রান্স। আগের দিন আরেক ফরাসী মার্ক-এ্যান্টোইন অলিভিয়ের পুরুষদের ৫ কিলোমিটার সাঁতারে স্বর্ণ জয় করেন। অরেলি এদিন অর্ধেক পথ পাড়ি দেন ১ ঘণ্টা ১.১৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে। তখনই বোঝা যাচ্ছিল জিততে চলেছেন তিনি। তবে তাঁকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হয় ইকুয়েডরের সামান্থা আরেভালোর কাছে। তিনি খুব কাছাকাছিই ছিলেন অরেলির। তিনি সময় নেন ২ ঘণ্টা ১৭ সেকেন্ড। এছাড়া ইতালির আরিয়ানা ব্রিডি ও ব্রাজিলের আনা কুনহা দারুণ লড়েছেন। তাদের অবশ্য রেস শেষে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে চূড়ান্ত ঘোষণার জন্য। কারণ কে ব্রোঞ্জ পাবেন সেটা বিচারকরাই নির্ধারণ করবেন। শেষ পর্যন্ত দু’জনকেই ব্রোঞ্জ দেয়া হয়েছে ফিনার পক্ষ থেকে। তারা দু’জনই শেষ করেছেন ২ ঘণ্টা ১৭.২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে। অরেলির দীর্ঘদিনের অনুশীলন সঙ্গী শ্যারন। তিনি রিও অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতেছিলেন। কিন্তু লেক ব্যালাটনে একেবারেই বাজে নৈপুণ্য দেখালেন এ অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন। তিনি ২ ঘণ্টা ১ মিনিট ৫৫.৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১৬তম অবস্থানে থেকে শেষ করেন। কাজানে দুই বছর আগে অনুষ্ঠিত বিশ্ব আসরে প্রথম উন্মুক্ত জলের সাঁতারে স্বর্ণ এনে দিয়েছিলেন ফ্রান্সকে। এবারও সেটা ধরে রেখেছেন অরেলি। রিও অলিম্পিকেও সেরা তিনে থেকে শেষ করেছিলেন। কিন্তু বিতর্কিত বিচারে তাকে ডিসকোয়ালিফাইড ঘোষণা করলে পোডিয়ামে আর ওঠা হয়নি। কোন পদকই পাননি অরেলি। এবার জয়ের পর অরেলি বলেন, ‘আমি অলিম্পিকের শেষ দিনের উদযাপন উপভোগ করতে পারিনি। আমি মর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়েছি। এখন আমি শান্তিতে ঘরে ফিরতে পারব। তাদের ধন্যবাদ যারা আমাকে সব সময় সাহস জুগিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়েছেন।’ মুলার এখন সমকক্ষ হয়ে গেছেন ব্রিটেনের কেরি এ্যান পেইনের। ২০০৯ ও ২০১১ সালে টানা দুই বিশ্ব আসরের ১০ কিলোমিটার ম্যারাথন সুইমিংয়ে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন তিনি। এবার মুলার সেই রেকর্ড স্পর্শ করলেন। এ কারণেই উচ্ছ্বাসটা একটু বেশিই তার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সত্যিই খুব খুশি রিওতে যা ঘটেছিল সেটার পর অনেক আবেগী হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু এখন নিজেকে নিয়ে আমি গর্বিত বোধ করছি। এই গল্পটাই এখন সুন্দর হয়ে গেছে।’ ২০১৫ সালে রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত বিশ্ব আসরে প্রথমবার সবার নজরে আসেন অরেলি। সেবার জয় করেন প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপস স্বর্ণপদক। এরও চার বছর আগে সাংহাইয়ে প্রথমবার ৫ কিলোমিটার উন্মুক্ত জলরাশির সুইমিংয়ে রৌপ্য জয়ে নিজের সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়েছিলেন। ২০১১ সালের সেই সাফল্যই তাকে ৪ বছর পর বিশ্ব সাঁতারের ম্যারাথনে সম্রাজ্ঞী করেছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিকে অংশ নিয়েও কিছু করতে পারেননি তিনি। সেটাই ছিল তার ক্যারিয়ারের প্রথম অলিম্পিক। সেবার হতে পেরেছিলেন ২১তম! ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের জন্য কোয়ালিফাইড হলেও শেষ পর্যন্ত লড়তে পারেননি। কারণ ৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইল জাতীয় ট্রায়ালে ‘এ’ স্ট্যান্ডার্ড পূরণ করতে পারেননি। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে অবশেষে এবার বিশ্ব আসরেও স্বর্ণপদক জয় করলেন। উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে চলা ক্যারিয়ারে আরও আছে ইউরোপিয়ান উন্মুক্ত জলরাশির ম্যারাথনে স্বর্ণপদক। গত বছরই সেটা জিতেছিলেন তিনি। সেই সাফল্য ধরে রাখলেন এবার। এ বিষয়ে অরেলি বলেন, ‘আমি অলিম্পিক পদক জিততে পারিনি। কিন্তু আমার মনে হয় এরচেয়ে অনেক বেশিই পেয়ে গেছি। আমি এই প্রতিযোগিতার কৌশলগত পদ্ধতি সম্পর্কে অনেক কিছুই শিখেছি, নিজের ও অন্যদের বিষয়ে জেনেছি। আমার চলার পথ শেষ হয়ে যায়নি এখনও।’
×