ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কলম্বোয় রেকর্ড গড়েই জিতল শ্রীলঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৯ জুলাই ২০১৭

কলম্বোয় রেকর্ড গড়েই জিতল শ্রীলঙ্কা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ হতে হতেও ইতিহাস গড়া হলো না জিম্বাবুইয়ের। বাগে পেয়েও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টজয়ের সুযোগ হাতছাড়া করল গ্রায়েম ক্রেমারের দল। মূলত শেষদিনের ফিল্ডিং আর বোলিং ব্যর্থতায় হতাশাই সঙ্গী হলো সফরকারীদের। ঘুরিয়ে দেখলে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান আসেলা গুনারতেœর অসাধারণ ব্যাটিংয়ে কলম্বো টেস্টটা রেকর্ড গড়ে জিতল দিনেশ চান্দিমালের দল। স্বাগতিকরা ৩৮৮ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে গেল ৪ উইকেট হাতে রেখে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে তো বটেই যা উপমহাদেশেও সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের নতুন রেকর্ড। সর্বোপরি টেস্ট ইতিহাসে পঞ্চম। জিম্বাবুইয়ে ৩৫৬/১০ ও ৩৭৭/১০, শ্রীলঙ্কা ৩৪৬/১০ ও ৩৯১/৬। প্রথম ইনিংসে ৪৫-এর পর দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৮০ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছেন গুনারতেœ। বিফলে গেছে সিকান্দার রাজার অসাধারণ সেঞ্চুরি (৩৬ ও ১২৭) আর জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক গ্রায়েম ক্রেমারের দুর্দান্ত বোলিং (৫/১২৫ ও ৪/১৫০)। শেষ পর্যন্ত ইতিহাস গড়তে না পারলেও পি সারা ওভালে স্মরণীয় এক টেস্টের জন্ম দিয়ে ক্রিকেটে পুনরুত্থানের ঘোষণা করল আফ্রিকান লিলিপুটরা। কুশল মেন্ডিস ও এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস শেষদিন সকালেই সাজঘরে ফেরেন। তবুও হাল ছাড়েনি শ্রীলঙ্কা। শুরুতে পথ দেখান নিরোশান ডিকভেলা। দিলরুয়ান পেরেরাকে নিয়ে বাকি কাজ সারেন গুনারতেœ। তাদের দারুণ ব্যাটিংয়ে দেশকে নিয়ে যান স্মরণীয় জয়ের পথে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৭৭ রানের লক্ষ্য তাড়ার রেকর্ড ছিল পাকিস্তানের। ২০১৫ সালে পালেকেল্লেতে সেই টেস্ট ৭ উইকেট জিতেছিল অতিথিরা। আর লঙ্কানরা সর্বোচ্চ ৩৫২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল দেশের মাটিতেই ২০০৬ সালে পি সারা ওভালে। চতুর্থ ইনিংসে সফল সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ডটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের দখলে (৪১৮/৭, এ্যান্টিগায় ২০০৭ সালে, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া)। আর এই ম্যাচের আগে উপমহাদেশীয় রেকর্ড ছিল ভারতের (৩৮৭/৪, চেন্নাইয়ে ২০০৮ সালে, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড)। জয়ের জন্য সোমবার শেষদিনে শ্রীলঙ্কার দরকার ছিল ২১৮ রান, জিম্বাবুইয়ের ৭ উইকেট। স্পিন সহায়ক উইকেটেও এই সমীকরণ মেলাতে পারেনি অতিথিরা। শেষদিনের এক সেশন হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা। ৩ উইকেটে ১৭০ রান নিয়ে খেলা শুরু করে স্বাগতিকরা। শুরুতেই মেন্ডিসকে (৬৬) ফিরিয়ে দেন ক্রেমার। সংগ্রহ দুই শ’ পার হতেই আবার আঘাত। ফিরতি ক্যাচ নিয়ে এবার অভিজ্ঞ ম্যাথুসকে (২৫) বিদায় করেন জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক। ২০৩ রানে প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বেশ চাপে পড়া শ্রীলঙ্কা প্রতিরোধ গড়ে ডিকভেলা-গুনারতেœর ব্যাটে। স্পিন আক্রমণ সামলে দুইজনে গড়েন ১২১ রানের দুর্দান্ত জুটি। অনেকবার একটুর জন্য ব্যাটের কানা নেয়নি বল, কখনও ক্যাচ পড়েছে ফিল্ডারের একটু সামনে। ভাগ্যকে পাশে পাওয়া দুই ব্যাটসম্যান কক্ষপথে ফেরান দলকে। ১১৮ বলে ৬টি চারে ডিকভেলার ৮১ রানের চমৎকার ইনিংস শেষ হয় অপ্রয়োজনীয় এক শটে। শন উইলিয়ামসকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে রেজিস চাকাভার গ্লাভসবন্দী হন তিনি। আট নম্বর ব্যাটসম্যান পেরেরার টেস্টে অর্ধশতক আছে চারটি। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে খেলেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে। প্রথম ইনিংসেও গুনারতেœর সঙ্গে গড়েছিলেন ভাল একটি জুটি। দলের প্রয়োজনের সময় যথারীতি দুইজনে আবার চীনের প্রাচীর। সেখানে হতাশায় শেষ হলো জিম্বাবুইয়ের সব প্রচেষ্টা। শেষদিকে প্রথমবারের মতো পেসার এনেও লাভ হয়নি। ভাঙ্গা যায়নি ৬৭ রানের ম্যাচ জেতানো জুটি। প্রথমদিন থেকে হ্যামস্ট্রিংয়ের সঙ্গে লড়াই করা গুনারতেœ অপরাজিত থাকেন ৮০ রান করে। প্রথম ইনিংসে ৪৫ রানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলা অলরাউন্ডার জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। চার হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দেয়া পেরেরা অপরাজিত ২৯ রানে। অসংখ্য সুযোগ তৈরি করা ক্রেমার ৪ উইকেট নিয়েছেন ১৫০ রানে। উইকেটরক্ষক চাকাভা বেশ কয়েকটি ক্যাচ-স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া না করলে খেলার চিত্রটা ভিন্নরকম হতে পারতো। ১১ উইকেট নিয়ে একমাত্র টেস্টে সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতেছেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ।
×