ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্টের জন্য তৈরি হচ্ছেন মুমিনুল

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৯ জুলাই ২০১৭

টেস্টের জন্য তৈরি হচ্ছেন মুমিনুল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টেস্ট স্প্যাশালিস্ট ব্যাটসম্যান ধরা হয় মুমিনুল হককে। তাই ওয়ানডে ও টি২০তে তার কোন স্থানই হয় না। এখন তো টেস্টেও তার জায়গা পাকাপোক্ত নয়। সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন এ বছর মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ব্যাট হাতে কিছু করতে না পারায় শততম টেস্টে তো মুমিনুলের জায়গাই হয়নি। তাহলে কী বোঝা যাচ্ছে, টেস্টেও মুমিনুল এখন চলে না! চলবে কি করে, দলে যে এখন অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এক ম্যাচ খারাপ করা মানেই বাদ। মুমিনুল এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে রাজি নন। তিনি টেস্টের মানসিকতা নিয়েই ব্যাটিং করছেন। টেস্টের জন্য তৈরি হচ্ছেন। আশায় আছেন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একাদশে থাকবেন। খেলবেন। খেললে স্কোরটাকে সেঞ্চুরিতে নিয়ে যেতেও চান। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চলমান ফিটনেস ক্যাম্পে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন মুমিনুল। ফিটনেসটা ঠিক রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আবার ব্যাট হাতেও যেন নিজেকে মেলে ধরতে পারেন, সেই চেষ্টা করে চলেছেন। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের মুমিনুল বলেছেন, ‘সামনে যেহেতু টেস্ট খেলা, টেস্টের মানসিকতা নিয়ে ব্যাটিং করছি। কিভাবে বেশি সময় ক্রিজে থাকা যায়, সেশন বাই সেশন কিভাবে ক্রিজে থাকা যায়, বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘টেস্ট খেলতে হলে ৫০-৬০ করলেই হয় না। এক শ’ কিংবা তার বেশি হয়তো দলের জন্য কিছু ভূমিকা রাখতে পারে। আমি সেই মানসিকতা নিয়েই অনুশীলন করে যাচ্ছি।’ গত বছর পর্যন্ত টেস্ট দলে মুমিনুল ছিলেন নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। মুমিনুল ছিলেন একাদশের নিয়মিত ক্রিকেটার। ব্যাটিংটাও তার দুর্দান্তই ছিল। কিন্তু চলতি বছরে এসেই যেন ছন্দপতন ঘটে। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জানুয়ারিতে হওয়া দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ থেকেই মুমিনুলকে একটু অন্যরকমভাবে পাওয়া গেছে। ব্যাটিংয়ে সেই ধারটি যেন আর মিলছে না। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে যে হাফসেঞ্চুরি করেছেন। এরপর আর সেই ঝলকের দেখা নেই। যে ব্যাটসম্যান ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৯ টেস্ট খেলে ৫১.৬৬ ব্যাটিং গড়ে ৪টি সেঞ্চুরিসহ ১৫৫০ রান করেছেন, সেই ব্যাটসম্যানের সেই ব্যাটিং চমক উধাও। আসলে ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ফতুল্লা টেস্ট থেকেই মুমিনুলের ব্যাটিং ধার কমে গেছে যেন। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সালের মে পর্যন্ত একচেটিয়া ব্যাটিং করে গেছেন মুমিনুল। গড়ও ছিল ঈর্ষণীয়। কিন্তু এরপরই সব যেন অন্ধকারে চলে যেতে থাকে। ২০১৫ সালের জুন থেকে এ বছর মার্চ পর্যন্ত মাত্র দুই ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করতে পেরেছেন। সর্বোচ্চ ইনিংস ৬৬ রান। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, মুমিনুলের সেই ব্যাটিং তকমা আর নেই। টানা ১১ ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ রান করা ব্যাটসম্যান মুমিনুল। বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান। ব্যাটিং গড়ে একটা সময় স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে মুমিনুলের নামও উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু এখন যে টেস্ট স্প্যাশালিস্ট ব্যাটসম্যানটি টেস্টেও জৌলুসতা হারাতে চলেছে। তবে মুমিনুল যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগস্টের শেষদিকে শুরু হতে যাওয়া দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের চূড়ান্ত দলে থাকবেন তা অনেকটাই নিশ্চিত। কিন্তু একাদশে এখন মুমিনুলের জায়গা হয় কিনা, তাই দেখার বিষয়। গাজী গ্রুপের হয়ে এবার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে ভাল ব্যাটিং করেছেন মুমিনুল। ১৬ ম্যাচ খেলে ১টি সেঞ্চুরি ও ২টি হাফসেঞ্চুরিসহ ৩৮.৯৩ গড়ে ৫৮৪ রান করেছেন। আবার ওয়ানডে ক্রিকেটে বিবেচিত না হওয়া এ ব্যাটসম্যান ১৫২ রানের একটি ইনিংসও খেলেছেন। মুমিনুলকে এসব বিষয়ও ভাবায় না। শুধু টেস্টে তাকে বিবেচনা করা হয়। অন্য ফরমেটে নয়। এগুলো নিয়ে একদমই ভাবেন না ২০১৫ সালে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলা মুমিনুল, ‘প্রথম প্রথম বেশি কষ্ট হতো। এখন অতটা হয় না। চেষ্টা করি মাথায় বিষয়টা না রাখার। আপনারা বিষয়গুলো মনে না করিয়ে দিলে সত্যি কথা বলতে এখন আর মনে পড়ে না।’ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে সিরিজটি হবে। ইংল্যান্ডকে এরআগে দেশের মাটিতে হারানোতে অসিদেরও হারানোর আশা জেগেছে। তা কী সম্ভব? ২০১৩ সাল থেকে ২২ টেস্টের ৪০ ইনিংসে ব্যাটিং করে ৪৬.৮৮ গড়ে ৪টি সেঞ্চুরি ও ১১টি হাফসেঞ্চুরিসহ ১৬৮৮ রান করা মুমিনুল বলছেন, সিরিজটি চ্যালেঞ্জিং হবে। জানিয়েছেন, ‘যেটাই বলেন না কেন ওদের পেস বোলিং এবং স্পিন বোলিং দুটাই ভাল। যে কোন কন্ডিশনে ওরা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। আমার কাছে মনে হয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলাটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং হবে। আমরা যে ধরনের উইকেটে খেলি সেই ধরনের উইকেটে যে কোন বোলারই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। গত কয়েক বছরে আমরা যেভাবে টেস্ট খেলেছি তাতে করে আমার বিশ্বাস আমরা টেস্ট ম্যাচ জিততে পারি। ১-১ হলেও খারাপ নয়। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের দুটি ম্যাচই জেতার সামর্থ্য রয়েছে। কেননা আগের চেয়ে আমাদের টেস্ট দলটা অনেক ভাল।’ সঙ্গে ২৬ ওয়ানডেতে ২৩.৬০ গড়ে ৫৪৩ রান করা মুমিনুল যোগ করেন, ‘আমার মনে হয় ইংল্যান্ডের চেয়ে খানিকটা কঠিন হবে। কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়া ভারতের কন্ডিশনে খেলে এসেছে। আর ইংল্যান্ড আমাদের বিপক্ষে খেলে ভারতে গিয়েছিল। সবকিছু মিলিয়ে আমার মনে হয় অস্ট্রেলিয়া সিরিজ খানিকটা কঠিন হবে। ওরা জানে কিভাবে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। আমাদের সেভাবেই প্রস্তুত হতে হবে।’ মুমিনুল আবার নিজের ভাল খেলার চেষ্টার কথাই জানালেন, ‘সবসময় দলের জন্য ভাল খেলার চেষ্টা করি। এটাই লক্ষ্য। ওভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করলে হয় না, লক্ষ্য থাকতে হয় অনেক রান করার। কিন্তু দুই শ’ কিংবা তিন শ’ করব এমন কিছু সেট করি নাই।’ কোন লক্ষ্য সেট করার আগে তো একাদশে থাকা জরুরী। মুমিনুল এখন সেই সুযোগটিই পান কিনা সেদিকেই সবার নজর রয়েছে। মুমিনুলের নজর এখন একদিকেই টেস্টের জন্য নিজেকে তৈরি করা। সেটি করেও যাচ্ছেন তিনি।
×