ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে রফতানি হচ্ছে লটকন

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৯ জুলাই ২০১৭

বিদেশে রফতানি হচ্ছে লটকন

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী ॥ নরসিংদীর পাহাড়ী এলাকার কৃষকদের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে দিয়েছে এক সময়কার অপ্রচলিত ফল লটকন। দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশের বাজার দখল করতে পারায় এ ফলের গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় দিনে দিনে সোনালি ভবিষ্যত গড়ে উঠবে এখানকার লটকন চাষীদের। মুছে যাচ্ছে বেকারত্বের গ্লানিও। নরসিংদীর স্থানীয় বাজারের চলতি মৌসুমে ১৬ থেকে ২০ কোটি টাকার লটকন বেচাকেনা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি অধিদফতর। লটকন চাষীরা জানিয়েছেন, বেলাব ও শিবপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে লালমাটির এলাকায় কয়েকটি ঝোপে জঙ্গেলে অযতœ অবহেলায় বেড়ে উঠত লটকন গাছ। কোন কোন গ্রামের বাড়ির আঙ্গিনায় দেখা যেত হাতেগোনা কিছু লটকন গাছ। বাজারে এই অপ্রচলিত ফলের চাহিদা না থাকায় বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষের কথা ভাবতেন না এখানকার কেউ। এরই মধ্যে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে খাদ্য ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ লটকনের চাহিদা বাড়তে থাকে বাজারে। এতে শুরু হয় লটকনের ন্যায্যমূল্য। পাওয়ায় ও লাভজনক হওয়ায় লটকনের চাষ বাড়তে থাকে। এসব অঞ্চলে এখন বাড়ির আঙ্গিনায় পড়ে থাকা পতিত জমি থেকে শুরু করে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করা হচ্ছে। কাঁঠাল ও সবজির পাশাপাশি এখন এ অঞ্চলের প্রতিটি পরিবারের অর্থনীতির মূল চালিকশক্তি হচ্ছে লটকন। লটকন চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর পাশাপাশি বেকার সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে স্থানীয়রা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ২০০৮ সাল থেকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে নরসিংদীর এই সুস্বাদু ফল লটকন। মৌসুমি ফলের বেচাকেনাকে ঘিরে জেলার মরজাল ও শিবপুর বাজারে গড়ে উঠেছে লটকনের বৃহৎ বাজার। প্রতিদিন ভোরে দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ক্রেতারা এসে এসব বাজার থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে লটকন। পর্যায়ক্রমে হাতবদল হয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে এসব লটকন রফতানি হচ্ছে বিদেশের বাজারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, শিবপুর ও বেলাব উপজেলার লাল রঙের উঁচু মাটিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান থাকায় এখানকার মাটি ও আবহাওয়া লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়া রায়পুরা ও মনোহরদী উপজেলার কিছু কিছু এলাকার মাটি ও লটকন চাষের উপযোগী। গাছের গোড়া থেকে শুরু করে কা-গুলোতে ছড়ায় ছড়ায় ফলন হয় লটকনের। গাছের ফলন ধরার পরে লটকনের সবুজ বাগান ধারণ করে হলুদ রঙে। চলতি বছরে ১ হাজার ৩৪২ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ হয়েছে। বিগত বছর এর পরিমাণ ছিল ৫৮০ হেক্টর। বাণিজ্যিক চাষাবাদের আওতায় বাইরেও বিভিন্ন বাড়ির আঙ্গিনায় ও পতিত জমিতে লটকন গাছ রয়েছে। যা কৃষি বিভাগের হিসেবের অন্তর্ভুক্তি নয়। চলতি বছর ১৬ হাজার ৮২৭ মেট্রিক টন লটকনের ফলন পাওয়া যাবে। যার অনুমানিক মূল্য ১৬ থেকে ২০ কোটি টাকা। বেলাব উপজেলার লাখপুর গ্রামের শফিউদ্দীন বলেন, আমি চাকরির পাশাপাশি বাড়ির আঙ্গিনায় পতিত থাকা ২ একর জমিতে লটকন চাষ করেছি। আমার বাগানে আশাব্যঞ্জক ফল পেয়েছি, দাম ও পেয়েছি সন্তোষজনক। সাড়ে ৫ লাখ টাকায় লটকন জমিতে বিক্রি করে দিয়েছি। একই গ্রামের লটকন চাষী নুরুল হুদা বলেন, এখানকার লটকন স্বাদে মিষ্টি হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা বেশি। ফলে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি মণ লটকন আড়াই থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে আমরা লাভবান হচ্ছি। শিবপুর উপজেলার যোশর গ্রামের লটকন চাষী মোবারক হোসেন বলেন, লটকন চাষে তুলনামূলক খরচ কম শ্রমও দিতে হয় কম। অনেক দিন ধরে লটকন চাষ করায় অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছি। রোগ নির্মূলে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারছি। নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোঃ লতাফত হোসেন জানান, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বাজারে রফতানি হওয়ায় লটকনের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন কৃষকরা। এতে দিন দিন লটকন চাষের প্রসার ঘটছে। স্থানীয় বাজারে প্রায় ২০ কোটির টাকার লটকন বেচাকেনা হবে এবং ৬ থেকে ৭ কোটি টাকার লটকন বিদেশে রফতানি হবে আশা করা হচ্ছে। লটকন চাষ বৃদ্ধিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চারা উৎপাদন করাসহ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
×