ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পিছিয়ে সরকারী ব্যাংকগুলো

১১ মাসেই লক্ষ্যমাত্রার ১০৮ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৯ জুলাই ২০১৭

১১ মাসেই লক্ষ্যমাত্রার ১০৮ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) কৃষি খাতে ১৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো, যা লক্ষ্যমাত্রার ১০৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কৃষি খাতে মোট ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। এতে আগের বছরের তুলনায় কৃষি খাতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বেশি বিতরণ হয়েছে। চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাষ্ট্রীয় আটটি ব্যাংকের জন্য নির্ধারিত রয়েছে নয় হাজার ২৯০ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানার এসব ব্যাংক নয় হাজার ১৪০ কোটি টাকা বিতরণ কয়েছে, যা পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংকগুলোর জন্য আট হাজার ২৬০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারী ব্যাংকগুলোর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সাত হাজার ৮২৭ কোটি টাকা ও বিদেশী ব্যাংকগুলোর জন্য ৪৩৩ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংকগুলো আলোচ্য সময়ে নয় হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বিভিন্ন কারণে ব্যাংকগুলো অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে পারছে না। আর সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে সুদহার কমে আসায় ব্যাংকগুলো কৃষিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এতে এ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোর তৎপরতা এবং ব্যাংকগুলোর উদ্যোগের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। অগ্রাধিকার খাত হিসেবে এ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। আর ব্যাংকগুলোর দেয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ না হলে জরিমানারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব কারণেই কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে অনেক পিছিয়ে রয়েছে, যার মধ্যে সোনালী ব্যাংক ও বিডিবিএল কৃষিঋণ বিতরণে বেশি পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়াও নতুন ব্যাংকগুলোও কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণে পিছিয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের অর্ধেকই দেয়া হয়েছে শস্য খাতে। এদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ১৯ হাজার ৫৫৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে, যা আগের অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের কৃষি ও পল্লীঋণ নীতিমালায় বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়। এবার শস্য ও ফসল চাষের ক্ষেত্রে সিআইবি রিপোর্ট ছাড়াই একজন কৃষক সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা ঋণ নিতে পেরেছেন। আগে এ সীমা ছিল দেড় লাখ টাকা। এছাড়া সরকারী ও বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বাধ্যতামূলকভাবে নির্ধারিত কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ৩০ শতাংশ বিতরণ করতে হবে। তবে নেটওয়ার্ক অপ্রতুলতার কারণে বিদেশী ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এ নিয়ম কার্যকর হবে না বলে ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মোট দেশজ উৎপাদনে কৃষি ও পল্লী অর্থনীতি খাতের অবদান প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। আর শ্রমজীবী কর্মশক্তির প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানে এ খাতের অবদান ৪৫ শতাংশের মতো। রফতানিতেও কৃষি খাতের ভূমিকা বাড়ছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটিতে ব্যাংকিং ও আর্থিক বাজারের ঋণ যোগান রয়েছে সার্বিক ঋণ যোগানের তিন শতাংশেরও নিচে। নীতিমালা অনুযায়ী, এবার এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায়ও ব্যাংকগুলো কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে এজেন্টদের কমিশন বা সার্ভিস চার্জ হিসেবে গ্রাহকদের কাছ থেকে নির্ধারিত সুদের অতিরিক্ত দশমিক ৫০ শতাংশ আদায় করার সুযোগ রাখা হয়েছে। আম ও লিচুর পাশাপাশি পেয়ারা উৎপাদনেও সারাবছর ঋণ দেয়া যাবে। এছাড়া গত জুলাই থেকে কৃষি ও পল্লীঋণের নির্ধারিত সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ব্যাংকগুলো ১৭ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ২৪৬ কোটি টাকা বেশি। ওই অর্থবছরে ৩৪ লাখ ২৬ হাজার ১৩০ জন কৃষক এ ঋণ পান। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতে বিতরণ হয় ১৫ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় তিন শতাংশ বেশি বিতরণ করা হয়। তার আগের অর্থবছরে বিতরণ হয়েছিল ১৬ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। ওই বছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ৪৪২ কোটি টাকা বা প্রায় ১০ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়। গত কয়েক বছর ধরেই কৃষিঋণ বিতরণে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে তারচেয়ে বেশি বিতরণ করা হচ্ছে। তবে সার্বিকভাবে বেশি বিতরণ হলেও কয়েকটি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না। এমনকি আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের দৈন্যদশার কারণে কৃষি ও পল্লীঋণ থেকে দূরে রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের এ ঋণ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। তবে বাকি ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে নেয়। আর সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করতে পারলে জরিমানারও ব্যবস্থা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
×