ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছে কি-না তদন্ত হচ্ছে

ম্যাপল লীফের শিক্ষিকা ফেরদৌসী নিখোঁজ রহস্য আরও ঘনীভূত

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৯ জুলাই ২০১৭

ম্যাপল লীফের শিক্ষিকা ফেরদৌসী নিখোঁজ রহস্য আরও ঘনীভূত

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রাজধানীর ধানম-ির ম্যাপল লীফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের গণিতের শিক্ষিকা ফেরদৌসী ইকরাম ফসিয়া (৩১) নিখোঁজ রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাকে উদ্ধারে পুলিশের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়নি তারা। পুলিশ জানায়, নিখোঁজ শিক্ষিকা ফেরদৌসী একরাম জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছেন কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ জন্য মোবাইল কললিস্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তার ছবি এবং নানা তথ্য বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাঠানো হয়েছে। গত ২ জুলাই তিনি গ্রীন রোডসংলগ্ন ১৫২/১, ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। ইতোমধ্যে তার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের বাসায়ও খোঁজ নেয়া হয়েছে। কিন্তু তার সন্ধান মেলেনি। পরে ৩ জুলাই ফসিয়ার বাবা ইকরামুল্ল¬াহ কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন (নম্বর-১১৪)। ইকরামুল্লাহ ম্যাপল লীফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। পুলিশ ধারণা করছে, ফসিয়া জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে যেতে পারেন। ফেরদৌসী নিখোঁজের বিষয়টি তদন্ত করছেন কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বাবলুর রহমান। এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বাবলুর রহমান জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ, তার পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি। তার ছবিসহ নানা তথ্য বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, শিক্ষিকা ফেরদৌসী একরাম জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছেন কিনা, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে জঙ্গীবাদ ছাড়া আমরা অনেক কিছুই সন্দেহ করছি। এসআই বাবলুর জানান, ফেরদৌসীর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। তার দাদা সেখান থেকে রাজধানীর কলাবাগানে বাড়ি করেন। তিনি ম্যাপল লীফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পাশপাশি রাজধানীর আরও একটি স্কুলে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করতেন। আর কলাবাগানের বাড়িটি ডেভেলপার কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে। তার পরিবারের সঙ্গে তিনি গ্রীন রোডের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। ফেরদৌসী নিখোঁজ হওয়ার পর শুরুতে স্কুলে বলা হয়েছিল তার শারীরিক অসুস্থতার কথা। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে নিখোঁজ হওয়ার তথ্য গোপন রেখেছিল তার পরিবার। কলাবাগান থানার ওসি ইয়াসিন আরাফাত খান জনকণ্ঠকে জানান, গ্রীন রোডের একটি এ্যাপার্টমেন্টে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন ফসিয়া। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে তিনি বলে যান, এক ছাত্রের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন তিনি। এরপর থেকেই তার কোন খোঁজখবর নেই। এমনকি তিনি সেই সময় নিজের মোবাইল ফোনটিও সঙ্গে নেননি। তিনি স্বেচ্ছায় বাসা থেকে বেরিয়ে গেছেন, নাকি তাকে অপহরণ করা হয়েছে সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছেন কিনা। সেটা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তার মোবাইলের কললিস্ট বের করা হয়েছে। তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ফেরদৌসীর বড় ভাই এ কে এম এহসান উল্লাহ জানান, ফেরদৌসী নিয়মিত নামাজ পড়তেন। বাইরে যাওয়ার সময় বোরকা পড়তেন। ঘটনার দিন বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় কারও সঙ্গে তার কোন ঝগড়াও হয়নি। তদন্ত সংশ্লি¬ষ্টরা বলছেন, নিখোঁজ শিক্ষিকা ফেরদৌসী ইকরাম ফসিয়া নানা চালচলন, ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষিকাসহ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয়েছে পরিবারের সঙ্গে তার নানা বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। এতে তিনি জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ করা হচ্ছে। পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার জানান, ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের স্থায়ী বাসিন্দা ফসিয়া নিখোঁজের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
×