ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জননন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৯ জুলাই ২০১৭

জননন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণবার্ষিকী আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে ...। কবিগুরুর এই গানের বাণীর মতোই না থেকেও সৃষ্টির আলোয় উজ্জ্বল তিনি। শরীরী অস্তিত্ব না থাকলেও বেঁচে আছেন আপন শিল্প ও সাহিত্যের ভুবনে। সরল রেখার মতোই সহজ লেখায় মোহাবিষ্ট করেছিলেন পাঠক কিংবা দর্শককে। একইসঙ্গে সাহিত্য ও শিল্পকে ধারণ করে হেঁটেছেন বর্ণময় পথে। সমৃদ্ধ করেছেন এদেশের সৃজনশীল প্রকাশনা শিল্পকে। তার গল্প বা উপন্যাসের উদ্দীপক কিংবা রহস্যময় বুনটে বিভোর করে রেখেছিলেন পাঠককেই। বিচিত্র বিষয়ের নাটক কিংবা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শিল্পরসিককে দিয়েছেন অফুরন্ত আনন্দময়তা। এভাবেই ক্রমাগত সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে জননন্দিত সাহিত্যিক হয়ে উঠেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। আজ বুধবার বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এই জনপ্রিয় লেখক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকারের পঞ্চম প্রয়াণবার্ষিকী। ২০১২ সালে ১৯ জুলাই বর্ষার রাতে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাড়ি জমান অদেখার ভুবনে। পাঠক, ভক্ত, পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের অশ্রুধারায় সিক্ত করে বিদায় জানান প্রিয় পৃথিবীকে। বৃষ্টি ও জ্যোৎস্নাপ্রিয় এই সাহিত্যস্রষ্টা নিজ হাতে গড়া নন্দনকানন নুহাশ পল্লীর লিচুতলার ছায়ায় শায়িত হন চিরনিদ্রায়। আজ লেখকের মৃত্যুদিবসে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীর লিচুতলায় তার সমাধিক্ষেত্র ভরে উঠবে ফুলে ফুলে। ভক্ত ও অনুরাগীরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও দোয়া কামনার মাধ্যমে লেখকের প্রতি জানাবেন ভালবাসা। প্রতিটি জাতীয় পত্রিকায় তার মৃত্যুবার্ষিকী নিয়ে ছাপা হয়েছে প্রতিবেদন। লেখকের প্রয়াণবার্ষিকীতে টিভি চ্যানেলগুলো নাটকসহ নানা আয়োজনে জানাবে ভালবাসা ও শ্রদ্ধা। আত্মজৈবনিক গ্রন্থে হুমায়ূন আহমেদ লিখেছিলেনÑ ‘কল্পনায় দেখছি নুহাশ পল্লীর সবুজের মধ্যে শে^তপাথরের কবর- তার গায়ে লেখা- ‘চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে, নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে’। সে কথাগুলো কাঁচের এপিটাফ করে তার সহধর্মিণী মেহের আফরোজ শাওন নিজের নক্সায় সাজিয়েছেন স্বামীর কবর। সেখানে আজ শাওন ও তার দুই শিশু পুত্র নিনিদ ও নিষাদের ফুলের ছোঁয়া পাবেন তিনি। তারপর হাজারও মানুষ নুহাশ পল্লীর লিচুতলায় বিনম্র শ্রদ্ধা জানাবেন প্রিয় লেখককে। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নুহাশ পল্লীর পাশর্^বর্তী এতিমখানার অনাথ শিশুদের খাওয়ানো হবে হুমায়ূন আহমেদের পছন্দের খাবার। থাকবে কোরান তেলাওয়াত ও দোয়া প্রার্থনার আয়োজন। হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশ, অনন্যা, অন্বেষা, কাকলী ও সময়সহ কয়েকটি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারীরা লেখকের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাবেন। হুমায়ূন ভক্তদের গড়া হিমু পরিবহন নামের সংগঠনের পক্ষ থেকেই লেখকের প্রয়াণবার্ষিকীতে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। লেখকের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে ম্যাড থেটার পরিবেশিত নাটক ‘নদ্দিউ নতিম’। হুমায়ূন আহমেদের ‘কে কথা কয়’ উপন্যাস অবলম্বনে প্রযোজনাটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন আসাদুল ইসলাম। এছাড়া হুমায়ূনের জন্মস্থান নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে তার প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের উদ্যোগে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচী। এ সবের মধ্যে রয়েছে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শোক শোভাযাত্রা, মিলাদ মাহফিল ও এলাকার চক্ষু রোগীদের মধ্যে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান। পাঠক বিবেচনায় হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর। লিখেছেন বেশ কিছু জনপ্রিয় গান। আর সাহিত্যের যে ক্ষেত্রেই নিজের পদচিহ্ন এঁকেছেন প্রত্যেকটিতেই দেখা পেয়েছেন সাফল্যের। বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনকও হুমায়ূন আহমেদ ।
×