ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত্যুহীন প্রাণ যেন ক্যাকটাস

তিন শ’ বছর পর্যন্ত বাঁচে, অর্ধ শতকের গোল্ডেন বল বৃক্ষমেলায়

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৯ জুলাই ২০১৭

তিন শ’ বছর পর্যন্ত বাঁচে, অর্ধ শতকের গোল্ডেন বল বৃক্ষমেলায়

মোরসালিন মিজান ॥ সকাল-বিকেল জল দিতে হয় গাছের গোড়ায়। একদিন কোন কারণে হয়তো দেয়া গেল না, পাতাগুলো কেমন ঝুলে যায়, খেয়াল করেছেন? ক্যাকটাস তার উল্টো। খুব যতœ-আত্তির ধার ধারে না। শেকড় দিয়ে সামান্য পানি টেনে নিতে পারলেই হলো। দিব্যি বেঁচে থাকে। কত বছর বাঁচে ক্যাকটাস? শুনলে অবাক হয়ে যেতে হয়Ñ কয়েক শ’ বছর! হ্যাঁ, যেন মৃত্যুহীন প্রাণ! ক্যাকটাস বেশি দেখা যায় মরুভূমির দেশগুলোতে। পানির অভাবে প্রাণীকুল ছটফট করে। সাধারণ গাছের বেঁচে থাকা মুশকিল হয়ে যায়। অথচ ক্যাকটাস বেশ থাকে। গায়ে-গতরে মোটা হয় কোনটি। কোনটি লম্বায় বাড়ে। ভিন্ন ভিন্ন আকার আকৃতি ও গঠনের কারণে সৌন্দর্যপ্রেমীরা এর প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হন। বহু কালের সাক্ষী হয়ে থাকা ক্যাকটাস দারুণ সব ফুলও উপহার দেয়। প্রজাতির সংখ্যা অসংখ্য। শুধু ঢাকার বোটানিক্যাল গার্ডেনে রয়েছে দুই শতাধিক প্রজাতির ক্যাকটাস। বলধা গার্ডেনে আছে দেড় শতাধিক। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গড়ে তোলা হয়েছে ক্যাকটাস হাউস। ২০১০ সালে বাগানটি তৈরি করা হয়। বিরল প্রজাতির ও বিলুপ্তপ্রায় ৬০ প্রজাতির ক্যাকটাস আছে এখানে। দেশে দেখা যায়, এমন কিছু ক্যাকটাসের নাম নেয়া যেতে পারে। এই যেমনÑ ইউফরবিয়া, গ্রাটোপিটালাম বিলাম, গ্রাসোলা পেনগোলিন, রিবোটিয়া হিলিউসা, এসকোবাড়িয়া মিনিমা, ইপোমিয়া ব্লজিয়ানা, এডেনিয়াম অবিসাম-ডেজার্ট রোজ, ইমপালা লিলি, এভোনিয়া কুইনারিয়া, হাটিওরা সালিকর্নাইডস, এওনিয়াম মারডি গ্রাস, সিডাম মাছভমেরিয়াম, ক্রাসুলা ক্যাপিটেলা কেমপায়ার, হিউরিনা জেবরিনা। আছে ক্রাসুলা কেপিটেলা, কালাঞ্চো টমেনটোসা, নপালিয়ো, জার্মান এমপ্রেস, ফায়ার বেরেল ক্যাকটাস, ক্রাসুলা মরগান বিউটি, ইচাভিয়েরা এগাভাইডস লিপস্টিক, অরবিয়া ডুমেরি, হলুদ কেরিয়ন ফ্লাওয়ার। এচাভেরিয়া সেট অলিভার, স্টেপালিয়া জায়গানটিয়া, ফ্রিতা পুলচা, সেমপারভিভাম টেকটোরাম, এওনিয়াম এলোভারিয়াম, রেট টেইল কেকটাস, ফ্লেমিং কেটি, লয়ার্স টং, এলো ভিয়েরাও বেশ দেখা যায়। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার মাঠে চলছে জাতীয় বৃক্ষ মেলা। এখানেও আছে বিভিন্ন প্রজাতির ক্যাকটাস। গোল্ডেন বল নামের অন্দিন্দ্য সুন্দর ক্যাকটাসটি তো আলোচনার কেন্দ্রে। মেলায় প্রবেশ করে হাতের বাঁ দিকে এগোলে রাশিদা নার্সারি। এখানেই সাজিয়ে ফুটবলের মতো গোলাকার ক্যাকটাস। একটি নয়। তিনটি বল। আলাদা আলাদা কিন্তু পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। গায়ের পুরোভাগে ঘন লম্বা কাঁটা। বিশিষ্টার্থক গঠনের কারণে দর্শনার্থীরা না তাকিয়ে পারেন না। হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন কৌতূহলীরা। স্টলের দায়িত্বে থাকা এক তরুণ জানান, এর বয়স ৫৫ বছর! ভারতের এক সৌখিন ব্যক্তির কাছ থেকে সংগ্রহ করা। মেলায় দাম হাঁকা হচ্ছে ৩ লাখ টাকা। কেউ কেনার জন্য দামদর করছেন। কেউ কৌতূহল নিয়ে দেখছেন। দেখে যাচ্ছেন শুধু। তাতেই আনন্দ! মেলার কোন কোন স্টলে দেখা যাচ্ছে ফুলেল ক্যাকটাস। বিভিন্ন রঙের ফুল ফোটে আছে। ক্যাকটাসের ফুল মূলত রাতে ফোটে। ফুলের রং সাধারণত সাদা। বাহারি ফুল ফোটে দিনের বেলায়। হলুদ, লাল, গোলাপী, বেগুনীÑ কত কত রং! তবে খুব স্থায়ী হয় না ক্যাকটাসের ফুল। অধিকাংশই দু’একদিনের মধ্যে ঝরে পড়ে। ক্যাকটাসের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য এর কাঁটা। গায়ে কোন পোকামাকড় বসবে? খাদ্য খুঁজবে? না, সে সুযোগ দেয় না ক্যাকটাস। গায়ের অজস্র কাঁটা রুখে দেয় কীটপতঙ্গদের। এখানেই শেষ নয়, ক্যাকটাস শেকড় দিয়ে আশপাশের গাছের পানি শুষে নেয়। এ কারণে ক্যাকটাসের পাশে অন্য কোন গাছ স্বাচ্ছন্দ্যে বেড়ে উঠতে পারে না। সাধারণত শিকড় থেকে ক্যাকটাসের চারা তৈরি করা হয়। তবে একে শিল্পিত করার একটি ব্যাপার আছে। গ্রাফটিং বা জোড়কলম পদ্ধতি ব্যবহার করে এটি করা যায়। দুই বা ততধিক প্রজাতির ক্যাকটাস একত্রে জুড়ে দেয়ার এ পদ্ধতি এখন বেশ জনপ্রিয়। কেটে ছেঁটে, ঘুরিয়ে, বাঁকিয়ে নানা বর্ণের মিশ্রণে ক্যাকটাস গাছকে নিজের প্রিয় শিল্পকর্মের রূপ দেন সৌখিন মানুষ। বাংলাদেশের গাছ ও ফুল নিয়ে গবেষণা করেছেন মৃত্যুঞ্জয় রায়। তিনি জানান, তিন ভাগের একভাগ মাটি, একভাগ বালি এবং একভাগ পাতা পচা সার ভালভাবে মিশিয়ে টব তৈরি করতে হয়। এরপর ক্যাকটাসের গোড়ায় সপ্তাহে একবার পানি ছিটিয়ে দিলেই চলে। তবে ক্যাকটাসকে ফুলবাগানে স্থাপন করা কঠিন জানিয়ে তিনি বলেন, বাগানে পানি জমার আশঙ্কা থাকে। আর ক্যাকটাসের গোড়ায় পানি জমা মানেই বিপদ। বর্ষাকালে মাটির আর্দ্রতা বেড়ে গেলে গাছের গোড়া পচে যায়। অবশ্য উঁচু জায়গায় ক্যাকটাস রোপণ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি যাতে গাছে সরাসরি না পড়তে পারে সেদিকে নজর রাখতে হয়। গাছের ওপরে পলিথিন কিংবা কাচ দিয়ে আচ্ছাদন তৈরি করে বাঁচানো যায় ক্যাকটাস। গাছ রক্ষার এ আয়োজনকে বলা হয় গ্রিনহাউস। এরপরও পোকামাকড় ও রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে ক্যাকটাসের। এ জন্য একালাক্স দ্রবণ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়।
×