ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সীতাকুণ্ডে ৯ শিশুর মৃত্যু ॥ আরও চার শিশু হাসপাতালে ভর্তি

দায়িত্বে অবহেলা, ছয় স্বাস্থ্যকর্মীকে শাস্তিমূলক বদলি

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৯ জুলাই ২০১৭

দায়িত্বে অবহেলা, ছয় স্বাস্থ্যকর্মীকে শাস্তিমূলক বদলি

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস/ সীতাকু- সংবাদদাতা ॥ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সেই ত্রিপুরা পল্লীর শিশুরা কোন সরকারী টিকা পায়নি। শুধু তাই নয়, পাহাড়ী ওই এলাকায় গত ২০ বছর ধরে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের পদচিহ্নও পড়েনি। এই দায়িত্বহীনতা এবং কাজে গাফিলতি করায় ৬ স্বাস্থ্যকর্মীকে শাস্তিমূলক বদলি করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। সীতাকু- থেকে তাদের সন্দ্বীপ থানায় বদলি করা হয়। মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। সীতাকু-ের ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকার ইপিআই অধিদফতরের পরিচালক আবুল হাশেম খান, বিআইটিআইবি হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এএম হাসান এবং সীতাকু- উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোঃ নুরুল করিম রাশেদ। এদিকে, সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ত্রিপুরা পল্লীতে হাম রোগে আক্রান্ত শিশুরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। তবে মঙ্গলবার নতুন করে আরও ৪ শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মোঃ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, গত ১২ জুলাই বারআউলিয়া ত্রিপুরা পল্লীতে ৯ শিশু মারা গেছে হাম রোগে আক্রান্ত হয়ে। আমরা মোট ৯২ ত্রিপুরা শিশুকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়েছি। মঙ্গলবার দুপুরে ২০ শিশুকে সুস্থ করে ফুল দিয়ে ত্রিপুরা পল্লীতে প্রেরণ করেছি। ত্রিপুরা পল্লীতে দীর্ঘ সময় শিশুরা টিকা পায়নি। অভিভাবকরাও শিশুদের টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে সচেতন ছিলেন না। স্বাস্থ্য বিভাগের স্থানীয় ডাক্তার ও কর্মীরা কর্তব্য কাজে গাফিলতি করেছেন। সে জন্য ৬ স্বাস্থ্য কর্মীকে শান্তিমূলত বদলি করে সন্দ্বীপ থানায় প্রেরণ করা হয়েছে। যাদের বদলি করা হয়েছে তারা হলেন- স্বাস্থ্য পরিদর্শক খালেদ মাহমুদ হুমায়ুন, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক রেবা মহাজন, স্বাস্থ্যকর্মী নুরুল করিম, বদরুন নাহার বেগম, নিলুফার বেগম এবং তহুরা বেগম। পাশাপাশি ত্রিপুরা পল্লীতে নতুন করে ৬ স্বাস্থ্যকর্মীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন উপজেলার প্রতিটি ত্রিপুরা পল্লীতে বিভিন্ন টিকা প্রদানে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। বর্তমানে ত্রিপুরা পল্লীতে স্বাস্থ্য বিভাগের ১৪ টিম কাজ করছে। তিনি জানান, আক্রান্ত শিশুদের প্রশ্রাব, রক্ত ও বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে এক সপ্তাহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমরা উপণিত হয় যে এটা একটি হাম রোগ। এ রোগে ৯ শিশুর মৃত্যু ঘটে। তবে ত্রিপুরা এলাকায় পাহাড়ে টিউবওয়েল না থাকায় পাহাড়ী ছরার পানি ব্যবহার করার কারণে ৭০ ভাগ পানিবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে। দুটি ত্রিপুরা পাহাড়ে অস্থায়ী একটি টিকা কেন্দ্র বসানো হয়েছে। আমরা ত্রিপুরা এলাকায় টিউবওয়েল বসানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। ঢাকা লাইন ডিরেক্টর ইপিআই অধিদফতরের পরিচালক আবুল হোসেন খান বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ত্রিপুরা পল্লী পরিদর্শন ও পরিবারগুলোর সঙ্গে আলাপ করে যা জেনেছি তাতে বোঝা যায়, টিকা না দেয়ার কারণে ‘হাম’রোগে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে ৮১ ভাগ শিশুকে টিকার আওতায় আমরা আনতে সক্ষম হয়েছি। ১৯ ভাগ শিশু এখনও আমরা টিকা আওতায় আনতে পারিনি। তবে ২০২১ সালে আমরা শতভাগ শিশুকে টিকার আওতায় আনতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ।’ উল্লেখ্য, গত ১২ জুলাই উপজেলার সোনাইছড়ি বারআউলিয়া ত্রিপুরা পল্লীতে হঠাৎ অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫ দিনে ৯ শিশুর মৃত্যু ঘটে। এ রোগে আক্রান্ত হওয়া আরও অন্তত ৯২ জনকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। এবং স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করলে উনারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রথমে রোগটি অজ্ঞাত হিসাবে প্রচারিত হলেও পরে ঢাকায় নমুনা পরীক্ষা করে ‘হাম রোগ’ শনাক্ত হয়।
×