ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শ্বেতি রোগ

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১৮ জুলাই ২০১৭

শ্বেতি রোগ

যে কয়টি রোগের কারণে ত্বক সাদা হয়ে যায় শ্বেতী তার মধ্যে অন্যতম। কেউ কেউ মনে করেন যে কেবলমাত্র অভিশপ্ত মানুষেরই এ রোগ হয়ে থাকে। আসলে কথাটি ঠিক নয়। আর দশটি রোগের মধ্যে এটিও একটি রোগ। মানুষের চামড়ায় মেলানোসাইট নামক যে কোষগুলো থাকে সেগুলো ধ্বংস হয়ে গেলেই এ রোগ দেখা দেয়। কিন্তু কেন কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায় সে ব্যাপারটি এখনো কিন্তু নিশ্চিত করে জানা যায়নি। অনেকে মনে করেন যে, এন্টিজেন এন্টিবডির বিক্রিয়ার মাধ্যমে মেলানোসাইট নামক কোষটি ধ্বংস হয়ে থাকতে পারে। কোন বয়সে হয় : বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত যে কোন বয়সেই এ রোগ হতে পারে। এটা সাদা কালো এবং বাদামি সকল বর্ণের লোকদের মধ্যেই হতে দেখা যায় এবং বংশগতভাবেও এ রোগ হতে পারে। সাধারণত প্রথম দিকে হাল্কা সাদা রং নিয়ে শুরু হয়। তার পর আস্তে আস্তে এর বিস্তার ঘটতে থাকে এবং এক সময় ধবধবে সাদা রং ধারণ করে। কালো চামড়ায় এটা যতটা প্রকটভাবে দেখা যায় সাদা চামড়ায় কিন্তু ততটা দেখা যায় না। আগেই বলেছি এর প্রকৃত কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে, কাটা স্থানে, নিয়মিত শরীরের যে সব স্থানে চাপ পড়ে সেই স্থানে শ্বেতী হওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। এটা যে কোন স্থানে যে কোন বয়সেই হতে পারে। সাধারণত এতে কোন উপসর্গ থাকে না। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে সামান্য হাল্কা চুলকানি থাকতে পারে। এগুলো আকারে এক মিলিমিটার থেকে শুরু করে শরীরের বিশাল অংশ জুড়েও হতে পারে এবং সংখ্যায় একটি থেকে শুরু করে অসংখ্য পর্যন্ত হতে পারে। শ্বেতীতে আক্রান্ত স্থানের চুলগুলো সাদা রংয়ের অর্থাৎ চুল পেকে যেতে পারে। মুখের ভেতরে এবং চোখেও শ্বেতী হতে পারে। শ্বেতীর সাথে একত্রে থাকতে পারে এমন কয়েকটি রোগ আছে যা কিনা প্রত্যেক শ্বেতী রোগীর ক্ষেত্রে খুঁজে দেখতে হবে। যেমনÑ রোগ, ডায়াবেটিস, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি। শ্বেতী নিশ্চিতভাবে ডায়াগনোসিস করতে হলে ত্বক কেটে নিয়ে বায়োপসি করতে হবে। তাতে দেখা যাবে ত্বকে মেলানোসাইট কোষটি অনুপস্থিত থাকবে। সাদা হলেই কিন্তু শ্বেতী নয়। বেশ কয়েকটি রোগ আছে যার কারণে ত্বক সাদা হয়ে যায় এবং তার সঙ্গে এ রোগের সাদৃশ্য আছে। কাজেই সেই রোগগুলো থেকে একে পৃথক করতে হবে। যে সব রোগের কারণে ত্বক সাদা হয়ে যায় সেগুলো হচ্ছে পিটিরিয়াসিস এলবা, কেমিক্যাল লিকোডারমা, টিনিয়া ভারসিকালার, পোস্ট ইনফ্লামেটোরি হাইপোমেলানোসিস, টিউবারাস স্কেলেরোসিস, লিকোডারমা, কুষ্ঠ, নেভাস ডিপিগমেন্টোসাস ইত্যাদি। একজন লোকের ভিটিলিগো হয়ে থাকে সেটা কোন দিকে যাবে তা বলার উপায় নেই। এক হতে পারে বহু বছর পর্যন্ত যেমন ছিল তেমনই কিংবা এমন হতে পারে যে, এটা আপনা আপনি ভালো হয়ে যাবে, আবার এমনও হতে পারে যে এটা আরও বেড়ে যাবে। চিকিৎসা : শ্বেতী চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেহের সৌন্দর্যকে পুনরায় ফিরে পাওয়া। কারণ এ রোগের তেমন কোন ক্ষতিকারক দিক নেই বললেই চলে এবং এটা ছোঁয়াচেও নয়। তবে চিকিৎসা দীর্ঘদিন ধরে চালাতে হয়। তবে ফলাফল কতখানি আসবে তা মেলানোসাইট পুরো মাত্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে কি-না তার ওপর নির্ভর করে। দেখা গেছে ১৫-২৫ ভাগ ক্ষেত্রে কোন রকম চিকিৎসা ছাড়াই নিজ থেকে চামড়া কালো রংয়ের হতে থাকে। চটঠঅ থেরাপিতে বেশ ভালো ফলাফল লক্ষ্য করা গেছে। অনেকের মতে, এ পদ্ধতিতে ৫০-৭০ ভাগ ক্ষেত্রে কমবেশি সফলতা আসে। রোগীকে চিকিৎসার পাশাপাশি সূর্যের আলোতে যেতে বারণ করতে হবে। তবে ঝঁহ ইষড়পশ ঈৎবধস মেখে রোদে যাওয়া যেতে পারে। চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীকে নিশ্চিত করতে হবে যে এটা ক্যান্সার হওয়ার পূর্ব আলামত নয় কিংবা এটা ছোঁয়াচেও নয় বা এটা কুষ্ঠ রোগও নয়। কারণ বহু দেশেই এটা এখনও একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবেই চিহ্নিত। ডাঃ দিদারুল আহসান চর্ম, এলার্জি ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল-রাজী হাসপাতাল ফোন : ৮১১৯২২৯, ০১৮৯২১৮৩৭৮
×