ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৮ জুলাই ২০১৭

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হতে পারে

এম শাহজাহান ॥ প্রথমবারের মতো কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীদের ৩০ হাজার মেট্রিক টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে আমদানি নীতিমালা অনুযায়ী কোন জটিলতা তৈরি হলে রাষ্ট্রীয় সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) থেকে ন্যায্যমূল্যে এ শিল্প খাতের ব্যবসায়ীদের লবণ সরবরাহ করা হবে। অর্থাৎ লবণ সঙ্কটের কারণে যাতে কাঁচা চামড়ার সংরক্ষণ ও মজুদ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এছাড়া পাঁচ লাখ টন লবণ আমদানির জন্য এবার প্রকৃত ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিতর্ক এড়াতে প্যাডসর্বস্ব মিল মালিকদের লবণ আমদানির অনুমতি দেবে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ ও মজুদের জন্য এবার ৩০ হাজার মেট্রিক টন লবণের প্রয়োজন হবে। বর্তমানে ২৫-৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি লবণ। এ দামে লবণ কিনে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করা সম্ভব নয় বলে সম্প্রতি বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ন্যায্যদাম নিশ্চিত করতে হলে পোস্তার কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীদের লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় আগামী কোরবানির ঈদে কাঁচা চামড়ার বাজারে বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু তাই নয়, হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ করা হলেও সাভার চামড়া শিল্পনগরীর ট্যানারিগুলো এখনও চালু হয়নি। সাভারে যে কয়টি ট্যানারি চালু করা হয়েছে, তাতে কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে। এ সময়ে পচনের হাত থেকে রক্ষা করতে এবার কাঁচা চামড়ায় বেশি পরিমাণে লবণের ব্যবহার করা প্রয়োজন। এ কারণে চামড়া ব্যবসায়ীদেরই লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হোক। এদিকে, চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এ চিঠি পাওয়ার পরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পাঁচ লাখ টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী কোরবানির ঈদের আগে বেশিরভাগ লবণ যাতে দেশে আনা যেতে পারে সেজন্য আমদানিকারকদের নির্দেশ দেয়া হবে। কোরবানির সময় যাতে কোনভাবেই বাজারে লবণ সঙ্কট তৈরি না হয় সে বিষয়টিতে নজর রাখবে সরকার। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু জনকণ্ঠকে বলেন, লবণের ঘাটতি মেটানো ও দাম কমাতে পাঁচ লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় এবার প্রকৃত আমদানিকারকদের খুঁজে বের করে লবণ আনার অনুমতি দেবে। তিনি বলেন, কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীরাও লবণ আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছেন। কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে তাদের ৩০ হাজার মেট্রিক টন লবণের প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের দাবিটিও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। শিল্প খাত বাঁচাতে প্রয়োজনে সব করা হবে। তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের আগে যাতে লবণের বড় অংশ দেশে আনা যেতে পারে সে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, লবণের অভাবেই কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়ে থাকে। একটি গরুর চামড়ায় প্রায় দশ কেজি লবণ ব্যবহার করতে হয়। সে হিসাবে একটি চামড়া সংরক্ষণে লবণ বাবদ ২৫০-৩০০ টাকা ব্যয় করতে হবে। বাংলাদেশে প্রতি বছর মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ চামড়া কোরবানির ঈদে জবাই করা পশু থেকে আসে। এ সময়ে গড়ে ৩৫-৪০ লাখ চামড়া আসে আড়তে। সাধারণত মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেন। আড়ত হয়ে এগুলো কিনে নেন ট্যানারি মালিকরা। আর এখন কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের অতিজরুরী উপাদান লবণের দাম বেড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ হওয়ায় কোরবানি সামনে রেখে এখনও লবণ কেনা শুরু করেননি পোস্তার ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা নিজেরা আমদানি করে এবার লবণের চাহিদা পূরণ করতে চান। এতে লবণের দাম কমে আসবে এবং চামড়া সংরক্ষণ করা সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান জনকণ্ঠকে বলেন, চামড়া ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আমরা লবণ আমদানির অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি।
×