ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শামছুর রহমান হত্যা মামলা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৮ জুলাই ২০১৭

শামছুর রহমান হত্যা মামলা

১৭ বছর পেরিয়ে গেল সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল হত্যার। নির্মম এ হত্যাকা-ের বিচার অদ্যাবধি সম্পন্ন হয়নি; বরং আইনের মারপ্যাঁচে আটকে রয়েছে মামলার বিচার প্রক্রিয়া। এ দীর্ঘ সময়ে হত্যাকা-ের বিচার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নিহতের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ। উল্লেখ্য, ২০০০ সালের ১৬ জুলাই যশোরের জনকণ্ঠ অফিসে এই সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘাতকরা অতি নির্বিঘেœ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সরে পড়ে। নির্ভীক এই সাংবাদিক দুর্নীতি, সন্ত্রাস আর গডফাদারদের বিরুদ্ধে মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত সংগ্রাম করেছেন। সাংবাদিক শামছুর রহমান খুন হবার পর ২০০১ সালে সিআইডি পুলিশ এ মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। উল্লেখ্য, মৃত্যুর কয়েকদিন আগে শামছুর রহমান তার ডায়েরিতে লিখে গিয়েছিলেন বিএনপির স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবার ষড়যন্ত্র করছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে চার্জশীটে সেই নেতার নামটি যুক্ত হয়নি! এমন কি হত্যাকা-ে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া যশোরের দুই সাংবাদিকসহ চার্জশীটভুক্ত আসামিদের বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ছাড়িয়ে নেন ওই নেতা। চার্জশীটভুক্ত ১৬ জনের মধ্যে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হীরক পুলিশের খাতায় পলাতক। আরেক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত, কোটচাঁদপুর উপজেলার নাসির উদ্দিন কালু হার্টস্ট্রোকে এবং যশোর সদরের আনারুল প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছে। বাকি আসামিরা জামিনে। ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আসামি পক্ষের মামলার বর্ধিত তদন্ত করে শামছুর রহমানের ঘনিষ্ঠ এক সাংবাদিক বন্ধুকে নতুন করে আসামি করা হয়। একই সঙ্গে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে বাদ দিয়ে সাক্ষী করা হয় আসামিদের ঘনিষ্ঠজনদের। এতে একদিকে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়; অন্যদিকে দুর্বল হয়ে যায় চার্জশীট। এরপর ২০০৫ সালের জুন মাসে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে এ মামলার চার্জ গঠন হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এ অবস্থায় মামলার বাদী শামছুর রহমানের সহধর্মিণী সেলিনা আকতার বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপীল করেন। বাদীর এই আপীল আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেয়া হবে না তার জন্য সরকারের ওপর রুলনিশি জারি করেন। পরে মামলায় নতুনভাবে যুক্ত হওয়া এক আসামি উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। সেই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। শামছুর রহমান মৃত্যুভয়কে তুচ্ছজ্ঞান করেই অসত্য আর সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে লিখে গেছেন। তার ক্ষুরধার লেখনীর কথা সর্বজনবিদিত। তাঁর একেকটি প্রতিবেদন জনস্বার্থবিরোধীদের ঘাঁটিতে আতঙ্ক সৃষ্টি করত। জনকণ্ঠে বহু সাড়া জাগানো সিরিজ প্রতিবেদন তার তত্ত্বাবধানে করা হয়েছিল। তাঁর সততা আর নিষ্ঠার কারণে একজন মফস্বল সংবাদদাতা রিপোর্টিংয়ের সর্বোচ্চ অবস্থান বিশেষ সংবাদদাতার মর্যাদায় অভিষিক্ত হতে পেরেছিলেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচারকাজ স্থগিত রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা সচেষ্ট হলে আদালতে মামলাটি আবারও সচল হতে পারে। অপরাধ কখনও তামাদি হয় না। সময় এখানে কোন প্রতিবন্ধকতা নয়। এদেশে ৪৫ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, অপরাধীরা শাস্তি পেয়েছে। ৩৫ বছর পর বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে, অপরাধীর সাজা হয়েছেÑ তেমনি আদালতে সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যার মামলাটি সঠিকভাবে পরিচালিত হলে কোন অপরাধীই রেহাই পাবে না। সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যা মামলাটি বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ। দেশে আইনের শাসন রক্ষায় এই হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার জরুরী বলে সবাই মনে করে।
×