ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বন্যা পরিস্থিতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৮ জুলাই ২০১৭

বন্যা পরিস্থিতি

গত কয়েকদিনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে আসায় সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আগামী ৭২ ঘণ্টা যমুনার পানি হ্রাস পাবে। অন্যদিকে নেমে যাচ্ছে পদ্মার পানি। পাহাড়ী ঢলের গর্জনও কমে আসছে। তবে ১৬টি পয়েন্টে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপরে প্রবহমান। একটু স্বস্তির খবর হলেও পানিবন্দী মানুষেরা আছেন চরম বিপাকে। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সঙ্কটে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন তারা। প্রশাসনের আন্তরিকতা সত্ত্বেও সর্বত্র ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি। চাহিদা মোতাবেক ত্রাণও পর্যাপ্ত নয়। ফলে বানভাসি মানুষ সাহায্যের আশায় ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন বিভিন্ন স্থানে। পেটের পীড়া, সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবরও আছে। বিভিন্ন স্থানে সাপের উপদ্রব বেড়েছে। চলতি শ্রাবণে বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢলের প্রকোপ কম থাকলে বন্যা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে আশা করা যায়। সরকারী হিসেবে বন্যাকবলিত ১৩ জেলার ৪৫ উপজেলায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেসরকারী হিসেবে আরও বেশি, আগামীতে যা আরও বাড়তে পারে। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে বলে জানানো হয়েছে। আমদানি বেড়ে যাওয়ায় চালের দামও কমতির দিকে। অনেক জায়গায় কিছু মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছেন। রোগ, শোক, আমাশয়, পেটেরপীড়া, সর্দি-কাশি-জ্বরের প্রকোপও লক্ষণীয়। বীজতলাসহ ফসলহানির খবরও আছে। সঙ্কট রয়েছে আমন বীজের। অতঃপর প্রশাসনের জরুরী কর্তব্য হবে সব রকম সাহায্য-সহায়তা নিয়ে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো। এনজিওগুলোও এক্ষেত্রে জরুরী ত্রাণ ও চিকিৎসা সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশের যেসব অংশে বর্তমানে বন্যা দেখা দিয়েছে, সে সবই মূলত সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পানির ঢল ও অতিবৃষ্টি, যা অনেক সময় বাঁধ উপচেপড়ার কারণে ছেড়ে দেয়া হয়। একদিকে তিস্তা-ধরলা-তোরসা, অন্যদিকে অসমের ব্রহ্মপুত্রের বন্যার অনিবার্য প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে। প্রতিবেশী দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন নদ-নদীগুলোর বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণের কারণেই প্রতিবছর এমন ঘটনা ঘটে থাকে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আর এর অনিবার্য অসহায় শিকার হচ্ছে দু’দেশের সীমান্তবর্তী লাখ লাখ গরিব মানুষ। প্রধানত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তির কারণে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিন থেকে বিরাজমান অভিন্ন নদ-নদীর পানি সমস্যার নিরসনসহ তিস্তা-ফেনীর পানি সমস্যাটিও ঝুলে আছে। অথচ বন্যাদুর্গত ও নদীভাঙ্গন কবলিত অসহায় মানুষের সাংবাৎসরিক দুর্দশা লাঘবে দু’দেশের মধ্যে পানি সমস্যার মীমাংসা ছাড়া গত্যন্তর নেই। আমরা যথাসম্ভব দ্রুত এ বিষয়ে ভারত সরকারের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করি। বন্যা-ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের খরা মৌসুমে মঙ্গাপরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দেয়া হয়েছে দরিদ্র ও বিধবা ভাতা, কাবিখা-টাবিখা ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে। এবার হঠাৎ করে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় হয়ত প্রশাসনের প্রস্তুতি ছিল না তেমন। যা হোক, এখন ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের উচিত সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার করার পাশাপাশি পুনর্বাসনে প্রয়োজন বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনা খাবার, জরুরী ওষুধপত্র, তাঁবু ইত্যাদি। গরিব ও অসহায় মানুষদের কাছে এখনই সেসব পৌঁছে দেয়া প্রশাসনের জরুরী কর্তব্য। সরকার তথা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এদিকে নজর দেবে বলেই প্রত্যাশা।
×