ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটে অজানা রোগে আক্রান্ত শিশু আলিমুনকে হাসপাতালে ভর্তি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৮ জুলাই ২০১৭

বাগেরহাটে অজানা রোগে আক্রান্ত শিশু আলিমুনকে হাসপাতালে ভর্তি

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটে অজানা রোগে আক্রান্ত আলিমুন শেখ নামে নয় বছরের এক শিশুকে সদর হাসপাতালে রবিবার রাতে ভর্তি করা হয়েছে। টিউমার আকৃতির একাধিক গোটা গোটা মাংসপি-ে মাথাসহ সারা শরীরে অস্বাভাবিক আকার ধারণ করেছে তার। মাথাটা ফোলা, গোটা গোটা বড় বড় টিউমারের মতো। হঠাৎ করে দেখলে যে কেউ আঁতকে উঠবেন। আলিমুনের পিঠে ও হাঁটুতে নতুন করে আরও টিউমারের মতো বড় বড় গোটা উঠছে। শিশুটির শরীরে কী রোগ তা শনাক্ত হয়নি। বলতে পারে না কেউ। দীর্ঘ দুই বছর আগে এ রোগের দেখা দিলেও অর্থাভাবে শিশুটির চিকিৎসা হয়নি। অবশেষে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনের উদ্যোগে তাকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। সোমবার শিশুটির চিকিৎসার জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতালে তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডাঃ অরুণ চন্দ্র ম-ল জানান, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ সাইদ আহম্মেদকে প্রধান করে গঠিত ৩ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডে রয়েছেন আরএমও ডাঃ মোশারেফ হোসেন ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আবুল বাশার মোঃ সাদী। তারা শিশুটির রোগ শনাক্তে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছেন। বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের সোনাকান্দর গ্রামে আলিমুনের বাড়ি। তার বাবা আজাহার শেখ তিন বছর আগে মারা গেছে। মা সখিনা বেগম দিনমজুরের কাজ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর অন্যত্র বিয়ে হয়েছে তার। আলিমুন এখন তার বড় চাচা শাহজাহান শেখের সংসারে থাকে। সোনাকান্দর গ্রামে এক শতক জমির ওপর ছোট্ট একটি ঘর শাহজাহান শেখের। সেখানে বড় চাচার পরিবার ছাড়াও দাদি কুলসুম বেগম আর বড় ভাই শুকুর আলী শেখ একসঙ্গে থাকে। আলিমুনের বড় চাচি শরিফা বেগম বলেন, ‘ওর বয়স যখন তিন সাড়ে তিন বছর তখন মাথার পেছনে ছোট ছোট টিউমারের মতো ওঠে। তখন ওর বাবা বেঁচে ছিলেন। সেই সময়ে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছিল। ধারদেনা করে কিছুদিন ওষুধ খাওয়ানো হয়।’ খুলনার চিকিৎসকরা আলিমুনকে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আর্থিক অনটনে তা আর সম্ভব হয়নি। বাবা মারা যাওয়ার পর ওর মা রাস্তার কাজ করে। তারও আবার বিয়ে হয়েছে। তাই আলিমুন এখন আমাদের কাছে থাকে। মাঝে মাঝে ওর মাও এখানে এসে ওর সঙ্গে থাকে। শিশুটির মা সখিনা বেগম বলেন, ‘মাথার পেছনে টিউমারগুলো শুধু বড় হচ্ছে। ফোড়ার মতো দুটি ঠেটে গিয়েছে, মাঝে মাঝে তা দিয়ে রক্ত বের হয়। মাঝে মাঝে ব্যথার কথা বলে। রাতে শুতে (ঘুমাতে) গিয়ে কান্নাকাটি করে। আমাদের তো টাকা-পয়সা নেই; ওর চিকিৎসা করাব কি করে?’ আলিমুনের ছবি দিয়ে তার অসুস্থতা ও অসহায়ত্বের বিষয়টি সম্প্রতি ব্যক্তিগত ফেসবুকে লিখেন গজালিয়া বাজারের ওষুধ বিক্রেতা ও শৈল্য চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম। এরপর বিষয়টি সকলের নজরে আসে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর শিশুটির চিকিৎসার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৩ ডাঃ জুলফিকার আলী লেলিনের সঙ্গে কথা বলে শিশুটিকে রবিবার রাতে কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ নাসির ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ মনির হোসেন হাসপাতালে ভর্তি করান। তাকে ঢাকায় নিয়ে সরকারী খরচে সুচিকিৎসা করানো হবে বলে এসএম জাকির হোসাইন উল্লেখ করেন। বাগেরহাটের সিভিল সার্জন অরুণ চন্দ্র ম-ল বলেন, তাকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তির পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে রোগ সম্পর্কে বলা যাবে না। দরকার হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
×