ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভবিষ্যতে হবে এশিয়ার সেরা আর্মি ট্রেনিং সেন্টার ॥ বনমন্ত্রী যাচ্ছেন আজ

জাহাইজ্জার চর থেকে স্বর্ণদ্বীপ- এখন সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৮ জুলাই ২০১৭

জাহাইজ্জার চর থেকে স্বর্ণদ্বীপ- এখন সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

মীর শাহ আলম, নোয়াখালীর স্বর্ণদ্বীপ থেকে ॥ সাগর নদী খাল ও জঙ্গল পরিবেষ্টিত এক সময়ের ডাকাত-সন্ত্রাসী ও জলদস্যু আতঙ্কিত জাহাইজ্জারচরের নাম সেনাবাহিনীর প্রস্তাবনায় বর্তমান সরকারের সময় স্বর্ণদ্বীপ নামকরণ করা হয়েছে। নোয়াখালীর সুবর্ণচরের কাটাখাল থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনার প্রায় ৬ কিলোমিটার সাগরপথ পাড়ি দিয়ে জনবসতিহীন বিশাল এ স্বর্ণদ্বীপের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশন ও কুমিল্লা এরিয়ার হাতে। সরকারের সহায়তায় ও সেনাবাহিনীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চরটিকে আধুনিক সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ দ্বীপকে এশিয়ার অন্যতম সেরা ও আধুনিক সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সেনাবাহিনী। কুমিল্লা থেকে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিন পরিদর্শনে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সোমবার বিকেলে এ দ্বীপটিতে পৌঁছে। সরেজমিন দ্বীপে গিয়ে দেখা গেছে, এক সময় চট্টগ্রাম-ঢাকা-খুলনা-নারায়ণগঞ্জে বঙ্গোপ-সাগরের নোয়াখালীর সুবর্ণচর মোহনা হয়ে বড় বড় জাহাজ চলাচল করত। সুবর্ণচরের কাটাখাল থেকে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রাধীন একটি ট্রলারে করে স্বর্ণদ্বীপ আসার পথে ট্রলারের মাঝি আজাদ মিয়া ও ট্রলারের লস্কর আবুল হাশেম জানান, আনুমানিক ২০-২৫ বছর আগে আজকের স্বর্ণদ্বীপ এলাকায় একটি জাহাজ চরে আটকে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ওই সময় থেকে এ চরটিকে জাহাইজ্জার চর নামেই এতদঞ্চলে পরিচিতি পায়। মাঝি ও লস্করদ্বয় আরও জানান, নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়ার দুর্ধর্ষ ডাকাত-জলদস্যুরা ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে জাহাইজ্জার চরে আত্মগোপন করত। এছাড়া ডাকাতদল সাগর পথে যাতায়াতকারী জাহাজের মালামাল লুটপাটসহ উপকূলীয় অঞ্চল থেকে নিরীহ মানুষজন, জেলে ও নারীদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করত। জাহাইজ্জার চরকেন্দ্রিক ডাকাত-জলদস্যু সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে উপকূলবাসী ছিল দিশেহারা। প্রায় ৭ বছর আগে র‌্যাব’র অভিযানে জাহাইজ্জার চরের ত্রাস বাশার মাঝি নিহত হয়। ওই সময় র‌্যাব জাহাইজ্জার চর থেকে ডাকাতদের ব্যবহৃত বেশ কিছু অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করে। পরে সেনাবাহিনী এ চরে অবস্থান নিয়ে ডাকাত-সন্ত্রাসী ও জলদস্যুদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয় এবং ডাকাতদের ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে। এদিকে স্থানীয়রা জানান, সেনাবাহিনী এ দ্বীপের দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যবসায়ী ও জেলেরা স্বাভাবিক জীবন-যাপনসহ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এতে এসব এলাকার লোকজনের নিরাপত্তা ও জীবনমানের পরিবর্তন হচ্ছে। চরে আসার সময় সাগরপথে ট্রলারে বসে কথা হয় সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কোরের মেজর তাওহীদের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ২০১৩ সালের ৮ মার্চ সেনাবাহিনী চরটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে উন্নয়ন কর্মকা- শুরু করে এবং ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল এ চরে ডাকাতদের ফেলে যাওয়া মাটির নিচ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে। স্বর্ণদ্বীপ টাক্সফোর্স সদর দফতরের সমন্বয়কারী কর্মকর্তা সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কোরের মেজর আজাদ জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ দ্বীপটিতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- চালানো হয়েছে। দ্বীপটিকে দেশের আধুনিক সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রত্যেক বছর ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ৭টি ব্রিগেড গ্রুপ এখান থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে। প্রতি ব্রিগেডে ২ হাজার করে সেনা সদস্য থাকে। এ পর্যন্ত ২০১৪ সালে একটি, ২০১৫ সালে ৫টি, ২০১৬-১৭ সালে ৮টিসহ ১৪টি গ্রুপ সফলভাবে বৃহৎ আকারে সফলভাবে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এছাড়া সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আধুনিক ট্রেনিং সুবিধা ও প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ৩৭০ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল এ দ্বীপটিতে ৬০ হাজার ঝাউগাছ, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ভিয়েতনামের ১৫শ’ সিয়াম নারকেলের চারা ও ১৭শ’ ফলদ গাছ লাগানো হয়েছে। চারদিকে সাগর ও সাগর মোহনা পরিবেষ্টিত দ্বীপটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছালি। সেনাবাহিনী দ্বীপটির দায়িত্বভার গ্রহণ করে মহিষ, হাঁস, মুরগি, ভেড়া পালন শুরু করে। মহিষের দুধের পনিরের কারখানা স্থাপন করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে। সরকারের আরও সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে স্বর্ণদ্বীপ হবে এশিয়ার অন্যতম ও আধুনিক সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তিনি আরও জানান, সেনা সদরের প্রস্তাবে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দ্বীপটি সফরকালে দ্বীপটির নাম জাহাইজ্জার চর থেকে স্বর্ণদ্বীপ নামে নামকরণ করা হয়। উল্লেখ্য, আজ মঙ্গলবার বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু স্বর্ণদ্বীপের উন্নয়ন কর্মকা- পরিদর্শন করবেন। এ সময় ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং কুমিল্লা এরিয়ার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল রাশেদ আমিনসহ সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
×