ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিদ্ধান্ত জানা যাবে আজ ॥ আরও এক দফা সময় বাড়তে পারে

মালয়েশিয়ায় আটক বিদেশীদের ভবিষ্যত নিয়ে বৈঠক শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৮ জুলাই ২০১৭

মালয়েশিয়ায় আটক বিদেশীদের ভবিষ্যত নিয়ে বৈঠক শুরু

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়ায় আটক বিদেশী কর্মীদের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সোমবার আলোচনায় বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। আলোচনা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বৈধতার সুযোগ নিতে ব্যর্থ কর্মীদের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কি ঘটতে যাচ্ছে। তবে আভাস পাওয়া যাচ্ছে এ বৈঠকের মাধ্যমে অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার আরও এক দফা সময় বাড়তে পারে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পক্ষে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম আলোচনা বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানা যাবে আজ মঙ্গলবার। সোমবারের বৈঠকের কোন খবর আমরা নিজেরাই জানতে পারিনি। মালয়েশিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এ আলোচনার মধ্য দিয়ে ভাল কোন খবর পাওয়া যাবে। রবিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেছেন, মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশী কর্মীদের বিরুদ্ধে দেশটির সরকার অভিযান বন্ধ করেছে। কারণ তাদের দেয়া সময় অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত অবৈধদের বৈধতার জন্য সময় রয়েছে। কিন্তু তারা হঠাৎ করেই অভিযান শুরু করেছিল কি কারণে সেটা এখন পর্যন্ত আমরা জানি না। দেশটির কর্তৃপক্ষ যখন অবৈধ কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশী অভিযান শুরু করে তখন আমি দেশটিতে ব্যক্তিগত সফরে ছিলাম। এরপরও আমি হাইকমিশনারের মাধ্যমে দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার কথা বলি। হাইকমিশনারের আলোচনার প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ অভিযান বন্ধ করেছে। বাংলাদেশের মোট এক হাজার ৮শ’ কর্মী আটক হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। তবে সোমবার মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে ১৫ দেশের দূতাবাস ও হাইকমিশন আলোচনায় বসবে। আশা করছি মালয়েশিয়া সরকার বিষয়টি সমাধান করবে। তারা অবৈধ কর্মীদের বৈধ করার আরও এক দফা সুযোগ দেবে। মন্ত্রী রবিবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জনশক্তি রফতানি খাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফর বাংলাদেশী মাইগ্র্যান্টস (আরবিএম) আয়োজিত ‘মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে মালয়েশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এ কথা বলেন। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কর্মকর্তা সায়েদুল ইসলাম জানান, ‘সোর্স কাট্রি’গুলোর প্রতিনিধিরা মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। দীর্ঘ বৈঠক শেষ হতে স্থানীয় সময় সাতটা পার হয়ে যেতে পারে। এক বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত নাও হতে পারে, তাই আজকে তেমন কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে বিএমইটির ডিজি সেলিম রেজা জানিয়েছেন, বৈঠকের খবর পেতে সময় লাগবে। আমরা যতদূর খবর নিয়েছি, তাতে সেখানে ১৫ দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক চলছে। আশা করছি একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে। সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ হয়ে পড়া বিদেশী কর্মীদের বৈধতা দিয়ে অস্থায়ীভাবে কাজের সুযোগ নিশ্চিত করতে এনফোর্সমেন্ট কার্ড (ই-কার্ড) দেয়ার ঘোষণা দেয়। ওই কর্মসূচীতে নিবন্ধনের সময়সীমা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ৩০ জুন শেষ হয়েছে। মালয়েশিয়ার অভিবাসন দফতরের তথ্য অনুযায়ী, অবৈধ বিদেশী কর্মীদের মাত্র ২৩ শতাংশ ই-কার্ড নিতে পেরেছেন। বাকি ৭২ শতাংশ কর্মী অবৈধ হয়েই আছে। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন ১ জুলাই থেকে বিদেশী কর্মীবিরোধী ধরপাকড় শুরু করে। অভিযানে বাংলাদেশের ২ হাজারের বেশি কর্মী আটক হয়। বাংলাদেশের পরই রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। তারা ভ্রমণ ভিসায় কাজের অনুমতিপত্র ছাড়া মালয়েশিয়ায় পৌঁছান। আটক লোকজনকে দেশে ফেরত পাঠানোর আগে তাদের বিষয়ে তদন্ত করবে দেশটির কর্তৃপক্ষ। আটক বাংলাদেশীদের বিষয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কর্মকর্তা বলেন, আটক বাংলাদেশের নাগরিকদের তালিকা এখনও মালয়েশিয়া হাইকমিশনে দেয়নি। তাদের সংখ্যা শুধু গণমাধ্যমে শুনেছি। বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা চেয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে তালিকা দিতে পারে। ইতিমধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ই-কার্ড পূরণে ব্যর্থদের জন্য সময়সীমা আরও কিছুদিন বাড়াতে দেশটির কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অবৈধ কর্মী আটক অভিযানে শুধু বাংলাদেশ নয়, আরও কয়েকটি দেশের নাগরিকও আছেন। তাই সোমবারের বৈঠকে এখানকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্মিলিত আলোচনায় ইতিবাচক ফল পাওয়ার আশা করা যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি আটক লোকজনকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তে মালয়েশিয়া কঠোর অবস্থানে থাকে তাহলে পরিস্থিতি বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিতে হবে। এদিকে মালয়েশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত কয়েক দিন ধরে দেশটির সঙ্গে আলোচনার জন্য হাইকমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে। ই-কার্ড নিবন্ধনে ব্যর্থ আটক লোকজনের সমস্যা সুরাহার বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে যে কোন একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। আটক লোকজনের বৈধতার সুযোগ তৈরি করা যায় কিনা সে বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা করতে হবে। যাতে কোন কর্মী দেশে ফিরে না আসে। বৈধ অবৈধ সব কর্মীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হাইকমিশনকে কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী অভিযান চলাকালে বলেছেন, আটক লোকজনকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের অনুরোধে ওই সময়সীমা দুবার বাড়ানো হয়েছিল। এখন আর কোন সময় বাড়ানো হবে না। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বিদেশী কর্মীদের অবৈধ হয়ে পড়ে গ্রেফতারের জন্য নিয়োগকর্তাদের দায়ী করেছে। তাদের মতে, নিবন্ধনের বিষয়ে এসব দায়িত্বজ্ঞানহীন নিয়োগকর্তা কর্মীদের বিভ্রান্ত করেছেন। তাদের অনেকেই অবৈধ হয়ে পড়া কর্মীদের বিরূপ পরিস্থিতির সুযোগ লাগানোর জন্য এটা করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে তারা। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন বলেছে, ঢাকার অনুরোধে মালয়েশিয়ার ‘রিহায়ারিং কর্মসূচী’ নামে চালু কর্মসূচী এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। বাংলাদেশের যেসব নাগরিক বৈধ প্রক্রিয়ায় বিমানবন্দর দিয়ে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন, তারা বৈধতা বা সুযোগ নিতে পারবেন।
×