ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটিশ জঙ্গী ইমরান এখন বাংলাদেশে, খুঁজছে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৮ জুলাই ২০১৭

ব্রিটিশ জঙ্গী ইমরান এখন বাংলাদেশে, খুঁজছে পুলিশ

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গীগোষ্ঠীর সমর্থক ইমরান মিয়ার খোঁজ নিচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থা। ব্রিটেনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এ যুবক। ইমরান মিয়া নামের এ যুবক ব্রিটেন থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার মা আনোয়ারা বেগম। লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডেইলি মেইলের কাছে এ ধরনের তথ্য প্রকাশ করেছেন ইমরানের মা। এ ধরনের খবর প্রকাশের পর গোপন তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছেন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, পূর্ব লন্ডনের ম্যানোর পার্কের বাসিন্দা ইমরান মিয়া পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক। লন্ডন এবং এর বাইরে মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশকিছু স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। এর মাঝে তিনি তার ছদ্মনাম ব্যাবহার করেছেন ইবনে ফরিদ। ইবনে ফরিদ নামের ছদ্মনাম ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে কলুষিত এজেন্ডা প্রচার করেছেন তিনি। সেখানে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ধর্মীয় বিরোধীরা ধারালো ছুরি হামলার শিকার হবে। এছাড়া এক মর্মান্তিক পোস্টে তিনি সমকামীদের বর্বর মৃত্যুদ-ে সমর্থন দিয়েছেন। ইমরান মিয়ার সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে এ ধরনের প্রচারের পর সম্প্রতি লন্ডনে ছুরি হামলা চালানো হয়েছে এবং এক মুসলিম যুবক সমকামী বিয়ে করার ঘটনা ঘটেছে। এতে তাকে লন্ডনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা খোঁজ করছিল। এ কারণে তিনি বাংলাদেশে চলে আসার উদ্দেশে ব্রিটেন ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এ যুবক বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) একজন সমর্থক। তার বয়স ২৭ বছর। লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডেইলি মেইলের সাংবাদিকদের কাছে তার মা আনোয়ারা বেগম বলেছেন, এ যুবক এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এ ধরনের খবরের ভিত্তিতে আইএস সমর্থক এ যুবকের খোঁজ নিচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থা। ব্রিটেনের পুলিশও তার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। ইমরান মিয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করছেন, জঙ্গী হামলায় নিহতরা নরকের আগুনে পুড়বে। লন্ডনের ডেইলি মেইলে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, গত বছর প্যারিসের নিস শহরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করে একটি পত্রিকার প্রকাশিত রিপোর্টের নিচে ইমরান মিয়া লেখেন, আমাদের মৃতরা জান্নাতে (স্বর্গে) প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে তোমাদের মৃতরা নরকের আগুনে প্রবেশ করেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর পশ্চিমা সংস্কৃতিকে আক্রমণ করে এক পোস্টে ইমরান মিয়া লেখেন, সমকামীদের উঁচু ভবন থেকে নিচে ফেলা হবে। এরপর তাদের ওপর পাথর নিক্ষেপ করা হবে এবং কিভাবে সেটা করা হবে তার একটা ছবিও পোস্ট করেন তিনি। নিজেকে সুন্নি মুসলমান দাবি করে তিনি শিয়া মুসলামানদের ‘ধর্মত্যাগী’ বলে উপহাস করেছেন এবং এ ধরনের মুসলমানরা ধারালো ছুরি হামলার সম্মুখীন হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন। এমনকি ফেসবুকে জঙ্গীগোষ্ঠীর জয়লাভের ছবির পাশাপাশি ইমরান মিয়া ওই গোষ্ঠীর কালো পতাকার ছবি আপলোড করেছেন এবং তাদের হাতে যারা নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেন সেসব মানুষের সম্মানে আয়োজিত নীরবতা নিয়েও উপহাস করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা যিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশী সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদ বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন তিনি বলেন, লন্ডনভিত্তিক ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন সাংবাদিক ওমর ওয়াহিদ ও কলিন কোর্টবাস। এ দুই সাংবাদিক গত শনিবার রাতে ইমরানের খোঁজখবর নিতে ইমরানের মা আনোয়ারা বেগমের কাছে যান। আনোয়ারা বেগম বলেন, তার ছেলে ইমরান ৩-৪ দিনের জন্য দেশের বাইরে গেছে। প্রথমে মিসরের কথা বলেন তিনি। পরে আনোয়ারা বেগম বলেন, সে (ইমরান মিয়া) তার নিজের দেশ বাংলাদেশে ফিরে গেছে। ইমরান সম্প্রতি একটি হাসপাতালে কাজ নিয়েছে বলে তার মা আনোয়ার বেগমের দাবি। এরপর থেকে আইএস সমর্থক ইমরান মিয়ার অবস্থান নির্নয় ও তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
×