ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সিনিয়র মন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী;###;কোন ষড়যন্ত্রই নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না

আগামী জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ॥ বানচালের ষড়যন্ত্র

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৮ জুলাই ২০১৭

আগামী জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ॥ বানচালের ষড়যন্ত্র

তপন বিশ্বাস ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে। দেশে বিশেষ একটি মহলের এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হতে দেয়া হবে না। অরাজনৈতিক সরকার আসলে তারা নানা সুবিধা নেয়। কোন ষড়যন্ত্রই নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না। আমরা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাই। এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনও কাজ শুরু করেছে। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছন। সূত্র জানায়, বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তিনি আর দেশে ফিরবেন কি না সন্দেহ আছে। তার মামলার রায়ের দিনও ঘনিয়ে আসছে। তিনি এতিমের টাকা মেরেছেন। তাই সাজার ভয়ে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে না হয়, সেজন্য একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে- এমন শঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অরাজনৈতিক সরকার আসলে একটি মহলের নানা সুবিধা হয়। আবার অনির্বাচিত সরকারও ওই মহলটি ছাড়া চলতে পারে না। তবে আমরা কোন ভয়ে ভীত নয়। সবাইকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। সংবিধানের বিধিবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে। বৈঠক সূত্র আরও জানায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার হঠাৎ যুক্তরাজ্যে চলে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মন্ত্রিসভার একাধিক সিনিয়র সদস্য। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উনি আর দেশে আসবেন কীনা জানি না। মামলার ভয়ে হয়ত বিদেশে পালিয়েছেন। উনি (খালেদা জিয়া) এতিমদের টাকা-পয়সা মেরেছেন, দুর্র্নীতি করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে, এজন্য তার সাজাও হতে পারে। এই মামলার ভয়েই হয়ত তিনি পালিয়ে গেছেন। তিনি পালিয়ে গেলে অতীতে দেশে নানা ঘটনা ঘটেছে। আগে দেশ ত্যাগের পর পিলখানায় বিডিআরের ঘটনার ঘটে। দেশবাসীকে দেখাতে চান, বড় কোন ঘটনার সময় তিনি দেশে ছিলেন না। অথচ পেছনে থেকে তিনিই ইন্দন দেন। জানা গেছে, মন্ত্রিসভায় গত ১৬ জুলাই নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) নিয়ে আলোচনা হয়। এতে অংশগ্রহণ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীসহ মন্ত্রিসভার কয়েকজন সিনিয়র সদস্য। নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সংবিধানের আলোকে যথাসময়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। কীভাবে নির্বাচন হবে সেটা সংবিধানেই বলা আছে। এটা নির্বাচন কমিশনই দেখবে। তারা তাদের মতো করে কাজ করছে। এ নিয়ে আমাদের কথা বলার দরকার নেই। পক্ষে-বিপক্ষে মতামত ব্যক্ত করারও প্রয়োজন নেই। কিছু মানুষ আছে তারা চান নির্বাচন যাতে না হয়। নির্বাচন না হলে আর অনির্বাচিত ব্যক্তিরা ক্ষমতায় আসলে তারা ক্ষমতার ভাগ পায়। সরকার প্রধান আরও বলেন, আমরা চাই সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসুক। সব দল নির্বাচনে এলে ভাল হয়; নির্বাচন অধিকতর গ্রহণযোগ্য হয়। কিন্তু কোন দল যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপি নামক দলটি যদি আরেকবার ক্ষমতায় আসে তাহলে দেশে পাকিস্তানী ভাবাদর্শ পূর্ণপ্রতিষ্ঠা হবে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দেবেন। এজন্য বিএনপিকে আমরা বিরোধীদল হিসেবেও দেখতে চাই না। মন্ত্রিসভার অপর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ নিয়ে সবাইকে সতর্ক হয়ে কথা বলতে হবে। আবার দলের সভাপতি হিসেবে আমিও সব সময় কথা বলতে পারি না। তাই ইসির রোডম্যাপ নিয়ে দলের অবস্থান জানাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে কথা বলার দায়িত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেছেন, এই রোডম্যাপ বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা দেখতে হবে। এজন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন। এদিকে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে রোডম্যাপ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সচিবালয়ে নিজ দফতরে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের যে বক্তব্য সেটা হচ্ছে এই রোডম্যাপটি বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখে আমরা কথা বলব। তারা যা বলেছেন তা রোডম্যাপ। আমরা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটা দেখতে চাই। একাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রভাবমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে দেড় বছরের কর্মপরিকল্পনা গত রবিবার প্রকাশ করেছে কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি। তবে বিএনপি মনে করছে, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে চলমান সঙ্কটের সমাধান হবে না। এ বিষয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কোন আলোচনা না করে এই রোডম্যাপ দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে বলেন, একজন মামলার ভয়ে বিদেশ থেকে আসে না, কতদিন হয়ে গেলে তিনি আর আসেন না। আরেকজন আবার টেমস নদীর পারে গেলেন। উনি যাচ্ছেন, আমাদের এ বিষয়ে আপত্তি বা মন্তব্য থাকার কথা নয়। তবে খালেদা জিয়া নাও ফিরতে পারেন এমন জনশ্রুতি রয়েছে। গত শনিবার থেকে ফেসবুকে দেখছি, টুইটারে দেখছি তার স্ট্যাটাস, এত বেশি সময়ের জন্য একটি বড় দলের চেয়ারপার্সন বিদেশে যাচ্ছে, এখন জনশ্রুতি হচ্ছে তিনি কি মামলার ভয়ে পালিয়ে গেলেন, তিনি কি মামলার ভয়ে ফিরে আসবেন না। মামলায় ১৫০ বার আদালতে সময় চাওয়ার পর এই সন্দেহটা ঘনীভূত হচ্ছে, জনগণের মধ্যে এই গুঞ্জনটা শাখা-প্রশাখা বিস্তার করছে। যুুুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে খালেদা জিয়া নির্বাচনী রোডম্যাপ বা সহায়ক সরকার গঠনের বিষয়ে ঘোষণা দিতে পারেন- এমন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার মতো ওই ওয়ান ইলেভেনের সময় সাহস করে তিনি ফিরে আসবেন কীনা, মামলার ভয়ে সময় আবার বর্ধিত হবে কীনা, ফিরে আসার বিষয় সেটা কেবল সময়ই বলে দেবে।
×