ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এমপি বললেন শুধু ডিও দিয়েছি

এমপির বিরুদ্ধে বিএনপি জামায়াত পরিবারকে পুনর্বাসনের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৮ জুলাই ২০১৭

 এমপির বিরুদ্ধে বিএনপি জামায়াত পরিবারকে পুনর্বাসনের অভিযোগ

আজিজুর রহমান ডল, জামালপুর থেকে ॥ আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল হক খানের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত পরিবারকে সরকারী-বেসরকারী চাকরি পাইয়ে দেয়াসহ পুনর্বাসনের অভিযোগ উঠেছে। তার প্রভাবে বঞ্চিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিষয়টি টক অব দ্যা ইসলামপুরে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের বঞ্চিত ও বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন বলে দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। জানা গেছে, এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তারের জন্য ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউল হক জিয়াকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পরাজিত করে সংসদ সদস্যের শ্যালক উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুলকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। ফলে উপজেলা পরিষদের সমস্ত উন্নয়ন কর্মকা- এই দুই জনপ্রতিনিধির যোগসাজশে হয়ে আসছে। ফলে একদিকে দুর্নীতি হচ্ছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছে। সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলাল একাধারে ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির একক প্রভাব খাটিয়ে পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকছুদুর রহমান আনছারীকে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জুবাইদুর রহমান দুলালকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক এবং তার নিজস্ব ইউনিয়নের ছয় রাজনৈতিক পরিচয়বিহীন লোককে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়াও ফরিদুল হক খান দুলাল গত নির্বাচনে দ্বিতীয় দফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি নিজের আখের গোছাতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ক্ষমতার দাপট ও প্রভাব খাটিয়ে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ দখল করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র জিয়াউল হক জিয়াসহ বিএনপি-জামায়াত জোটবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে যারা সক্রিয় ছিলেন, নির্যাতিত হয়েছেন এবং জেল জুলুম ভোগ করেছেন এরকম অনেক ত্যাগী নেতাকে সংগঠনের কোন পর্যায়ে দায়িত্ব না দিয়ে দলকে সাংগঠনিক শক্তির মূলে কুঠারাঘাত করেছেন। অভিযোগে আরও জানা যায়, দলীয় উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্ট না করে তার পছন্দের লোক দিয়ে সব কার্যক্রম করে থাকেন। টিআর, কাবিটার অর্থ সারা উপজেলায় সমবণ্টন না করে শুধু ইসলামপুর পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডে তার পছন্দের লোকদের প্রকল্প বরাদ্দ দিয়ে সুবিধা ভোগ করে আসছেন। প্রতি বছর খাদ্য অধিদফতরের সংগ্রহ মৌসুমে ধান, চাল ও গম সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে না কিনে তার আস্থাভাজন লোকের মাধ্যমে বরাদ্দপত্র ডিলারদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে সুবিধা ভোগ করে থাকেন। এছাড়াও তিনি প্রতি বছর তার বরাদ্দের ঐচ্ছিক তহবিলের টাকা দুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের না দিয়ে তার নিজের লোকদের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে আত্মসাত করে আসছেন বলেও নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে দুই দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চাকরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা না করে তিনি তার নির্বাচনী এলাকার বিএনপি-জামায়াত পরিবারের ৭৪ লোকের সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন পর্যায়ে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বর্তমান সরকারের আমলেও তিনি ইসলামপুর উপজেলার বিএনপি-জামায়াতপন্থী ছয়টি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করেছেন। তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও সুপারিশে জামায়াতের আমির ছামিউল হক ফারুকীর ভাই সোলাইমানের চাকরি হয়েছে উলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে, জামায়াতের সদস্য মোঃ হযরত আলীর দুই মেয়ে নুরেজা আক্তার ও ডলি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা পদে, বেলগাছা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ আলীর মেয়ে মোছাঃ মেরিনের চাকরি হয়েছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা পদে। এভাবে ৭৪ জন বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সদস্যকে স্থানীয়ভাবে এবং বিভিন্ন দফতরে সরকারী চাকরি পাইয়ে দিয়ে সুবিধা ভোগ করেছেন। এ নিয়ে এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পরিবারে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তিনি বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপি-জামায়াতপন্থী যে ছয়টি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করিয়ে সুবিধা ভোগ করেছেন সেগুলো হলো- বীর মাইজবাড়ি মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, কান্দারচর দাখিল মাদ্রাসা, কুমিরদহ উচ্চ বিদ্যালয়, সভারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাছিমারচর উচ্চ বিদ্যালয় ও গোয়ালেরচর ফারাজিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়। এছাড়াও ইসলামপুর ডিগ্রী কলেজ সরকারীকরণের আগ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে এই কলেজে ২০০ শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য করে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, ফেসবুকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তিকারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিএনপি কর্মী আবির আহাম্মেদ বিপুলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলায় পলাতক থাকার পরও সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খানের নিকটাত্মীয় হওয়ার কারণে বহাল তবিয়তে চাকরি করে আসছেন। ওই বিএনপি কর্মীর স্ত্রী ডেইজী আক্তারকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে হিসাব সহকারী পদে চাকরিও পাইয়ে দিয়েছেন সংসদ সদস্য। বর্তমানে ওই নারী জামালপুর গণপূর্ত অধিদফতরে কর্মরত রয়েছেন। ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ইসলামপুর ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহাম্মেদ তার কলেজের শিক্ষক নিয়োগ প্রসঙ্গে বলেন, এমপি সাব বিধিমোতাবেক শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। কোন অনিয়ম করা হয়নি। সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলালের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে ইসলামপুর পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কাদের শেখ বলেছেন, সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলাল সরকারী-বেসরকারী চাকরিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যদের চাকরি না দিয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের চাকরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া অব্যাহত রাখায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দ্বিধাবিভক্তি ও নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ তিন-চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলাল তার বিরুদ্ধে উঠা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকারী চাকরিতে নিয়োগ দেয় সরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তিও দেয় সরকার। আমার কোন ক্ষমতা নেই। আমি শুধু ডিও দিয়েছি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
×