ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে যুগোপযোগী শিক্ষা অর্জনে সুফল মিলছে না

অধিকাংশ স্কুল মাল্টিমিডিয়া সুবিধার বাইরে

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১৮ জুলাই ২০১৭

অধিকাংশ স্কুল মাল্টিমিডিয়া সুবিধার বাইরে

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ জেলায় মোট এক হাজার ২৮৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ১৭১টিতে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া সুবিধা। এ হিসাবে জেলায় ৮৭ শতাংশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ই এখনও মাল্টিমিডিয়া সুবিধার বাইরে। যশোর জেলা দেশের প্রথম ডিজিটাল জেলা হিসেবে পরিচিত। অথচ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সেই ছোঁয়া লাগেনি। যশোর উপশহর এলাকায় অবস্থিত শহীদ স্মরণি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ হয় ১৯৮৩ সালে। বর্তমানে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৪৭ জন। মণিরামপুর উপজেলার কামালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৮ সালে। বর্তমানে এখানে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৩১ জন। প্রায় ৫ দশকের পুরনো এ দুটি বিদ্যালয়ে পাঠদান হচ্ছেÑ এখনও সাবেকি পদ্ধতিতে। পাঠদানের সর্বাধুনিক পদ্ধতি মাল্টিমিডিয়া সুবিধা এখনও পৌঁছায়নি বিদ্যালয়গুলোতে। শহীদ স্মরণি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহাজাদ হোসেন জানান, তিনি সম্প্রতি মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। সেখানে দেখেছেন সব বিদ্যালয় মাল্টিমিডিয়িাভুক্ত। সেখানে শিক্ষার্থীরা আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষা নিচ্ছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। এ অবস্থা শুধু ওই দুটি বিদ্যালয়ে নয়, যশোর জেলার এক-তৃতীয়াংশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ই এখনও মাল্টিমিডিয়া সুবিধার বাইরে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২৫০টি, এর মধ্যে মাল্টিমিডিয়া রয়েছে ১৯টিতে। অভয়নগর উপজেলায় বিদ্যালয় রয়েছে ১১৫টি, মাল্টিমিডিয়া রয়েছে ২১টিতে। কেশবপুর উপজেলায় বিদ্যালয় আছে ১৫৮টি, মাল্টিমিডিয়া রয়েছে ১৮টিতে। চৌগাছায় বিদ্যালয় রয়েছে ১৩৯টি, মাল্টিমিডিয়া আছে ১৯টিতে। ঝিকরগাছায় বিদ্যালয় সংখ্যা ১৩১টি, মাল্টিমিডিয়া সুবিধা রয়েছে ৪৬টিতে। বাঘারপাড়ায় বিদ্যালয় আছে ১০২টি, মাল্টিমিডিয়া আছে ১৮টিতে। মণিরামপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২৬৬টি, মাল্টিমিডিয়া সুবিধা ভোগ করছে ১৮টি এবং শার্শা উপজেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১২৬টি, এর মধ্যে মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেয়া হয় মাত্র ১২টিতে। জানা গেছে, পাঠদান পদ্ধতিকে আরও যুগোপযোগী ও আনন্দময় করতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতি চালু করা হয়। প্রাথমিক স্তর থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমিয়ে আনাও এর আরেক উদ্দেশ্য। এছাড়া চার বছর আগে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় চালু করা হয় ই-বুকসেবা। পাঠ্যপুস্তকের বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করতে এরই মধ্যে চালু হয়েছে ডিজিটাল কনটেন্ট। অথচ তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা উপকরণের অভাবে যশোর জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো মাল্টিমিডিয়াভিত্তিক এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যেসব বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়ার আওতায় তাদেরও রয়েছে সঙ্কট। অর্থাৎ এসব বিদ্যালয়ের অনেকগুলোয় কম্পিউটার থাকলেও প্রজেক্টর নেই। যশোর জেলার বিদ্যালয়ে কম্পিউটার না পৌঁছার বিষয়টি স্বীকার করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, শুধু যশোর নয়, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বড় অংশে এখনও মাল্টিমিডিয়াভিত্তিক পাঠদান চালু সম্ভব হয়নি। কিছু বিদ্যালয়ে এখনও বিদ্যুৎসেবাও পৌঁছায়নি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আমরা প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যালয়গুলোয় মাল্টিমিডিয়া সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করছি। তথ্যপ্রযুুক্তির উৎকর্ষের যুগে সারা বিশ্বেই শিক্ষা ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে কম্পিউটারভিত্তিক মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার। জাতীয় শিক্ষানীতিতেও শিক্ষা ব্যবস্থায় কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায়ও (এসডিজি) সবার জন্য টেকসই গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অথচ যশোর জেলার ৮৭ শতাংশ বিদ্যালয়েই এখনও কম্পিউটার পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এ অবস্থাকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছেন শিক্ষা খাতের বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে যশোর বিজ্ঞাণ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশেও তথ্যপ্রযুুক্তিভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল আবশ্যক। শিক্ষকদের আইটি বিষয়ে দক্ষতার অভাবে অনেক সময় কম্পিউটার, প্রজেক্টরসহ অন্য উপকরণ ব্যবহার হয় না। তাই সবার আগে শিক্ষকদের ই-বুক, ডিজিটাল কনটেন্টসহ আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান জরুরী। কারণ শিক্ষকরাই এসব সুবিধাদি শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করবেন।পাঠদান পদ্ধতিকে যুগোপযোগী করতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রণীত প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজী, গণিত, বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়বিষয়ক ১৭টি বইয়ের ইন্টারএ্যাক্টিভ মাল্টিমিডিয়া ডিজিটাল শিক্ষা কনটেন্ট তৈরি করা হয়। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক, ব্যাকরণ ও উচ্চারণ বিশেষজ্ঞ, কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, শিশুমনোবিদ, এ্যানিমেশন বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নেয়া হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এখনও মাল্টিমিডিয়া সুবিধার আওতার বাইরে রয়েছে। আবার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পৌঁছালেও এসব ব্যবহারে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই এর সুফল পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার অধিকারী বলেন, মাল্টিমিডিয়া পাঠদান ক্লাসে বৈচিত্র্য এনেছে। আমাদের এখানে সব স্কুলে মাল্টিমিডিয়াভুক্ত করা যায়নি। সরকার ইতোমধ্যে ৫০ হাজার ল্যাপ্টপ ক্রয় করেছে। আশা করছি, শীঘ্রই যেসব স্কুলে বিদ্যুত আছে সেখানে ল্যাপ্টপ দিতে পারব।
×