ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন ৪২ অর্থনৈতিক জোনে বিদ্যুত সংযোগ শুরু করেছে আরইবি

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ১৭ জুলাই ২০১৭

নতুন ৪২ অর্থনৈতিক জোনে বিদ্যুত সংযোগ শুরু করেছে আরইবি

রশিদ মামুন ॥ সারাদেশের নতুন ৪২ অর্থনৈতিক জোনে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। সরকারী ৩৩ অর্থনৈতিক জোনের পাশাপাশি রয়েছে নয়টি বেসরকারী অর্থনৈতিক জোন। সরকার সারাদেশে নতুন যে ১০০ অর্থনৈতিক জোন নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে এই ৪২ তারই অংশ। আরইবিতে শিল্প গ্রাহকের সংখ্যা সব থেকে কম, মাত্র এক ভাগ। প্রায় ৯০ শতাংশ আবাসিক গ্রাহকের বিতরণ সংস্থায় এতে করে শিল্প গ্রাহক বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বছরভিত্তিক বিদ্যুত চাহিদা নির্ধারণ করে গ্রীড লাইন এবং উপকেন্দ্র নির্মাণ শুরু করেছে আরইবি। সংস্থাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, সারাদেশের ১০০ অর্থনৈতিক জোনের মধ্যে ৪২টির বিষয়ে আরইবি কাজ শুরু করেছে। অন্যগুলোর কাজ শীঘ্রই শুরু করা হবে। তিনি জানান, এসব জোন চালু হলে রুগ্ন পল্লী বিদ্যুত সমিতি উপকৃত হবে। বেশি দামে বিদ্যুত কিনে কম দামে আবাসিক গ্রাহকের কাছে বিক্রি করায় অনেক দিন থেকে লোকসান গুনছে পল্লীবিদ্যুত সমিতিগুলো। গ্রাহক শ্রেণীর মধ্যে আরইবির মাত্র এক ভাগ শিল্প, ছয় ভাগ বাণিজ্যিক। এই সাত ভাগের কাছেই কিছুটা লাভে বিদ্যুত বিক্রি করা সম্ভব। বাকি ৯৩ ভাগ গ্রাহকের মধ্যে ৯০ ভাগ আবাসিক, দুই ভাগ সেচ এবং এক ভাগ দাতব্য গ্রাহক। আবাসিকের ৯০ ভাগ গ্রাহকের মধ্যে বেশিরভাগই মাসে ১০০ ইউনিটের নিচে বিদ্যুত ব্যবহার করে। এতে করে এক কোটি ৯২ লাখ গ্রাহকের বেশিরভাগের কাছ থেকে মুনাফা করতে পারে না পল্লী বিদ্যুত সমিতি। তবে ৪২ পল্লী বিদ্যুত সমিতি এলাকায় ৪২ টি অর্থনৈতিক জোন চালু হলে সমিতিগুলো লাভ-ক্ষতির সমতা বিন্দু (ব্রেক ইভেন পয়েন্ট) চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করছেন আরইবির কর্মকর্তারা। সঙ্গত কারণে এসব শিল্প এলাকায় বিদ্যুত সংযোগ প্রদানের জন্য বিশেষ আগ্রহীও তারা। এখন সারাদেশে ৮০টি পল্লী বিদ্যুত সমিতি (পিবিএস) রয়েছে এরমধ্যে নয়টি ছাড়া অন্যরা লোকসান গুনছে। কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরেও ১৫টি পিবিএস লাভ করেছে। আরইবির এক কর্মকর্তা জানান, অর্থনৈতিক জোনগুলোতে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ শিল্পায়ন হলেও পিবিএসগুলো ব্রেক ইভেনের মুখ দেখতে পারে। কাজ শুরু হওয়া ৪২ অর্থনৈতিক জোনের মধ্যে নয়টিতে প্রাথমিকভাবে সংযোগ দিয়েছে আরইবি। এগুলো হচ্ছে মীরসরাই, আনোয়ারা, মংলা, বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি পার্ক, এপিআই শিল্পপার্ক, আব্দুল মোনেম, একে খান, আকিজ এবং বে অর্থনৈতিক অঞ্চল। বৈদ্যুতিক অবকাঠামো নির্মাণ চলেছে ছয়টি অর্থনৈতিক জোনে। এসব জায়গাতে ৩৩ কেভি, ১১ কেভি গ্রীড এবং ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে মীরসরাই, বঙ্গবন্ধু সিটি হাইটেক পার্ক, এপিআই শিল্প পার্ক, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, নাফ ট্যুরিজম পার্ক ও জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল। এছাড়া ৪২ অর্থনৈতিক অঞ্চলই বেজার চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত সংযোগ প্রদানের জন্য পিজিসিবি এর ২২টি ১৩২/৩৩ কেভি গ্রীড উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এর বাইরে দশটি গ্রীড উপকেন্দ্রের বিদ্যমান ক্ষমতা উন্নয়ন করা হচ্ছে বলে আরইবি চেয়ারম্যান একটি উপস্থাপনায় জানান। আরইবি বলছে, তিন ধাপে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুত সরবরাহের লক্ষ্য দিয়েছে আরইবি। গত বছর থেকেই কোন কোন শিল্প এলাকায় প্রাথমিক সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। মূলত ভূমি উন্নয়ন এবং অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে এসব জায়গাতে। গত অর্থবছর এবং চলতি অর্থবছর মিলিয়ে ৪২টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হবে। এরপর ২০১৮ সাল থেকে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনের কাজ শুরু হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আশা করছে ২০২৫-এর মধ্যে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে শতভাগ শিল্পায়ন ঘটবে। এজন্য কর অব্যাহতি ছাড়াও নানা প্রণোদনা প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আরইবির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী এখানে শতভাগ শিল্পায়ন হলে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হবে। এরমধ্যে সরকারী ৩১টি শিল্প পার্কের জন্য দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট এবং বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর জন্য প্রয়োজন হবে ৫২৭ মেগাওয়াট। বর্তমানে দেশে ২১ অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে এ সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বিনিয়োগে গতি আনতে অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সরকার বৃহৎ শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র এবং মাঝারি এবং শ্রমঘন শিল্প গড়ে তোলার ওপর জোর দিচ্ছে। দেশের যে অঞ্চলে যে পণ্য উৎপাদন সহজ এবং চাহিদা রয়েছে, সেসব এলাকায় সেই শিল্পে কারখানাকে প্রাধান্য দেয়া হবে। দেশের ঢাকা এবং আশপাশের জেলাগুলোর বেশিরভাগ শিল্প উদ্যোক্তারাই গ্যাসভিত্তিক ক্যাপ্টিভ জেনারেটর ব্যবহার করে বিদ্যুত উৎপাদন করে। কিন্তু পেট্রোবাংলাই বলছে ২০২০-এর পরে দেশের গ্যাস সরবরাহ অনেককাংশে কমে যাবে। এ সময় ক্যাপটিভ কেন্দ্রগুলোও আর গ্যাস পাবে না। আমদানি করা এলএনজির বেশিরভাগই ব্যবহার হবে সরকারী এবং বেসরকারী বিদ্যুত উৎপাদনে। তখন এসব শিল্পও গ্রীডের বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকবে। তখন শিল্পে বিদ্যুতের চাহিদাও অনেকটা বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে শিল্পে বিদ্যুত যোগানের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করতে হবে।
×