ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আলোকচিত্রে নিসর্গবেষ্টিত পাহাড়ী জীবনের গল্প

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৭ জুলাই ২০১৭

আলোকচিত্রে নিসর্গবেষ্টিত পাহাড়ী জীবনের গল্প

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিসর্গ যেন তার সবটুকু রূপ ছড়িয়ে দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। মায়াবী প্রকৃতির উচ্চকিত প্রকাশে এই ভূখ- হয়ে উঠেছে সৌন্দর্যের লীলাভূমি। নিসর্গের নান্দনিকতার সঙ্গে মিলেমিশে আছে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর যাপিত জীবন। বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির সেই আদিবাসী জীবনধারার সঙ্গে প্রকৃতির সংযোগ উঠে এসেছে ফ্রেমে ফ্রেমে। প্রতিটি ছবি বলে যায় নিসর্গের সঙ্গে জীবনের বন্ধনের কথা। সেসব ছবি নিয়ে ধানম-ির দৃক গ্যালারিতে শুরু হলো ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম : মানুষ ও প্রকৃতি’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জাতিসত্তার জীবনচিত্র এসেছে রবিবার থেকে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীতে। ইউএনডিপি এবং বাংলাদেশ এ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর উদযাপন উপলক্ষে তিনদিনের এ প্রদর্শনীর আয়োজন। রবিবার বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশে সিং ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা। প্রদর্শনীতে ৪৪ আলোকচিত্রীর ক্যামেরাবন্দী ছবিসহ ১০০টি আলোকচিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রদর্শনীর সমন্বয়ক মৃধা শিহাব বলেন, ফেসবুকে ছবি আহ্বান করা হয়েছিল সেখানে প্রায় ৯০০ ছবি জমা পড়ে। সেখান থেকে ৪৪ জনের ৫০টি ছবি স্থান পেয়েছে এ প্রদর্শনীতে। আর গত এক বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার যত রকমের কর্মকা- পরিচালনা করেছে সেসব অনুষ্ঠানের ৫০টি ছবি স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। এসব ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রকাশ চাকমার খাগড়াছড়ির ধর্মীয় উৎসব, নিদাল আদনানের নারীর ক্ষমতায়ন, মনিরুজ্জামান সজলের দৈনন্দিন দিনলিপি, মং চেনের আখের খেত, রায়হান জাহানের স্বর্গের পথ, সাব্বির আহমেদের মেঘের সঙ্গে খেলা, শামস আল আরেফিনের দুই পাহাড়ের মাঝে শাম্পান প্রভৃতি। তিন দিনের এ প্রদর্শনী শেষ হবে কাল মঙ্গলবার। বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। স্মরণে সাযযাদ কাদির ও শান্তনু কায়সার এক আয়োজনে স্মরণ করা হলো কবি সাযযাদ কাদির এবং প্রাবন্ধিক ও গবেষক শান্তনু কায়সারকে। দুই গুণীজনকে নিবেদিত এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। রবিবার বিকেলে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন কবি ফারুক মাহমুদ, ড. আহমেদ মাওলা, ড. তারেক রেজা ও কবি পিয়াস মজিদ। সভায় সূচনা বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। এছাড়া স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন চিত্রশিল্পী হাশেম খান, সঙ্গীতশিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, লেখক সুব্রত বড়ুয়া, কবি মাকিদ হায়দার, আলোকচিত্রশিল্পী এম এ তাহের এবং শান্তনু কায়সার ও সাযযাদ কাদিরের পরিবারের সদস্যবৃন্দ। দুই বরেণ্য ব্যক্তিত্ব প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, কবি সাযযাদ কাদির কবিতাসহ বহুমাত্রিক লেখালেখিতে স্বাতন্ত্র্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। কবিতায় নিরীক্ষামগ্নতা এবং বিশ্বসাহিত্য বিষয়ে উদ্ভাবনাময় গদ্যচর্চায় তিনি অনন্যতার পরিচয় দিয়েছেন। অন্যদিকে শান্তনু কায়সার ছিলেন একজন মৌলিক চিন্তার প্রাবন্ধিক ও গবেষক। অদ্বৈত মল্লবর্মণ, মীর মশাররফ হোসেন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়ে তার প্রবন্ধ-নিবন্ধ আমাদের গবেষণা-ভুবনকে সমৃদ্ধ করেছে। নাট্যচর্চা ও অনুবাদেও ছিল তার স্বচ্ছন্দ বিচরণ। আলোচকরা বলেন, শান্তনু কায়সার ও সাযযাদ কাদিরের প্রয়াণে বাংলাদেশের সাহিত্যক্ষেত্র দু’জন গুণী নিবেদিতপ্রাণ সাহিত্যসেবীকে হারাল। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সাযযাদ কাদির ও শান্তনু কায়সার উভয়েই ছিলেন অঙ্গীকারাবদ্ধ মানুষ। নিজেদের পেশাগত বৃত্ত ছাপিয়ে সাহিত্যকে তারা আজীবন চর্চার বিষয় নির্বাচন করেছেন। সাহিত্যচর্চার সমান্তরালে জনমানুষের মুক্তির আকাক্সক্ষাকে তারা তাদের সৃষ্টিকর্মে নানামাত্রায় ভাস্বর করেছেন। অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, শান্তনু কায়সার ছিলেন একজন ভিন্নমাত্রার প্রাবন্ধিক ও গবেষক। বক্তব্য-বিষয়ের পাশাপাশি ভাষার লাবণ্যে তার গদ্যচর্চা এক নতুন ধারার উন্মোচক। অন্যদিকে কবি সাযযাদ কাদির তার কবিতা, গদ্যচর্চা এবং সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। সুরস্রষ্টা আবদুল আহাদের গান ও আলোচনা ‘আমার দেশেরও মাটির গন্ধে ভরে আছে মন...’ কালজয়ী এমন অনেক গানের সুর করেছেন সুরস্রষ্টা আবদুল আহাদ। গানে সুরারোপের পাশাপাশি ঘরে ঘরে সঙ্গীতচর্চার প্রসার ঘটানোর ক্ষেত্রেও রেখেছেন অনন্য অবদান। এ দেশে রবীন্দ্রনাথের গানের প্রচার ও চর্চায় প্রথম দিকের উদ্যোক্তাদেরও একজন সঙ্গীত গুণী। রবিবার সন্ধ্যায় আবদুল আহাদের সুরারোপিত গানে গানে ও আলোচনায় স্মরণ করা হলো তাকে। শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। একাডেমির সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় এবং মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, আবদুল আহাদ ও হামিদা খানম স্মৃতি পরিষদের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় এ স্মরণানুষ্ঠান। সুরস্রষ্টা আবদুল আহাদকে নিয়ে আলোচনা করেন গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিশাত জাহান রানা। সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। আলোচনা শেষে ছিল সঙ্গীতানুষ্ঠান। এ পর্বে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী ফাহিম হোসেন ও রোকাইয়া হাসিনা। আর আবদুল আহাদ সুরারোপিত গান পরিবেশন করেন ঝর্ণা সরকার, আরিফুর রহমান তীমুন, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি, সুজিত মোস্তফা ও নাশিদ কামাল।
×