ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাহফুজ ও রাজীব গান্ধীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আজ আসছে এনআইএ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৭ জুলাই ২০১৭

মাহফুজ ও রাজীব গান্ধীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আজ আসছে এনআইএ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনাকারী ও অস্ত্র যোগানদাতা সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা নসরুল্লা ও শীর্ষ জঙ্গী নেতা রাজীব গান্ধীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার ঢাকায় আসছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআই)। তিন দিনের সফরে এসে এই দুই জঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় অবস্থানকারী কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের (এসটিএফ) তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবির প্রধান তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিন জঙ্গী নারায়ণগঞ্জে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার প্রায় ১১ মাস পর তাদের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। পুলিশের উচ্চ পর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশের উচ্চ পর্যায় সূত্র জানায়, দুর্ধর্ষ জঙ্গী সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজের বিষয়ে তথ্য নিয়েছে এসটিএফ। কয়েক বছর মাহফুজ ভারতে পালিয়ে জেএমবির শীর্ষ নেতা হিসেবে তৎপর ছিল। বর্ধমানের খাগরাগড় বিস্ফোরণ (অক্টোবর ২০১৪) মামলার মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি সে। এ ছাড়া রাজীব গান্ধীও ভারতে অবস্থানরত জঙ্গীদের সম্পর্কে অনেক কিছুই অবগত। এই দুই জঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা ছাড়াও কলকাতার এসটিএফ প্রতিনিধি দল পুলিশ সদর দফতর ও কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসির) কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। জঙ্গী তৎপরতা মোকাবেলায় বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা ও পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদানের কার্যক্রমে তারা মত বিনিময় করেছেন। কলকাতার এসটিএফ প্রতিনিধি দলটি সোমবার রাতে কিংবা মঙ্গলবার সকালে কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবে। তিন দিনের সফরে এসে এসটিএফ প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ ও ভারতের জঙ্গীদের মধ্যে এখনও কারা কিভাবে কোথায় আত্মগোপন করে তৎপরতা চালাচ্ছে সেই বিষয়ে দুই জঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন। বৈঠকে উভয় দেশে জঙ্গী তৎপরতার সার্বিক বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে উগ্রবাদী তৎপরতার সঙ্গে ভারতীয় যেসব জঙ্গীর নানা পর্যায়ে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিষয়ে তথ্য বিনিময় হয়। বাংলাদেশের যেসব জঙ্গী পশ্চিমবঙ্গে উগ্রপন্থী তৎপরতায় জড়িত বলে বিভিন্ন সময় তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের নিয়েও কথা হয়েছে। সম্প্রতি গ্রেফতার দুর্ধর্ষ জঙ্গী সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজের বিষয়ে তথ্য নিয়েছে এসটিএফ। কয়েক বছর মাহফুজ ভারতে পালিয়ে জেএমবির শীর্ষ নেতা হিসেবে তৎপর ছিল। বর্ধমানের খাগরাগড় বিস্ফোরণ (অক্টোবর ২০১৪) মামলার অন্যতম আসামিও সে। তাকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ রুপী পুরস্কার ঘোষণা করে ভারত সরকার। এর আগে দেশটির জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) প্রতিনিধিরাও জঙ্গী সোহেল মাহফুজকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে আসছেন। এসটিএফ প্রতিনিধিরা মিন্টো রোডে সিটিটিসির কার্যালয়ে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তারা সিটিটিসির হেফাজতে রিমান্ডে থাকা জঙ্গী সোহেল মাহফুজ ও রাজীব গান্ধীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে সোমবার এনআইএ প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে বলেও জানা গেছে। জঙ্গী বিষয়ক পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, এসটিএফ প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আইনগত পারস্পরিক সহযোগিতা স্মারক রয়েছে। এর আলোকে জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় উভয় দেশ কাজ করবে। জঙ্গীবাদ ইস্যুতে নানা বিষয়ে এসটিএফের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশের একটি প্রতিনিধি দলকে ভারতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এসটিএফ প্রতিনিধি দল জানতে চেষ্টা করেছেন অস্ত্র ও বিস্ফোরক সীমান্তের ওপার থেকে দেশে কিভাবে প্রবেশ করেছে। এই নেটওয়ার্কে সীমান্তের দুই পাশের জড়িত জঙ্গী কারা ? গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর তদন্তে বেরিয়ে আসে যে, অস্ত্রের চালান সীমান্ত হয়ে দেশে ঢোকে। তাই জঙ্গীবাদ ইস্যুতে বাংলাদেশ-ভারত আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে চায়। ঘটনার সময়ের তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদান করে উগ্রপন্থীদের যে কোন তৎপরতা রুখে দিতে চায় দুই দেশই। এসটিএফের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের যে কয়েকটি গুরুত্বপূণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে উভয় দেশে তৎপর জঙ্গীদের তালিকা হস্তান্তরের বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হয়। এ ছাড়া জঙ্গী তৎপরতা মোকাবেলায় বাংলাদেশ-ভারত পরস্পরকে কিভাবে আরও নিবিড়ভাবে সহায়তা করবে, তা আলোচনা হয়েছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, কিভাবে কারা পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গী তৎপরতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে, তা সোহেল মাহফুজ ও রাজীব গান্ধীর কাছ থেকে জানতে চেষ্টা করেছে ভারতীয় প্রতিনিধি দলটি। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে ভারতের অন্য কোন প্রদেশে জেএমবির তৎপরতা রয়েছে কি-না তা তারা খুঁজে দেখছে। ভুল তথ্য দিয়ে মাহফুজ কিভাবে ভারতের ভোটার কার্ড পেল, তাও খতিয়ে দেখতে চায় এসটিএফ। একই উদ্দেশে সোমবার ঢাকায় আসছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) প্রতিনিধি দল। পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, নারায়ণগঞ্জে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবির প্রধান তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিন জঙ্গীর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। তারা নিহত হওয়ার পর প্রায় ১১ মাস পর ময়নাতদন্ত আসায় এই মামলার তদন্তে আরও গতি ফিরে আসবে। ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হন নব্য জেএমবি প্রধান তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গী। গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী তামিমের সঙ্গে গ্রেফতারকৃত হাতকাটা সোহেল মাহফুজ ও রাজীব গান্ধীর ঘনিষ্ঠতা ছিল।
×