ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থমন্ত্রী

ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়ায় বাজেটে বড় কাটছাঁট হবে

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৭ জুলাই ২০১৭

ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়ায় বাজেটে বড় কাটছাঁট হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে বড় সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হবে। এ বাস্তবতায় বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। আর তাই বাজেটের বেশিরভাগ বরাদ্দ কাটছাঁট ও পরিবর্তন করা হবে। বিশেষ করে আয়ের খাত হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়, অন্যান্য আয়, বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তা এবং উন্নয়ন বাজেটের অঙ্ক পরিবর্তন করার আভাস দেয়া হয়েছে। প্রথা অনুযায়ী, জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে নতুন বাজেট পেশের সময় বিদায়ী বাজেটের সংশোধন উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু এবার তাতে ব্যতিক্রম ঘটছে। রবিবার সচিবালয়ে নিজের দফতরে বাজেট এবং ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই সময় তিনি জানান, এবার সংশোধিত বাজেট বেশ আগেই দেব, দিতে হবে। কেননা, যেহেতু নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন দুই বছর পিছিয়ে দেয়া হয়েছে, সে কারণে বাজেটের অনেক ফিগার চেঞ্জ (পরিবর্তন) করতে হবে। প্রসঙ্গত, ভ্যাট থেকে ৯১ হাজার কোটি টাকা আসবে ধরে চার লাখ কোটি টাকার বিশাল বাজেট সংসদে প্রস্তাব করেছিলেন মুহিত। কিন্তু ব্যাপক বিরোধিতার মুখে ভ্যাট আইন কার্যকর করা দুই বছর পিছিয়ে দিতে হয়েছে তাকে। ফলে ভ্যাট থেকে রাজস্ব ২০ হাজার কোটি টাকা কম আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, সে কারণেই বলছি, এবার বাজেটে বড় সংশোধন করতে হবে এবং সেটা আমি বেশ আগেই করব। জাতীয় সংসদেই এ সংশোধন আনা হবে। আইএমএফের পরামর্শে ভ্যাট আইন করেছে সরকার। সেটা বাস্তবায়নে বারবার পিছু হটায় সংস্থাটির সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের অবনতি ঘটবে কিনা- এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনি তা মনে করেন না। তিনি বলেন, আমরা ২০১৬ সালে ভ্যাট বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলাম, পারিনি। ২০১৭ সালেও পারলাম না। কিন্তু সে কারণে আইএমএফের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে না। আমরা আমাদের নিজস্ব বাস্তবতায় ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে পারছি না। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হবে কেন? অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এবার রাজস্ব ঘাটতি পূরণে সরকারের সামনে করজাল সম্প্রসারণের বিকল্প নেই। আর সে চাপ সামাল দিতে হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে বলেন, ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি যেভাবেই হোক ব্যবস্থা করতে হবে। কিভাবে সে ব্যবস্থা হবে- সে বিষয়ে মুহিত বলেন, বাজেটে আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮৫ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। এখন রাজস্ব আদায়ের প্রধান উৎস হবে এ আয়কর ও কর্পোরেট কর। তৈরি পোশাক খাতে উৎসে কর বিদ্যমান শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ হারেই বহাল থাকছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা এবং ইউরোপের বাজারে আমাদের তৈরি পোশাকের দাম কমে গেছে। রফতানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে উৎসে কর আগেরটিই রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এনবিআর এ বিষয়ে এসআরও জারি করেছে বলে জানান মুহিত। যদিও ২৮ জুন বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী তৈরি পোশাক খাতে উৎসে কর ১ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিলেন। বাজেট পাসের পর বিজিএমইএর নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তাদের দেন-দরবারে তৈরি পোশাকের উৎসে কর কমানো হলো। বাজেট আলোচনায় সংসদ সদস্যরা সঞ্চয়পত্রের সুদের হার না কমানোর কথা বলেছেন। এ অবস্থায় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হবে কিনা-এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এ বিষয়ক কমিটির বৈঠক হবে। সবকিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এমন কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না, যাতে পেনশনভোগী এবং মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। সঞ্চয়পত্রের সুবিধা যাদের পাওয়ার কথা, তারা যাতে তা পায় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা- এ প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, আমার বয়স হয়েছে, আর নির্বাচন করার ইচ্ছা নেই। তবে যদি আমার পার্টি প্রয়োজন মনে করে, তাহলে বিবেচনা করব। তখন নির্বাচন করতে পারি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি খুব খুশি হচ্ছি এ কারণে যে, ইনকাম এবং কর্পোরেট ট্যাক্স খুব বেড়েছে। এটা খুব বড় একটা অর্জন। ১৪ লাখ ট্যাক্স পেয়ারের মধ্যে এখন ২৯ লাখ দিচ্ছে। এর মধ্যে ট্যাক্স রিটার্ন দেয় কিন্তু ট্যাক্স দেয় না এমন সংখ্যাটা কত সেটা বের করতে হবে। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে না পারার অন্যতম কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীদের বিরোধিতাকেই মনে করছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া বেসরকারী খাতের চাকরিজীবীদের জন্যও পেনশন প্রথা চালু করতে চায় সরকার। এজন্য প্রয়োজনে একটি সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হবে। এ বিষয়ে বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন অর্থমন্ত্রী।
×