ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আশুলিয়ায় সারোয়ার তামিম গ্রুপের ৪ জঙ্গীর আত্মসমর্পণ

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৭ জুলাই ২০১৭

আশুলিয়ায় সারোয়ার তামিম গ্রুপের ৪ জঙ্গীর আত্মসমর্পণ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আশুলিয়া থানার নয়ারহাটে চৌরাপাড়া এলাকায় জঙ্গী আস্তানায় প্রায় এগারো ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের চার জঙ্গী আত্মসমর্পণ করেছে। শনিবার রাত এগারোটা থেকে ইব্রাহীম নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ওই বাড়ি ঘিরে রাখার পর রবিবার সকাল থেকে আত্মসমর্পণের আহ্বানের এক পর্যায়ে দুপুর বারোটা থেকে একে একে চার জঙ্গী আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণের জন্য হ্যান্ড মাইকে আহ্বান জানায় অভিযান পরিচালনাকারী র‌্যাব। র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আটক চার জঙ্গীর নাম মোজাম্মেল হক, রাশেদুল নবী, এরফানুল হক ও আলমগীর। এর মধ্যে মোজাম্মেল হক দলনেতা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির মালিক ইব্রাহীমকেও আটক করেছে র‌্যাব। বাড়ির ভেতরে কয়েকটি আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লেসিভ ডিভাইস) পাওয়া গেছে। গার্মেন্টস কর্মী পরিচয় দিয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে জঙ্গী আস্তানা গড়ে তুলে তারা বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল বলে জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, ওই চারজন জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সদস্য। ওই বাড়িতে অবস্থান নিয়ে তারা ‘বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা’ করছিল। শনিবার রাত ১টার দিকে র‌্যাব-৪ এর একটি দল নয়ারহাট এলাকার চৌরাপাড়া এলাকায় ইব্রাহীম নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ওই বাড়ি ঘিরে ফেলে। টিনশেড বাড়িটির ভেতরে সন্দেহভাজন জঙ্গীরা অবস্থান করার খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনার সময়ে আশপাশের ভবনের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। ওই বাড়িটির সামনে যে কয়েকটি দোকানও রয়েছে তাও বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর রবিবার দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় গোলাগুলি চলে এবং বাড়ির ভেতর থেকে বোমাও ছোড়া হয়। এরই মধ্যে হ্যান্ড মাইকে বার বার ‘জঙ্গীদের’ আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানানো হয়। সকাল ৯টার পর র‌্যাবের একটি এপিসি ওই বাড়ির কাছাকাছি যেতে দেখা যায়। আকাশে একটি হেলিকপ্টারও চক্কর দিতে দেখা যায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই বাড়ির দিক থেকে একটানা বেশ কিছুক্ষণ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির শব্দ আসে। বাড়ির ভেতরে থাকা ‘জঙ্গীদের’ উদ্দেশে হ্যান্ড মাইকে বলা হয়, বেলা ১২টার মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে র‌্যাব চূড়ান্ত অভিযানে যাবে। এরপর ১২টার দিকে একজন বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করে। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেলা ১২টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে একে একে চারজন ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান পরে ঘটনাস্থলের কাছে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি চালিয়ে ওই বাড়ির ভেতরে কয়েকটি আইইডি (ইস্প্রোভাইজড এক্সপ্লেসিভ ডিভাইস) পাওয়া গেছে। বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়। তিনি জানান, এপ্রিলের শেষ দিকে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের কয়েকজনকে আটক করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জানতে পারেন, এই জঙ্গী দলের কয়েকটি গ্রুপ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয়। গ্রেফতারকৃত জঙ্গীর মধ্যে রয়েছে তামিম দ্বারী। ওই সময় জিজ্ঞাসাবাদে সে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছিল। আশুলিয়ায় এই অভিযানের সময় ওইসব তথ্যের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। এভাবেই আমরা নিশ্চিত হই এরা সারোয়ার-তামিম গ্রুপের।’ তামিম দ্বারী ছিলেন তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহচর। ২৭ এপ্রিল সাভার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর সূত্র ধরে বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাবের গোয়েন্দাদের নজরদারি বাড়ানো হলে আশুলিয়ায় এই বাড়ির সন্ধান মেলে। র‌্যাব-৪ এর একটি দল শনিবার রাত ১টার দিকে বাড়িটি ঘিরে ফেলে। জঙ্গীবিরোধী অভিযানের নেতৃত্বদানকারী র‌্যাব-৪ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি লুৎফুল কবীর বলেছেন, রাত ৩টার দিকে বাড়ির ভেতরে থাকা ‘জঙ্গীরা’ র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে কমপক্ষে পাঁচ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এরপর রবিবার সকাল ৬টার দিকে আবারও গুলি করে তারা। কয়েকটি বোমাও ছোড়া হয়। জবাবে র‌্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছোড়েন। তিনি জানান, বাড়ির ভেতরে থাকা ‘জঙ্গীদের’ আত্মসমর্পণ করার জন্য হ্যান্ডমাইকে বেশ কয়েকবার আহ্বান জানানো হলেও তখন তারা সাড়া দেয়নি। বরং র‌্যাব সদস্যদের ‘তাগুতির দল’ আখ্যায়িত করে তারা গালিগালাজ করে। র‌্যাব-৪ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর আবদুল হাকিম জানান, চারজন ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পর র‌্যাবের বোমা নিষ্ক্রীয়কারী দলের সদস্যরা সেখানে প্রবেশ করেন। আশুলিয়া থানার কর্তব্যরত এক কর্মকর্তা বলেন, আশুলিয়া থানা পুলিশের একটি দলও সকালে ঘটনাস্থলে যায়। নিরাপত্তার স্বার্থে আশপাশের বাড়িগুলো থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হয়। র‌্যাবের স্পেশাল ফোর্স ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে চূড়ান্ত অভিযানের প্রস্তৃতি নিয়ে অভিযান পরিচালনা শুরু করে। বাড়ির মালিক ইব্রাহীম র‌্যাবকে জানিয়েছেন, আজাদ নামের এক লোক গার্মেন্ট কর্মী পরিচয় দিয়ে গত মাসে আড়াই হাজার টাকায় টিনশেডের ওই বাসা ভাড়া নেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ওই বাসায় কয়েক দিন আগে আসবাবপত্র নিতে দেখে তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। তারা তাকে বলেছিলেন, সেখানে একটি এনজিওর অফিস খোলা হবে। সেজন্যই আসবাসপত্র নেয়া হচ্ছে। জঙ্গীরা আত্মসমর্পণের পর র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আত্মসমর্পণের পর সে জানায়, ভেতরে আরও তিনজন রয়েছে। কোন নারী বা শিশু তাদের মধ্যে নেই। এরপর এক ঘণ্টার মধ্যে একে একে বাকি তিনজনও বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করে। তিনি বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল তাদের জীবিত ধরা, এ কারণে আমরা সময় নিয়েছি। গ্রেফতার হওয়া চার জঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের জন্য পাঠানো হচ্ছে বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা।
×