ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা

উত্তীর্ণদের নিয়োগ দাবিতে অনশন কর্মসূচী অব্যাহত

প্রকাশিত: ০৭:৫৫, ১৬ জুলাই ২০১৭

উত্তীর্ণদের নিয়োগ দাবিতে অনশন কর্মসূচী অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন, দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা, কল্যাণ ও অবসর সুবিধা বোর্ডের চাঁদাসহ নানা ইস্যুতে আন্দোলনের মাঠে শিক্ষক-কর্মচারীরা। বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নেয়া স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার দ্বাদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়োগের দাবিতে চলছে অনশন কর্মসূচী। দাবি আদায়ে প্রতিবাদ সভাও পালন করছেন নিবন্ধনধারী হয়েও নিয়োগ বঞ্চিত বিক্ষুব্ধ প্রার্থীরা। অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের ১০ শতাংশ চাঁদা আদায়ের ঘটনা নিয়েও মাঠে শিক্ষকরা। সরকারী শিক্ষকরাও তুলছেন না দাবি। শনিবার রাজধানীতে নানা কর্মসূচীতে নিজেদের দাবি পক্ষে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতারা। ‘চল চল চল ঢাকায় চল’Ñ সেøাগান দিয়ে শনিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশন কর্মসূচী শুরু করেছেন বেসরকারী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা। কর্মসূচীতে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নিবন্ধন সনদধারীরা। তারা গুরুতর অভিযোগ এনে বলেছেন, এনটিআরসিএ টাকার বিনিময়ে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার জাল সনদধারীদের নিয়োগ দিয়েছে। জানা গেছে, প্রথম থেকে দ্বাদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাকরির জন্য আবেদন করার যোগ্যতা অর্জনবিষয়ক। চূড়ান্ত নিয়োগ লাভের জন্য সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব উদ্যোগে নেয়া নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরি হতো এবং সরকার নির্ধারিত অন্যান্য যোগ্যতা থাকলে এমপিওভুক্ত হতে পারতেন। তবে ১৩তম পরীক্ষা থেকে নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষার দায়িত্ব পায় নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ বা এনটিআরসিএ। পরীক্ষা পদ্ধতিতেও আনা হয় পরিবর্তন। যারা ১৩তম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা আর কোন পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শূন্য পদে নিয়োগ পাবেন। যদিও নতুন পদ্ধতি শুরু করার আগে সরকার একবারই বিশেষ বিবেচনায় প্রথম থেকে দ্বাদশ নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে কয়েক হাজার আবেদনকারীকে সরাসরি চাকরির জন্য মনোনয়ন দিয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই নিয়োগ পেয়ে এমপিওভুক্তও হয়েছেন। এখকার জটিলতা সম্পর্কে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান এ এম এম আজহার বলেছেন, প্রথম থেকে দ্বাদশ নিবন্ধনধারীদের সরাসরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ দাবি করা অযৌক্তিক। বিশেষ বিবেচনায় তাদের একবার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। যারা মেধাতালিকায় প্রথম দিকে ছিলেন তাদের মনোনয়ন দেয়ার পর তারা নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু প্রথম থেকে দ্বাদশ নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা শনিবারে অনশন কর্মসূচীতে অভিযোগ করেছেন, এনটিআরসিএ আমাদের পূর্বের এক থেকে ১২তম শিক্ষক নিবন্ধিত নিয়োগ বঞ্চিতদের নিয়োগ না দিয়ে আবারও ১৪তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জালিয়াতি করে প্রকাশ করেছে। এনটিআরসিএ টাকার বিনিময়ে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার জাল সনদধারীদের নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বৈধ সনদ থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ দিচ্ছে না। এছাড়া বিভিন্ন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও নিবন্ধনবিহীন খ-কালীন শিক্ষক দ্বারা তা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের সার্টিফিকেট আছে। প্রার্থীরা আরও বলেন, অর্থ, সময় ও মেধার ফলে অর্জিত এ নিবন্ধন সার্টিফিকেট যদি আমাদের কর্মের নিশ্চয়তা না দেয়, তবে কি শুধু নিবন্ধন সনদ দেয়াই এনটিআরসিএর কাজ? এনটিআরসিএ থেকে বলা হচ্ছে, সনদের মেয়াদ ৩ বছর। আমরা অনার্স-মাস্টার্স পাস করে কি হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারব না? যদি না পারি তাহলে, তারা কি আমাদের ভুল করে সনদ দিয়েছিল? আন্দোলনকারীরা ৭ দফা দাবি তুলে তা মেনে নেয়ার আহ্বান জানান। অন্যথায় রাজপথে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবেন বলে হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেন। তাদের দাবিগুলো হলোÑ ১৪তম শিক্ষক নিবন্ধন বাতিল করে আগে ১ থেকে ১২তম নিবন্ধিতদের নিয়োগ দিতে হবে। সার্টিফিকেটধারীদের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্যানেলভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে। উপজেলা কোটা বাদ দিতে হবে, ৬০ হাজার জাল সনদধারীদের চাকরিচ্যুত করতে হবে, খ-কালীন সৃষ্ট পদ বিলুপ্ত করে ১-১২তম বৈধ শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে হবে। টাকার বিনিময়ে এনটিআরসিএর নিয়োগ দেয়া বন্ধ করতে হবে। সার্টিফিকেটের মেয়াদ ৩ বছর থেকে আজীবন বহাল রাখতে হবে।
×