ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মঞ্জুর মোর্শেদ সুমন

‘জারবেরার রঙে সম্ভাবনা’

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৬ জুলাই ২০১৭

‘জারবেরার রঙে সম্ভাবনা’

বাংলাদেশের যে কোন ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবে ফুল যেন নিত্য অনুষঙ্গ। কবির কবিতায় বা প্রেমময় যুগল এর হাতে কিংবা সৌখিনতার প্রতীক যেন ফুল। সেই সৌখিন ফুলের বাগান ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনায়। এখন তেমন একটা বাড়ির উঠানে বা খোলা আঙ্গিনায় বাগান করে, সে বাগানের পরিস্ফুটিত ফুল দিয়ে প্রিয় মানুষটিকে শুভেচ্ছা জানানোর সময় প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। সবাই যেন নিজের অজান্তেই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। তাই তো ফুল এখন বিমানে বা শিপে চড়ে দেশ হতে দেশান্তরে বাণিজ্যিক ধারায় ঘুরে বেড়ায়। শহর কিংবা গ্রাম দুই চার খানা ফুলের দোকান পাওয়া যাবে না, তা কিন্তু নয়। এমন কি অনলাইনেও আপনি ফুল পেতে পারেন। যে মাটির রূপে-গুণে এ দেশ সুজলা সুফলা, সে মাটি আমার দেশের ফুল চাষীদের বিমুখ করেনি, ৮০-এর দশকে এদেশে বাণিজ্যিক ফুলের চাষ শুরু, যখন এদেশে তৈরি পোশাক রফতানি ও স্থাপন হতে শুরু করে। তৈরি পোশাক যেভাবে এগিয়েছে, ফুল হয়ত সেভাবে আগায়নি, তবে বাণিজ্যিক দিক চিন্তা করলে দেশী ও বিদেশী ফুলের চাষ ও উৎপাদন কৃষি অর্থনীতিতে যোগ করেছে সম্ভাবনা। সৃষ্টি করছে উদ্যোক্তা, কমিয়েছে আমদানি নির্ভরতা, তৈরি হয়েছে হাজার কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য, রঙ্গীন করেছে বাংলার ধূসর মাটি। এমন এক সম্ভাবনার নাম জারবেরা, যার রঙে সম্ভাবনার স্বপ্ন বুনছে বাংলার ফুল চাষী কিছু উদ্যোক্তা। তেমনি এক সম্ভাবনার জানান দিচ্ছে ঢাকার নিকট জেলা নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের মাধবপাশায় বর্তমানে গড়ে ওঠা জারবেরার একটি প্রজেক্ট। যেখানে ফুটে আছে হরেক রঙের জারবেরা, ফুটন্ত জারবেরাগুলো যেন জানান দিচ্ছে আগামীর জারবেরা উৎপাদনের সম্ভাবনা। কথা হলো বাগানের কেয়ারটেকার ও মালী মোঃ রাজ্জাক মিয়ার সঙ্গে। এখানে মাসিক বেতনে কাজ করেন দুইজন কর্মচারী। ৭০ শতাংশ জমির ওপর গড়ে উঠেছে বাগানটি। এখানে গড়ে ১২০০-১৫০০টির মতো জারবেরা সংগ্রহ করা যায়, এবং রাতে এর গন্তব্য হয় দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি ফুল বাজার শাহবাগে। তিনি জানিয়েছেন, একটি চারা সুস্থ থাকলে গড়ে ৫ বছর পর্যন্ত ফুল দিতে পারে, তাদের জমিতে প্রায় ৮-১০ রঙের ফুল ফুটে। বাগান মালিকের নাম মোঃ বাতেন। তাদের প্রজেক্ট এর নাম ‘ভাই ভাই ফুলের বাহার।’ ১৯৯৫সাল হতে যুক্ত হয় এ পেশায়, এখন তাদের ব্যবসা শাহবাগ ও চট্টগ্রামে, আগে ভারত হতে আমদানি করা জারবেরা বিক্রি করত, একটি ফুল ১৫ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে, তাই এর চাহিদা দেশের বাজারে দিন দিন বাড়ছে, এতদিন যশোরের চাষ হলেও, জারবেরার চাষ নারায়ণগঞ্জে তো বটেই, ঢাকার আশপাশে প্রথম করছেন। এলাকাটি শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরি, ব্রহ্মপূত্র নদী দ্বারা বেষ্টিত, তাই তারা আবহাওয়াগত দিক বিবেচনায় ও আঠালো মাটিওয়ালা ৭০ শতাংশ জমি ৫ বছরের লিজ নিয়ে গড়ে তুলেছেন বাগানটি। এখন স্নপ্ন দেখছেন দেশের বাহিরে ফুল রফতানি করার, এক্ষেত্রে সরকারী সহযোগিতা ও এ ধরনের এলাকাগুলোতে যেন শিল্পায়নের নামে সম্ভাবনাময় এ খাতকে ধ্বংস করা না হয় সেই অনুরোধ করেছেন। এ খাতে ব্যাংকগুলো হতে সহজ শর্তে ও বড় আকারে স্বল্প সুদে ঋণ প্রাপ্তির আশা করছেন। বর্তমানে অফপিক সিজন, তাই ফুলের দাম কম বলে এখন প্রতি পিস জারবেরা মাত্র ২-৫ টাকায় বিক্রি হয়, আর পিক সিজনে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত দাম পাওয়া যায়, যেখানে বছরে হাজার কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য হয় সেখানে ফুল সংরক্ষণে নেই কোন ব্যবস্থা, স্থানীয় পর্যায় বা জাতীয় পর্যায়ে ব্যবস্থা থাকলে হয়ত ফুল রফতানি করে দেশ আয় করতে পারবে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা, কর্মসংস্থান হবে হাজারো তরুণের। জিডিপির লক্ষ্য মাত্রা অর্জনেও ভূমিকা রাখছে বর্তমান ফুল বাণিজ্য। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে ফুল বাণিজ্য হয়ে ছিল ৮০০ কোটি টাকার, দেশের বেশির ভাগ ফুল উৎপাদন হয় খুলনা, যশোর ও রাজশাহী অঞ্চলে। এখাতে নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ এর বন্দর। এখানেও উৎপাদিত হয় গ্লাডিওলাস, জবা, ডালিয়া, গাধা, কাঠ বেলী, কামিনীসহ আরও বেশকিছু জাতের ফুল।
×