ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জলি রহমান

রেমিটেন্স প্রবাহ...

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১৬ জুলাই ২০১৭

রেমিটেন্স প্রবাহ...

অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম স্তম্ভ রেমিটেন্স। আর রেমিটেন্স প্রবাহ কখনোই সরল রেখায় প্রবাহিত হয় না। উত্থান-পতনের মাজেই এর ধারা। তবে জনসংখ্যাবহুল দেশের রেমিটেন্স না বাড়াতে পাড়লে উন্নতির শিখরে পৌঁছা কঠিন হয়। রেমিটেন্স প্রবাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাও। সম্প্রতি তারা এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। পরিস্থিতি বুঝতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ঘুরে এসেছে। রেমিটেন্স কমার পেছনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতির দুর্বল হয়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও হুন্ডিকে দায়ী করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাংলাদেশের রেমিটেন্সের অর্ধেকের বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইন থেকে। দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবের অর্থনীতির নাজুক অবস্থার ফলে সেখানে গিয়ে অনেকে বেকার হয়ে পড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে রেমিটেন্সের উপর। প্রবাসী নাগরিকদের অর্থ কেবল তাদের পরিবারের প্রয়োজনই মেটায় না, তাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করে এবং নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের অর্থনৈতিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে রেমিটেন্স গুরুত্বপূর্ণ নিউক্লিয়াস হিসাবে কাজ করে। রেমিটেন্স আমাদের মোট অভ্যন্তরীণ আয় বা জিডিপির ৩০ ভাগ। জাতীয় অর্থনীতির তাই অন্যতম চালিকাশক্তি এই রেমিটেন্স। প্রবাসে কর্মরত নাগরিকদের স্বদেশে প্রেরিত অর্থকেই রেমিটেন্স বলা হয়। রেমিটেন্স কেন কমছে? বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত রেমিটেন্স কমে যাওয়ার পেছনে টাকার দরপতনকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ড, ইউরো, মালয়েশিয়ান রিংগিত ও সিঙ্গাপুরি ডলারের মূল্যমান সম্প্রতি কমে গেছে। ফলে এসব দেশের শ্রমিকদের আয়ের বিপরীতে বাংলাদেশী টাকা কম পাওয়া যাচ্ছে।’ রেমিটেন্স কমার অন্যতম কারণ হুন্ডি বা মানি লন্ডারিং। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসপি বলেছেন, ‘অনেকে বেশি লাভের আশায় হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশ থেকে টাকা পাঠায়। যে কারণে রেমিটেন্স কমেছে। বর্তমানে হুন্ডির ব্যবসা জমজমাট রূপ নিয়েছে।’ তাছাড়া যেসব জনশক্তি রফতানি করা হচ্ছে তাদের বেশির ভাগই অদক্ষ, তারা প্রবাসে গিয়ে ভালমানের কাজ পায় না। এটি রেমিটেন্স কমার পিছনে অনেকটা দায়ী। প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রবণতা প্রথম দেখা দেয় ২০১৩ সালে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীরা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৭১৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের এ সময়ে পাঠিয়েছিলেন ৮৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। সেই হিসাবে রেমিটেন্স আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে। ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার এবং ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩২ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। আগের বছরের চেয়ে গত বছর রেমিটেন্স কমেছিল ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ। ২০১৩ সালেও প্রবাসীরা তার আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন। রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র্রীয় ব্যাংকের নীতি নির্ধারকরাও। এ ব্যাপারে আরও কঠোর হতে হবে। বন্ধ করতে হবে মানি লন্ডারিং বা হুন্ডির মতো অবৈধ ব্যবসা। রফতানি করতে হবে আরও দক্ষ জনশক্তি। জনশক্তি দক্ষ করতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেও তা যথাযথ কার্যকর হয় না। এ ব্যপারে আরও সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। জনশক্তি ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে যেসব জনশক্তি পাঠানো হচ্ছে তাদের নিয়ে সেমিনার করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যাতে তারা হুন্ডি বা মানি লন্ডারিয়ের মতো অবৈধ পথ অবলম্বন না করে। সরকারী চ্যানেলে টাকা পাঠালে সুযোগ-সুবিধা আরও সম্প্রসারণ করা যাতে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠাতে আরও উৎসাহী হয়। দেশে যারা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নামে প্রকাশ্যে হুন্ডি কার্যক্রম চালাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এসব বন্ধের জন্য উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
×