বেড়েছে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা

বছরের ছয় মাস পার করল ব্যাংকগুলো। এরই মধ্যে অর্ধবার্ষিক পরিচালন মুনাফার হিসাবও চূড়ান্ত করেছে ব্যাংকসমূহ। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর কাছে এখন প্রচুর পরিমাণে অলস টাকা পড়ে রয়েছে। শিল্প উদ্যোক্তাদের চাহিদা না থাকায় পড়ে আছে এসব অর্থ। অন্যদিকে খেলাপী ঋণের পরিমাণও বিশাল। সরকারকেও ঋণ দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ব্যাংকিং খাতে গড় সুদের হারও কমে ১০ শতাংশেরও নিচে নেমে গেছে। এত সমস্যার পরও ব্যাংকগুলো বছরের ছয় মাস শেষে ভাল মুনাফা অর্জন করেছে। তবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এ সময়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের মুনাফা কমেছে। এবার জুন ক্লোজিং (১ জুলাই) শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় লেনদেন বন্ধ রাখার দরকার পড়েনি। কর্মকর্তারা ব্যাংকে বসে এই হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো অটোমেশনের আওতায় আসায় হিসাব করা অনেক সহজ হয়েছে। আগে প্রতিটি শাখা থেকে হিসাব এনে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বসে যোগ-বিয়োগ করে লাভ-লোকসানের হিসাব করা হতো। এখন প্রতিদিনের হিসাব প্রতিদিনই দিনশেষে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চলে আসে। তাই বার্ষিক বা অর্ধবার্ষিক লাভ-লোকসানের হিসাব করা অনেক সহজ হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংক ২০১৭ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ৮৬৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভাল পরিচালন মুনাফা করেছে বেসরকারী খাতের পূবালী ব্যাংক লিমিটেডও। আলোচ্য সময়ে ৪৬০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে ব্যাংকটি। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২৯৭ কোটি টাকা। ইসলামী ধারার আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৩৬০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে, গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৫০ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথমার্ধে পরিচালন মুনাফায় বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি করেছে বেসরকারী খাতের মার্কেন্টাইল ব্যাংক। ২০১৬ সালের প্রথমার্ধে ২২৯ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করলেও চলতি বছরের প্রথমার্ধে তা ৩২৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০১৬ সালে নিট মুনাফায় বিপর্যয় হলেও চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভালভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বেসরকারী খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ২৮০ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফায় ছিল ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। পরিচালন মুনাফায় ভাল প্রবৃদ্ধি এসেছে ইসলামী খাতের এক্সিম ব্যাংকেরও। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এক্সিম ব্যাংক মুনাফা করেছে ৩২০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের প্রথমার্ধে ব্যাংকটি ২৫৫ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফায় ছিল। বেসরকারী খাতের ব্যাংক এশিয়া চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৩০৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ২৯৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ২৯৩ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে ট্রাস্ট ব্যাংক। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ২৫১ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ২৪৩ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে এনসিসি ব্যাংক। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১৯৭ কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত ২০৯ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে বেসরকারী খাতের মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১৭৩ কোটি টাকা। ২০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে যমুনা ব্যাংক। গত বছরের প্রথমার্ধে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ২০৪ কোটি টাকা। ভালো করলেও গত বছরের তুলনায় পরিচালন মুনাফা কমেছে বেসরকারী খাতের ন্যাশনাল ও সাউথইস্ট ব্যাংকের। ২০১৬ সালের প্রথমার্ধে ৫৯২ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করলেও চলতি বছরের প্রথমার্ধে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৪০৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। আর সাউথইস্ট ব্যাংক চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছে ৪১১ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ৪২০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফায় ছিল ব্যাংকটি। নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২০১৭ সালের প্রথমার্ধে মধুমতি ব্যাংক ৭৩ কোটি, মেঘনা ব্যাংক ৬৮ কোটি ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ৬৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো আগের যে কোন সময়ের চেয়ে চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভাল পরিচালন মুনাফা করেছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, সোনালী ব্যাংক জুন পর্যন্ত সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছে ২৪০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটি ৫০০ কোটি টাকা লোকসানে ছিল। অগ্রণী ব্যাংক চলতি বছরের প্রথমার্ধে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১০২ কোটি টাকা। ভাল মুনাফা করেছে রূপালী ব্যাংকও। ২০১৬ সালের প্রথমার্ধে মাত্র ৩৫ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফায় থাকলেও চলতি বছরের প্রথমার্ধে ২৬০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা হয়েছে। এছাড়া গত বছরের প্রথমার্ধে ৪৬ কোটি টাকা পরিচালন লোকসানে থাকা বেসিক ব্যাংক চলতি বছরের প্রথমার্ধে ১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। প্রসঙ্গত, ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা প্রকৃত (নিট) মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে কর, প্রভিশন প্রভৃতি বাদ দিয়ে প্রকৃত মুনাফা হিসাব করা হয়। ব্যাংকগুলো তাদের অনিরীক্ষিত আর্থিক ফলাফল বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কাছে পেশ করে। এরপর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য এসব তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।