ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শর্মিলা ঠাকুরের আলাপন জিৎ গাঙ্গুলীর সুরের জাদুতে মুগ্ধ দর্শক

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৬ জুলাই ২০১৭

শর্মিলা ঠাকুরের আলাপন জিৎ গাঙ্গুলীর সুরের জাদুতে মুগ্ধ দর্শক

গৌতম পা-ে ॥ আষাঢ়ের পড়ন্ত বিকেল। রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে উৎসুক দর্শকের ভিড়। পুরো সেন্টারজুড়ে যেন বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সবার একটাই প্রত্যাশা প্রিয় অভিনেত্রী এবং পছন্দের গায়ককে এক নজর দেখতে পাওয়া। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। সবাই ধীর পায়ে সারিবদ্ধ হয়ে প্রবেশ করছে কনভেশন সেন্টারের গুলনকশা মিলনায়তনে। দেখতে দেখতে কানায় কানায় ভর্তি মিলনায়তন। শনিবার ‘শর্মিলা ঠাকুর-জিৎ গাঙ্গুলী লাইভ ইন ঢাকা’ শিরোনামের এ অনুষ্ঠানের আয়োজক যৌথভাবে এটিএন বাংলা ও চ্যানেল লাইভ এন্টারটেইনমেন্ট। অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে রাত সাড়ে ৮টায় মঞ্চে হাজির হলেন অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা সিঁথি সাহা। তার মিষ্টি কথায় কাটল কিছু সময়। প্রদীপ হাতে মঞ্চে উপস্থিত হলো বাংলাদেশের খ্যাতিমান অভিনেত্রী তারিন ও তার দল। ‘মঙ্গল প্রদীপ জ্বেলে’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু প্রথম পর্ব। পরে ‘মোর স্বপ্নের সাথী তুমি কাছে এসো’, ‘আধো আলোছায়াতে, কিছু ভালোবাসাতে’সহ শর্মিলা ঠাকুরের অভিনয় করা বিভিন্ন ছবির গানের সঙ্গে তারা নৃত্য পরিবেশন করে। তখন মঞ্চের প্রথম সারিতে বসে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানান প্রবীণ অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। তারিনের আহ্বানে মঞ্চে এলেন অভিনয়শিল্পী শর্মিলা ঠাকুর। বয়স তার সত্তর পেরিয়েছে তবে সৌন্দর্যের ছটা কমেনি একটুকুও। তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে তাকে স্বাগত জানায় সবাই। মঞ্চে উঠে তিনি বলেন, আমার জন্মের বছর তিনেক আগেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মারা যান। তাই তার সঙ্গে আমার সরাসরি যোগাযোগ না হলেও মায়ের মুখে তার অনেক গল্প শুনেছি। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেন. ঢাকা আমার খুব প্রিয় শহর। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের পরিবারের নাড়ির টান। ইতিহাস-রাজনীতি আমাদের ভাগ করে দিলেও মনের টান কমেনি। আমাদের ভাষা ও শিল্প এক ও অভিন্ন। তাই সব সময় নাড়ির টান অনুভব করি। চলচ্চিত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, চলচ্চিত্র কর্মী হিসেবে আমার আশা দুই দেশের মধ্যে আরও সাংস্কৃতিক বিনিময় হোক, যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মিত হোক। কাঁটাতারের বাধা যেন আদানপ্রধানের প্রতিবন্ধক না হয়। শর্মিলা ঠাকুর ছাড়াও এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ও চ্যানেল লাইভ এন্টারটেইনমেন্টের কর্ণধার অনন্যা রুমা। এরপর পরিবর্তন হয় উপস্থাপকের। মঞ্চে আসেন দেবাশীষ বিশ্বাস। তার উপস্থাপনায় শুরু হয় দলীয় নৃত্য। পরে মঞ্চে আসেন কলকাতার শিল্পী দোয়েল গোস্বামী। তিনি পরিবেশন করেন জনপ্রিয় গান ‘রিমঝিম ধারাতে মন চায় হারাতে’। দর্শকের করতালির মধ্যদিয়ে মঞ্চে আসেন কলকাতার গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক জিৎ গাঙ্গুলী। এই সঙ্গীত পরিচালকের পদচারণা বাংলা-হিন্দি দুই মাধ্যমেই। নিজের শহর বলেই হয়তো কলকাতায় সাফল্যটা বেশি। তবে তাঁর গানের শ্রোতা আছে বলিউডেও। ‘দেখেছি চোখে রাত বিরাতে’ গান দিয়ে শুরু হয় তার পরিবেশনা। এরপর তিনি একে একে পরিবেশন করেন জনপ্রিয় কিছু ছবির গান। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘কি করে তোকে বলব তুই যে আমার’, ‘হান্ড্রেড পারসেন্ট লাভ লাভ’, ‘বন্ধু আমার বুকের মাঝে’ ‘মন মাঝিরে বলনা কোথায়’ প্রভৃতি। তিনি সহশিল্পী দোয়েল গোস্বামীর সঙ্গেও কিছু ডুয়েট গান পরিবেশন করেন। লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণে ১৩ হাজার লোকগানের প্রকাশনা হাজার বছরের ঐতিহ্যময় বাংলার লোকসংস্কৃতি। ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, মুর্শিদী, জারি-সারি কিংবা পালাগানে সমৃদ্ধময় পলিমাটির এ বাংলাদেশ। অমূল্য ওই সাংস্কৃতিক সম্পদকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। নেয়া হয়েছে লোকসংস্কৃতি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কার্যক্রম। এ কর্মসূচীর আওতায় প্রকাশিত হলো সংগৃহীত ১৩ হাজার লোকগানের ডিভিডি। গবেষণা ও মাঠপর্যায়ের কর্মসূচীর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে গানগুলো। শেকড়ের কথা বলা সেসব লোকগান ঠাঁই পেয়েছে এক হাজার ১৪টি ডিভিডিতে। শনিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এ প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রকাশনাভিত্তিক আলোচনার পর সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় আয়োজনটি হয়ে ওঠে আরও বেশি প্রাণবন্ত। এছাড়া এ আয়োজনের সূত্র ধরে সকালে নাট্যশালার সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত হয় ‘লোকসংস্কৃতি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রসার এবং করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার ও মুক্ত আলোচনা। লোকগানের ডিভিডি প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব মোঃ ইব্রাহীম হোসেন খান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গের লেখক ও গবেষক ড. শক্তিনাথ ঝা। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পশ্চিমবঙ্গের ভাওয়াইয়া শিল্পী সুখ বিলাস বর্মা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গান সংগ্রহে মাঠপর্যায়ে কাজ করা ড. জেসমিন বুলি। সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। প্রকাশনা উৎসব উপলক্ষে নাট্যশালা লবিতে ছিল প্রকাশিত ডিভিডি ও লোকজ সংস্কৃতিবিষয়ক বইয়ের প্রদর্শনী। পাঁচটি জেলা থেকে সংগৃহীত ১৩ হাজার লোকগান নিয়ে মোট এক হাজার ১৪টি সিডি ও ডিভিডি প্রকাশিত হয়েছে। আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক পর্বে শেকড়সন্ধানী উপস্থাপনা মেলে ধরেন শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীবৃন্দ এবং নেত্রকোনার দুই শিল্পী খিজিরি হোসেন ও আবির। সকালে নাট্যশালার সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত হয় ‘লোকসংস্কৃতি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রসার এবং করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার ও মুক্ত আলোচনা। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সুধীন দাশ ও করুণাময় গোস্বামীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি গানের সুরে স্মরণ করা হলো নিবেদিতপ্রাণ দুই সঙ্গীত ব্যক্তিত্বকে। বিশিষ্টজনদের আলোচনায় উঠে এলো সঙ্গীত নিয়ে তাদের কীর্তির কথা। এভাবে একই সঙ্গে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানানো হলো দুই মহান সাধক সঙ্গীতজ্ঞ সুধীন দাশ ও সঙ্গীত গবেষক ড. করুণাময় গোস্বামীকে। শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে ‘শ্রদ্ধা নিবেদন’ শীর্ষক এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ। সুরের আশ্রয়ে সাজানো দুই সঙ্গীত সাধককে নিবেদন করে সাজানো হয় শোকগাথা। দুই বরেণ্যজনকে নিবেদিত আলোচনায় অংশ নেনÑ ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, নাট্যজন সৈয়দ হাসান ইমাম, কবি আসাদ চৌধুরী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম, নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ডালিয়া নওশিন, সাদিয়া আফরিন মল্লিক ও পরিষদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম। সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি তপন মাহমুদ। বুলবুল আহমেদ স্মরণ ও সম্মাননা ঢাকাই ছবির সোনালি সময়ের তুমুল জনপ্রিয় এক নায়ক বুলবুল আহমেদ। আপন অভিনয়শৈলীর মহিমায় চারবার জয় করেছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এ দেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি এই অভিনেতাকে স্মরণ করা হলো শনিবার সন্ধ্যায়। তার সপ্তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হলো তাকে নিবেদিত আলোচনা এবং দুই গুণীজনকে প্রদান করা হলো সম্মাননা। নাট্যজন কেরামত মওলা ও প্রয়াত অভিনয়শিল্পী নাজমুল হুদা বাচ্চুকে প্রদান করা হয় সম্মাননা। সম্মাননা গ্রহণ করেন কেরামত মওলা। আর নাজমুল হুদা বাচ্চুর পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তার মেয়ে সামিয়া বাচ্চু। স্মরণানুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাট্যকর্মী ও নির্দেশক প্রবীর দত্ত।
×