ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লন্ডনের উদ্দেশে খালেদা জিয়ার ঢাকা ত্যাগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৬ জুলাই ২০১৭

লন্ডনের উদ্দেশে খালেদা জিয়ার ঢাকা ত্যাগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লন্ডন গেলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা ৫৫ মিনিটে এ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে তিনি শাহজালাল (রহ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। এর আগে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় তিনি গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে রওনা দিয়ে এবং সাতটা ২৫ মিনিটে বিমানবন্দরে পৌঁছান। তাঁর সঙ্গে একান্ত সচিব আব্দুস সাত্তার ও গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম সফরসঙ্গী হয়েছেন। এদিকে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে দলের নেতাকর্মীরাও বিমানবন্দরে ভিড় জমান। এ মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, এম এ কাইয়ুমসহ বেশ ক’জন সিনিয়র নেতাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। এ ছাড়াও বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী বিমানবন্দরের বাইরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে হাত নেড়ে বিদায় জানান। তাদের হাতে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড শোভা পায়। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকেই বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান নিতে শুরু করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। সেখানে জড়ো হয়ে তারা খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রাকে স্বাগত জানিয়ে সেøাগান দেয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতির কারণে বিমানবন্দর এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। খালেদা জিয়া লন্ডন সফরকালে ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি চূড়ান্ত করবেন। এছাড়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর পাশাপাশি চোখ ও পায়ের চিকিৎসা এবং যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নেবেন। দেড় মাসেরও বেশি সময় লন্ডনে অবস্থান করে কোরবানির ঈদের পর দেশে ফিরেই তিনি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবেন। জানা যায়, লন্ডন সফরকালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের কৌশল কি হবে, কারা দলীয় প্রার্থী হবে, জোটের শরিকদের কোন কোন আসন ছেড়ে দেয়া হবে, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখায় কি থাকবে, নির্বাচনী ইশতেহারে কি কি থাকবে এবং দেশী-বিদেশী কোন মহলের সহযোগিতা নেয়া হবে লন্ডনে এসব বিষয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিস্তারিত আলোচনা হবে। আর সহায়ক সরকারের দাবি আদায় না হলে কি ধরনের আন্দোলন করা যেতে পারে সে আলোচনাও হবে। বিশেষ করে নির্বাচনকে কিভাবে সুষ্ঠু করা যায় এবং এ জন্য সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পাশাপাশি আরও কি কি করা যায় সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকেই লন্ডনের কিংসস্টনে ভাড়া বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। লন্ডনে গিয়ে সেখানেই থাকবেন খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি ছেলে তারেক রহমান, ছেলে বউ ডাঃ জোবাইদা রহমান ও নাতনি জায়মা রহমানের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাবেন। প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও তাঁর ২ মেয়েও সেখানে এসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে মিলিত হবেন। এর আগে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি চোখ ও পায়ের চিকিৎসা নেন। এছাড়া লন্ডন বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার পাশাপাশি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটান। এ সময় তিনি বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল ও নতুন নির্বাহী কমিটি গঠনের বিষয়ে তারেক রহমানের মতামত নেন। দুই মাসের বেশি সময় লন্ডনে অবস্থান শেষে ওই বছর ২১ নবেম্বর দেশে ফিরে আসেন তিনি। লন্ডন থেকে ফিরেই তিনি সর্বস্তরে কমিটি পুনর্গঠন ও জাতীয় কাউন্সিলের তোরজোড় শুরু করেন। এরই প্রেক্ষিতে গত বছর ১৯ মার্চ জাঁকজমকভাবে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় কাউন্সিলের পর ৫৯২ সদস্যের নতুন ঢাউস নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। লন্ডনে গিয়ে খালেদা জিয়া কি কি করবেন তা বাস্তবায়নের কাজ সমন্বয় করছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও যুক্তরাজ্য কমিটির সাবেক সভাপতি মাহিদুর রহমান ও যুক্তরাজ্য বিএনপির বর্তমান সভাপতি এম এ মালেকসহ ক’জন নেতা। এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদও তাদের সঙ্গে থেকে খালেদা জিয়াকে সহযোগিতা করবেন। ইতোমধ্যেই আমির খসরু লন্ডন পৌঁছে গেছেন।
×