ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিসেনার সফর শেষে ৩৫ দফা যৌথ ঘোষণা

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘উইন উইন’ অংশীদারিত্বে নেবে ঢাকা-কলম্বো

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৬ জুলাই ২০১৭

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘উইন উইন’ অংশীদারিত্বে নেবে ঢাকা-কলম্বো

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঢাকা-কলম্বো সম্মান ও বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে তা শক্তিশালী করার মধ্যে দিয়ে উভয়পক্ষ উইন উইন অংশীদারিত্বে নিয়ে যাবে। সন্ত্রাস, জঙ্গী ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা একযোগে কাজ করবে। চলতি বছরের মধ্যেই দুই দেশ মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করবে। এছাড়া শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল গড়তে উভয় দেশ একযোগে কাজ করবে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর শেষে দুই দেশের যৌথ ঘোষণায় এসব প্রকাশ করা হয়েছে। শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ ঘোষণা প্রকাশ করা হয়। তিনদিনের ঢাকা সফর শেষে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা শনিবার ঢাকা ত্যাগ করেছেন। তার সফর শেষে ৩৫ দফা যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করা হয়। যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, দুই দেশ সম্মান ও বিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে তা শক্তিশালী করার মধ্যে দিয়ে উভয়পক্ষ ‘উইন উইন’ অংশীদারিত্বে নিয়ে যাবে। দুই দেশ শান্তি, নিরাপত্তা, সম্প্রীতি ও টেকসই উন্নয়নে একে অপরকে সহযোগিতা করবে। যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ায় অনেক বেশি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ সফরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কৃষি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, উচ্চশিক্ষা ও আর্থিক বিষয়সহ সার্বিকভাবে দুই দেশের জনগণের মধ্যে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপনে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে আরও বলা হয়, বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের সুফল পেতে শুল্ক সহযোগিতা, দ্বৈত কর পরিহার এবং দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ বিষয়ে চুক্তি শীঘ্রই চূড়ান্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দুই নেতা নির্দেশ দিয়েছেন। শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল গড়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তারা। তারা উপ-আঞ্চলিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রক্রিয়াগুলোর গভীরতর করার বিষয়ে একমত হন। বিমসটেক ও সার্কের আওতায় লক্ষ্যভেদী ও ফলমুখী আঞ্চলিক সহযোগিতা স্থাপনে কাজ করার ওপর জোর দেন। ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে ৫ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তা দিয়েছে। এ জন্য শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়া বাংলাদেশে পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনায় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গভীর শোক প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট। হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় শ্রীলঙ্কাকে সমর্থন করায় বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মৈত্রীপালা সিরিসেনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের গণমুখী নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। তার নেয়া নীতিতে প্রতিবেশী দেশগুলো লাভবান হবে। একইসঙ্গে অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করেছেন শেখ হাসিনা। দুই দেশের শীর্ষ নেতা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের নৃশংসতা স্মরণ করেছেন। ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতির জন্য জাতীয় সংসদে নেয়া প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে তারা বাংলাদেশের নিরপরাধ ও মুক্তিকামী জনতার ওপর স্মরণীয় নির্যাতনের স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। যৌথ ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, সন্ত্রাসী, জঙ্গী ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে উভয় দেশ একযোগে কাজ করবে। এ অঞ্চলে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলেও অভিমত প্রকাশ করেছেন দুই শীর্ষ নেতা। পরমত সহিষ্ণুতা ও বহুত্ববাদ নিয়ে আগামী বছরে দুই দেশ একটি সংলাপের আয়োজন করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য সইয়ের বিষয়ে স্বাগত জানিয়েছেন। চলতি বছরের মধ্যেই এ চুক্তি সই হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা। উভয় নেতা দুই দেশে বেসরকারী পর্যায়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ঐক্যমত পোষণ করেছেন। বিশেষ করে পোশাক শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্মীয় ও ইকোট্যুরিজম, জুয়েলারি, কৃষি, মৎস্য, ডেয়ারি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, ওষুধ ইত্যাদি শিল্প খাতে যৌথ বিনিয়োগ বাড়াতে উৎসাহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বাড়ানোর মাধ্যমে উভয় দেশ থেকে বিনিয়োগের সুফল পেতে পারে বলে তারা অভিমত প্রকাশ করেন। যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, দুই শীর্ষ নেতা স্বীকৃতি দিয়েছেন যে, শ্রীলঙ্কার অনেক কর্মী ও পেশাজীবী বাংলাদেশের উৎপাদন ও সেবা খাতে কর্মে নিয়োজিত রয়েছেন। তারা ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেন যে, উভয় দেশের নাগরিকদের চলাচলে বাড়ানোর উদ্যোগ নিলে উভয়েই লাভবান হবে। দুই দেশের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচলে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ায় উভয় নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে দিয়ে দুই দেশই লাভবান হবে। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, আলোচনার মাধ্যমে খুব শীঘ্রই দুই দেশের মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তি হবে। উভয় দেশের মধ্যে চলমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ ও পরিদর্শন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দুই শীর্ষ নেতা। প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা আগামী বছর শ্রীলঙ্কায় সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ঢাকায় আসার পরে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন। এছাড়াও বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। সেখানে তার সম্মানে দেয়া এক ভোজেও অংশ নেন তিনি। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম সৌজন্য বৈঠক করেন।
×