ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘ক্ষমতার লোভে দেশের সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দিতে পারি না’ ;###;এসএসএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির জন্য চাপ ॥ ক্লিনটনকেও না

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৬ জুলাই ২০১৭

ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির জন্য চাপ ॥ ক্লিনটনকেও না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোট জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। ভোটের মালিক জনগণ, তারা ভোট দেবে তাদের ইচ্ছামতো। জনগণ যাদের ভোট দেবে তারাই নির্বাচিত হবে। যাকে তারা চায় তাকে তারা পাবে। জনগণের সাংবিধানিক অধিকার যেন তারা পূরণ করতে পারে। তাই আমরা স্লোগান দিয়েছিলাম, আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব। তবে কামনা করি, বিগত নির্বাচনের মতো যেন সহিংস পরিস্থিতি আর সৃষ্টি না হয়। আমার একটাই লক্ষ্য যতটুকু সময় পাই দেশের উন্নয়নটা যেন করে যেতে পারি। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। জনগণই আমার মূল শক্তি এবং অনুপ্রেরণার উৎস্য। নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে জনগণের কাছ থেকে যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে না যাই সে ব্যাপারে এসএসএফকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা দেশে যতদূর সম্ভব উন্নয়ন করে যেতে চাই। যেহেতু আমাদের উন্নয়ন একটি ধারায় যেতে পেরেছে তাই আমরা এত বড় বাজেট দিতে পেরেছি। জনগণকে দেয়া ওয়াদা পূরণের লক্ষ্য নিয়েই বর্তমান সরকার কাজ করছে। আর সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের কোন স্থান এ দেশে হবে না। ২০০১ সালে সরকার গঠন করতে না পারার পেছনে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিমি কার্টারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির মাধ্যমে ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করতে বলেছিলেন। ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারতে হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০০ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন বিল ক্লিনটন। তিনি বলেন, ‘আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিজে আমাকে অনুরোধ করেছিলেন। তখন বিল ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট। ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। আমি তাকে ওই জবাবই দিয়েছিলাম যে আগে আমার দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে হবে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েও একই অনুরোধ পেয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন একই প্রশ্ন। আমি একই উত্তর দিয়েছিলাম।’ তিনি বলেন, ২০০১ সালে আমি ক্ষমতায় আসতে পারিনি। তার পেছনে কারণ ছিল, আমাদের গ্যাস বিক্রি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্যাস উত্তোলনের জন্য বিভিন্ন আমেরিকান কোম্পানি এখানে বিনিয়োগ করে। তাদের ইচ্ছা ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করবে। আর ভারত এই গ্যাস কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি আমাদের গ্যাস বিক্রি করার পক্ষে মত দিইনি। আমার কথা ছিল, আগে আমার কত গ্যাস আছে জানতে হবে। আমার দেশের চাহিদা পূরণ করতে হবে। ৫০ বছরের রিজার্ভ রাখতে হবে। তারপর যদি অতিরিক্ত থাকে, তবেই আমি বিক্রি করব। তাছাড়া এই গ্যাস আমি বিক্রি করতে পারব না।’ যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার অনুরোধে সন্দেহ হয়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্যাস আমার কত আছে, সেটা আগে আমাকে সার্ভে করে বের করতে হবে। তারা একবার সার্ভে করতে চায়, কিন্তু এরপর আর করেনি। আমি বারবার অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তারা করেনি বলে আমার একটু সন্দেহ হয়েছিল। তার মানে আমাদের দেশে কোন গ্যাস নেই। তাহলে কেন বিক্রির জন্য চাপ দিচ্ছে? বঙ্গবন্ধুর মেয়ে হিসেবে দেশের স্বার্থহানিকর কিছু করবেন না বলে জনগণকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘আমি যা বলব, এক কথাই বলব। ক্ষমতার লোভে দেশের সম্পদ আমি অন্যের হাতে তুলে দিতে পারি না। তাই আমি রাজি হইনি।’ এ প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিচারপতি লতিফুর রহমানের বাসায় এক মধ্যাহ্ন ভোজে আওয়ামী লীগ থেকে তিনি ও জিল্লুর রহমান এবং বিএনপি থেকে খালেদা জিয়া ও আবদুল মান্নান ভূঁইয়া যোগ দিয়েছিলেন। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার ছিলেন। তার সঙ্গে আমাদের বৈঠক। সেখানে একই কথা (গ্যাস বিক্রি) ওঠে। আমি শুধু একটি কথাই বলে এসেছিলাম যে, আমার যে কথা বলার সেটা ঢাকায় বসেও বলেছি, ওয়াশিংটনেও বলেছি। কাজেই এটাই আমার কথা। তিনি বলেন, ‘আমি দেশ বেচার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমার দেশের সম্পদ দেশের মানুষের। এটা আমি কাউকে দিতে পারব না।’ ওই সময় লতিফুর রহমানের বাড়ি থেকে তিনি ও জিল্লুর রহমান চলে যাওয়ার পরও বিএনপি নেতারা সেখানে থেকে গিয়েছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেত্রী থেকে যান। তারপর যা হবার; তাদের মধ্যে বোধ হয় সমঝোতা হয়। ২০০১-এর নির্বাচনে আমরা যেটা দেখেছি, ভোট আমরা বেশি পেয়েছিলাম, কিন্তু সিট কম পেয়েছি। সরকারে আসতে পারিনি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল আমার বিরুদ্ধে। আমার মন্ত্রিপরিষদের বিরুদ্ধে, আমার পরিবারের বিরুদ্ধে। এটা একটা ষড়যন্ত্র ছিল, চক্রান্ত ছিল। কিন্তু তারা সেটা প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডার আদালত ওটাই রায় দিয়েছে যে, এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট, মিথ্যা একটা অভিযোগ ছিল। তিনি বলেন, এখানে জনগণের সেবা করতে এসেছি। জনগণের জন্য কাজ করি। নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য না। ১৯৫৪ সালে আমি মন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। আমি রাষ্ট্রপতির মেয়ে, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। আমি নিজে তিনবার প্রধানমন্ত্রী। কাজেই দুর্নীতি করে যদি নিজের ভাগ্য গড়ার ইচ্ছা থাকত তাহলে বহু আগেই করতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করিনি। কারণ সততাই হচ্ছে আমার প্রধান শক্তি।’ এসএসএফকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাদের সেবা দেয়া সম্ভব না। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। আপনাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ আমরা রাজনীতি করি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আর আমাদের যদি জনগণ থেকে আলাদা করে ফেলা হয় তাহলে ঐ যে বলে না ‘জলের মাছকে যদি ডাঙ্গায় তুলে ফেলে দেয়া হয়’ তাহলে কিন্তু তারা দাপিয়ে দাপিয়ে মরে যায়। আমাদের অবস্থাও কিন্তু সেরকম হয়।’ তিনি বলেন, সরকারের সব কাজ জনগণের কল্যাণের জন্য। জনগণের ইচ্ছা ও নিজেদের দায়িত্ব পালনে সমন্বয়ের জন্য তিনি এসএসএফের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভিআইপিদের সঙ্গে জনগণের স্বাভাবিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। জনগণের সঙ্গে যেন তাদের কোন দূরত্ব তৈরি না হয়। বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসএসএফ রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তার দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে থাকে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে যারা এ দায়িত্বে নিয়োজিত তাদের মনোবল অত্যন্ত উঁচু। প্রশ্নাতীত আনুগত্য ও অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। এই সংগঠনটি তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছে। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সফরে নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে সকল রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান সফর করেছেন তারা সকলেই এসএসএফের পেশাদারিত্বের প্রশংসা করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এসএসএফের সদস্যরা যেভাবে তাদের আনুগত্য এবং দায়িত্ববোধকে সমুন্নত রেখেছে, ভবিষ্যতেও এই অনন্য বৈশিষ্ট্য তারা বজায় রেখে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে যাবে। উন্নত মানবসম্পদ, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ এবং পেশাদারিত্বের মানদ-ে একটি চৌকস ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে তৈরি থাকতে হবে। জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেই ভিআইপিদের নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে। আর এসএসএফ সদস্যদের নিয়মানুবর্তী, সৎ, দায়িত্বশীল ও মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ এ বাবা-মা-ভাইদের হারিয়ে যখন একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ি তখন এই জনগণের ভালবাসাই আমাকে শক্তি যোগায় নতুন করে বাঁচার প্রেরণা দেয়। এটা সব সময় কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। আমরা মানুষের জন্যই কিন্তু কাজ করি। আমার ওপর যখন গ্রেনেড হামলা হয়েছে আমার সঙ্গে থাকা মানুষগুলো মানব ঢাল রচনা করেই কিন্তু আমাকে রক্ষা করেছে। তবে, আমি সব সময় এটাই বিশ্বাস করেছি আল্লাহ মানুষকে সবসময় কিছু কাজ দেন সেই কাজটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বোধ হয় আল্লাহই রক্ষা করে যান। নইলে একবারে মৃত্যুর মুখোমুখি আমি দেখেছি-গুলি চলছে। এক বার দুবার নয়, বারবার। আমার গাড়ির ওপর বোমা মারা হয়েছে। আর গ্রেনেড হামলাতো প্রকাশ্য দিবালোকে হয়েছে, সবাই দেখেছে। ট্রেনে গেছি সেখানে হামলা এবং গুলি এমন কি পাথর পর্যন্ত ছুঁড়ে মারা হয়েছে। এভাবে বহুবার বহু ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যদিয়েই এগিয়ে যেতে হয়েছে। আল্লাহ যেভাবেই হোক প্রতিবার আমাকে এসব হামলা থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমার নিজের জন্য যতটা না চিন্তা হয় এজন্য আমার নিরাপত্তার জন্য যারা থাকেন তাদের জন্য সব থেকে বেশি চিন্তা হয়। যে কারণে আমি প্রতিদিন প্রতিবার নামাজ পড়ে যখন দোয়া করি- আমার ছেলে-মেয়ে-সন্তানের জন্য যেমন দোয়া করি, দেশবাসীর জন্য দোয়া করি, সেই সঙ্গে সঙ্গে আমার জন্য যারা নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন তাদের জন্যও আমি সব থেকে বেশি দোয়া করি। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে এটুকুই চাই এই ক্ষমতাটা আমার ভোগের নয়, ক্ষমতাটা হলো দেশের কাজের। আমি যেন সঠিকভাবে সঠিক চিন্তা করে দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে পারি। খোদা যেন আমাকে সেই শক্তি দেন। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে যারা কর্মরত শুধু আমার নিরাপত্তার জন্য নয়, আমার সঙ্গে যারা কাজ করেন সকলকেই যেন আল্লাহ হেফাজত করেন, সকলকেই যেন নিরাপদ রাখেন, সকলকেই যেন সঠিকভাবে কাজ করার সুযোগ দেন এবং সকলের আশা-আকাক্সক্ষাই যেন পূরণ হয়- এই দোয়া আমি প্রতিদিন সকলের জন্যই করে থাকি। তিনি বলেন, আমি অনেক সময় অনেক কিছু মেনে চলি কারণ যখন চিন্তা করি আমি হয়তো বেঁচে যাব-আমাকে আল্লাহ যেটুকু কাজ দিয়েছেন সেটুকু হয়তো করব কিন্তু সঙ্গে যারা থাকে (নিরাপত্তায়) তারা যেন বিপদে না পড়ে। নইলে আমি সমগ্র বাংলাদেশ ঘুরেছি। আর বিরোধী দলে থাকতে আমাকে এতটা নিরাপত্তা কে দেবে? যেটুকু নিরাপত্তা ছিল তা যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারাতো কেড়ে নেয়। কাজেই আমি আমার পার্টির মানুষ, গ্রামের লোকজন তাদের নিয়ে চলেছি। গ্রামের সাধারণ মানুষের অবস্থা আমার জানা আছে। বার বার যখন আঘাত এসেছে দেখেছি, কিছু না কিছু মানুষের জীবন চলে গেছে। কাজেই সেজন্যই সবসময় এটা মনে হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করি তখন সংবিধানকে অনুসরণ করেই আমরা সরকার পরিচালনা করি। যার শুভ ফলটা দেশের মানুষ ও জনগণ পাচ্ছে। কারণ আমরা ওয়াদাবদ্ধ জনগণের কাছে, আমাদের দায়িত্ব রয়েছে- এদেশের মানুষের কাছে, আমাদের রাজনীতিটাই এদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করা। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা, উন্নত জীবন দেয়া। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের মানুষের অধিকারের কথা বলেই জীবনের অনেকটা সময় জেলে কাটিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্র জীবন থেকেই তিনি এদেশের মানুষের দুর্দশা নিজের চোখে দেখে সংগঠন করে মুষ্ঠিবদ্ধ চাল ভিক্ষা করেও এ দেশের মানুষের অন্ন যোগানোর চেষ্টা করেছেন। নিজের গোলার ধান, পরনের কাপড়, বই-খাতা তিনি বিলিয়ে দিয়েছেন। বিএনপির আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর নামে যে জঘন্য কাজ বিএনপি-জামায়াত করেছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। একজন জীবন্ত মানুষকে কিভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা যেতে পারে। যে মানুষের জন্য আমরা কাজ করি সেই মানুষ পুড়িয়ে মারাই নাকি তাদের আন্দোলন। এরকম আন্দোলন আমি জীবনে কখনও দেখিনি। তবে জনগণই এটা প্রতিরোধ করেছে। আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা থেকে শুরু করে প্রত্যেক সংস্থা কাজ করেছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তথ্য দিয়েছে এবং সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেটা প্রতিহত করেছে। তিনি বলেন, কথিত আন্দোলনে প্রায় ৫শ’র ওপর মানুষ মৃত্যুবরণ করে, ২৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে তারা হত্যা করে। হাজারেরও অধিক মানুষ আহত হয়েছে। আহত বহু মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। প্রায় সাড়ে ৩ হাজারের মতো গাড়ি, রেল ও রেললাইন তারা ধ্বংস করেছে। হাজার হাজার গাছ কেটেছে। লঞ্চ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি মালিক এবং পরিবারকে আমরা সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। এ ধরনের ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটেছে। যেটা সবাই মনে রেখেছেন। আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি এবং করে যাচ্ছি। কাজেই আমরা চাই না এ ধরনের ঘটনা আর ঘটুক। ভোটের মালিক জনগণ তারা ভোট দেবে তাদের ইচ্ছামতো। যাকে তারা চাইবে তাকেই তারা পাবে (ক্ষমতায়)। তাই আমার একটাই লক্ষ্য যতটুকু সময় পাই দেশের উন্নয়নটা যেন করে যেতে পারি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন দেখেছি ২০০৫-০৬ সালে ৬৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেয়া হয়। আমরা ধারাবাহিক সরকার গঠনের ফলে আমাদের উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে পারায় আজকে আমরা ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট দিতে পেরেছি। ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট দিয়েছি। আর সকলের বেতন ১২২ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছি। যেটা পৃথিবীর কোন দেশেই কোন সরকার কখনও করতে পারেনি। যে কারণে আজ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষই কিছু না কিছু তার শুভ ফল পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় পদ্মা সেতু নিয়ে তার এবং পরিবারের সদস্য এবং মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়াতেই তারা এটা প্রমাণ করতে পারেনি বরং কানাডার আদালতে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম এখানে জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি। নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য নয়। অন্তত বাংলাদেশের মানুষের মাথা হেট করিনি। এইটুকু অন্তত গর্বভরে বলতে পারি। বরং মাথা উঁচু হয়েছে। বাংলাদেশ আজকে সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। যারা বাংলাদেশকে এক সময় অবহেলার চোখে দেখত তারাও এখন বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে। এটাই বাঙালীর প্রাপ্ত ছিল যেটা আমরা আবার তাদের জন্য অর্জন করতে পেরেছি। জঙ্গীবাদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গীবাদ সারাবিশ্বেই হচ্ছে। হলি আর্টিজানে হামলা যখন হয় অনেক বিদেশী বলেছে এটা আমরা মোকাবেলা করতে পারব না। কয়েক ঘণ্টায় আমরা এটা দমন করতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্ব অবাক হয়ে দেখেছে। আর সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের কোন স্থান এদেশে হবে না। এসএসএফের মহাপরিচালক মোঃ শফিকুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিনবাহিনী প্রধানগণ, সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তবৃন্দ, বিভিন্ন দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দ এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট সিকিউরিটি ফোর্স নামে ১৯৮৬ সালে বর্তমানের এসএসএফ গঠিত হয়। সরকার প্রধান, রাষ্ট্র প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তা বিধানই এই বাহিনীর দায়িত্ব। পরে এই বাহিনীর নাম হয় এসএসএফ।
×