ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রূপগঞ্জে ঘনবসতি এলাকায় কেমিক্যাল কারখানা

বিষাক্ত গ্যাসে মরে যাচ্ছে মাছ ॥ ফসলহীন মাঠ

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৬ জুলাই ২০১৭

বিষাক্ত গ্যাসে মরে যাচ্ছে মাছ ॥ ফসলহীন মাঠ

নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ, ১৫ জুলাই ॥ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের মঙ্গলখালী এলাকায় অবস্থিত ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানার বিষাক্ত গ্যাসে মরে যাচ্ছে পুকুর, খাল-বিলের মাছ। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে নারী-পুরুষ থেকে শিশুরাও। মোকিবনগর এলাকার সাদেক আলীর ছেলে ইউসুফ আলী, আব্দুর রশিদের ছেলে সোহরাব মিয়া, আবুল হোসেনের ছেলে ফারুক মিয়া, ফজুর আলী মুন্সির ছেলে আব্দুল লতিফসহ অনেক পরিবার ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানার বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হওয়ার ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে। ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানার বিষাক্ত গ্যাসের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেককেই মামলা-হামলা ও নির্যাতনের হুমকির শিকার হতে হয়েছে। প্রায় দেড় হাজার পরিবার জিম্মি হয়ে পড়েছে ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানার মালিকপক্ষের কাছে। এসব পরিবারের একটাই দাবি, হয়ত ওয়াটা কেমিক্যাল থাকবে, নয়ত দেড় হাজার পরিবার থাকবে। শুধু তাই নয়, ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানার বিষাক্ত গ্যাসের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভাও করেছেন। মঙ্গলখালী, কাটাখালী, মোকিবনগর, পাবই, ঠাকুরবাড়িরটেক, ফরিদ আলীরটেক, গুলাইনগর, বানিয়াদি এলাকার মানুষ ওই বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এর আগে গত ৫ জুলাই ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানার বিষাক্ত গ্যাসে নারী-পুরুষ, শিশুসহ প্রায় অর্ধশতাধিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। একাধিক সূত্র জানায়, পরিবেশ অধিদফতরসহ সরকারী বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের মাসোয়ারা দিয়ে ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানাটি পরিচালনা করছে মালিকপক্ষ। এ কারখানায় বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল উৎপাদন করা হলেও সবকটির অনুমোদন আছে কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানায়, মঙ্গলখালী এলাকার ওয়াটা কেমিক্যাল নামে কারখানায় বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল উৎপাদন করা হয়। কারখানাটি জনবহুল এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। কারখানার বিষাক্ত গ্যাসে মঙ্গলখালী, কাটাখালী, মোকিবনগর, পাবই, ঠাকুরবাড়িরটেক, বানিয়াদি এলাকার মানুষ দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন কেমিক্যাল কারখানার বিষাক্ত গ্যাস ছাড়া হয়। ঘুমন্ত অবস্থায়ও মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গত ৫ জুলাই দুপুর ২টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দেয় ওয়াটা কেমিক্যাল কোম্পানির কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই এলাকার শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে নারী-পুরুষরা অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, আবাসিক ও ঘনবসতি এলাকায় এ ধরনের কেমিক্যাল কারখানা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। এছাড়া এসব এলাকায় কেমিক্যাল কারখানা স্থাপনের সুযোগও নেই। বিষাক্ত এ গ্যাসের কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হতে পারে। আর গ্যাস অনুভব করলে অব্যশই ওই এলাকা থেকে দূরে চলে যেতে হবে। এছাড়া অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীদের সুস্থ হতে অন্তত ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লাগতে পারে। কারখানার জেনারেল ম্যানেজার আবু তাহের ভূঁইয়া বলেন, পরিবেশ অধিদফতরসহ যেখান থেকে অনুমতি নেয়া দরকার আমরা সব দফতর থেকেই অনুমতি নিয়ে কারখানা পরিচালনা করে আসছি। তবে ওই দিন ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানার গ্যাসের পাইপ হঠাৎ লিক হয়ে যায়। এ কারণে গ্যাস চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। তিন থেকে চার ঘণ্টা কাজ করে লিক সারানো হয়। আর কোন সমস্যা নেই। এছাড়া এলাকাবাসীর আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম বলেন, ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানার বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তদন্ত মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×