ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিচারপতি আনোয়ারুল হকের অকাল মৃত্যু দুঃখজনক ॥ সিনহা

প্রকাশিত: ০৮:০৮, ১৫ জুলাই ২০১৭

বিচারপতি আনোয়ারুল হকের অকাল মৃত্যু দুঃখজনক ॥ সিনহা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য অনেকেই আগ্রহী ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। শুক্রবার বাদ জুমা সুপ্রীমকোর্ট গার্ডেন চত্বরে বিচারপতি আনোয়ারুল হকের জানাজা সম্পন্ন হওয়ার পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এস কে সিনহা বলেন, যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য সরকার উদ্যোগ নেয়, তখন অনেকের প্রত্যাশা ছিল চেয়ারম্যান হওয়ার। যদিও আমি নাম বলব না ভেতরে ভেতরে চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য প্রত্যাশা ছিল অনেকের। প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হকের এমন কোন চিন্তা ছিল না। তবে, তাকে যখন চেয়ারম্যান করা হয়, তিনি আমাদের বলেছিলেন আপনারা যদি মনে করেন আর আমার ওপর আস্থা রাখেন। তিনি আরও বলেন, ওনার বিরুদ্ধে কারও কোন ক্ষোভ নেই। তিনি ছিলেন ব্যক্তিত্ব ও মেধাসম্পন্ন। অনেক বিচারক দেখেছি কিন্তু এত বিচক্ষণ নিষ্ঠাবান দেখিনি। তিনি ছিলেন ধর্মপ্রাণ বিচারক। প্রধান বিচারপতি বলেন, বৃহস্পতিবার যখন আমি জিএ কমিটির মিটিং করছিলাম তখন শুনতে পাই, আর ইহজগতে নেই। এখন চিন্তা লাগে তার স্ত্রীর কষ্ট শুনে। যে কয়দিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন যেন তার স্ত্রী শান্তিতে থাকতে পারেন। তার স্ত্রীও মারাত্মক অসুস্থ। তবে, তার এ অকাল মৃত্যু দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক যখন আইন সচিব ছিলেন তখন বিচার বিভাগ এবং সরকারের এক্সিকিউটিভের মাঝে সম্পর্ক ছিল খুব ভাল। এস কে সিনহা বলেন, ওনার সঙ্গে আমার পরিচয় আগে থেকেই। তবে প্রথম কথা হয় আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকার সময়। তিনি খুব ব্রিলিয়ান্ট ছিলেন। সম্ভবত তিনি তার ব্যাচে প্রথম ছিলেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, তিনি আইন সচিব থাকার সময় মন্ত্রী ছিলেন শফিক সাহেব। আমি আনোয়ারুল হককে বললাম, তুমি বিচারপতি হতে চাও, শফিক আহমদকে বল না কেন? আমি শফিক সাহেবকে ফোন করে বললাম আনোয়ারুল হক তো বেস্ট বিচারক। তাকে নিয়োগ দেন না কেন। শফিক সাহেব বললো ওনি তো বলেন না। কি ধরনের ব্যক্তিত্বের লোক হলে এ রকম করে। আমি নিজে বললাম কিন্তু ওনি নিজের জন্য বলেননি। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, বিচারক আনোয়ারুল হক মারা যাওয়াতে বিচার বিভাগের অপূরণীয় ক্ষতি। বিচার চলার সময় তিনি কখনও কোন কথা বলতেন না। সত্যি কথা উচ্চ স্বরে কোন কথা বলেন নাই। তিনি সততার সঙ্গে দায়িত্বের সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বসহ বিচার করেছেন। জাতি তাকে চিরকাল স্বরণ করবে। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তিনি অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে বিচার কাজ করতেন। আইনজীবীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতেন। এমন একজন হারানো সত্যি অপূরণীয় ক্ষতি। শুক্রবার বাদ জুমা সুপ্রীমকোর্ট বাগান চত্বরে বিচারপতি আনোয়ারুল হকের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার বাদ আসর শেষে রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। আজ শনিবার বাদ আসর মিনিস্ট্রি এ্যাপার্টমেন্টে তার কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান বিচারপতিসহ জানাজায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন, খাদ্যমন্ত্রী মোঃ কামরুল ইসলাম, পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নানসহ সুপ্রীমকোর্টেও আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট উভয় বিভাগের বিচারপতিরা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা। জানাজা শেষে বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী অফিসের পক্ষ থেকে তার কফিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
×