ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রীষ্মে ধুলোময়, বর্ষায় কাদাপানি

যুগ যুগ ধুঁকছে নগর সড়ক

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১৫ জুলাই ২০১৭

যুগ যুগ ধুঁকছে নগর সড়ক

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী রাজশাহী মহানগরীর একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ধুঁকছে যুগ যুগ ধরে। মূল শহরের ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি শেষ কবে নাগাদ সংস্কার করা হয় তার কোন হদিস নেই। ফলে নগরীর সাহেববাজার এলাকার পুরাতন রাজশাহী-নাটোর সড়কটি এখন বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ওই পথে যাতায়াতকারীরা। রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার বড় মসজিদ থেকে শুরু করে কুমারপাড়া পর্যন্ত মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের পেছনের সড়কটি এখন ধুঁকছে অভিভাবকহীনভাবে। গ্রীষ্মকালে চারদিক ধুলোয় অন্ধকার হয়ে যায় আর বর্ষাকালে কাদাপানি মাড়িয়ে চলাচল করাই দায় হয়ে পড়ে। নগরীর ব্যস্ততম এলাকা হওয়ায় সব সময়ই যানবাহনে ব্যস্ত থাকে এ সড়ক। তবে সংস্কারের অভাবে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারীরা। পাশাপাশি ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। স্থানীয়রা বলছেন, পুরনো এ সড়কটির কোন সংস্কারই করা হয়নি। দৃষ্টি নেই সিটি কর্পোরেশনের। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে সড়কটি। এছাড়া নগরীর বড় কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গোডাউন এ সড়কে হওয়ায় বড় যানবাহনগুলোও এ রাস্তায় চলাচল করে। কিন্তু বেহাল দশার কারণে নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে নগরীতে যখন একটু যানজট হয়, তখন এ রাস্তা দিয়ে ছোট যানবাহনগুলো চলাচলের সময় দুর্ঘটনা ঘটে বেশি। অথচ রাস্তাটি সংস্কার করলে নগরীর যানজটও অনেকখানি নিরসন করা সম্ভব। সরেজমিন দেখা গেছে, রাস্তার অধিকাংশ জায়গায় আর পিচ নেই। নিচের ইট-সুড়কি বের হয়ে গেছে অনেক জায়গায়। রাস্তার এখানে-সেখানে ছোট-বড় গর্ত। বৃষ্টির কারণে সেসব গর্তে পানি জমে আছে। কাদায় পরিপূর্ণ। লোকজন খুবই সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করছেন, যেন দুর্ঘটনা না ঘটে। যানবহান চলাচলের সময় এদিক-ওদিক দুলছে। যেন এই বুঝি উল্টে গেল। বর্ষাকালে এমন মরণফাঁদ হওয়া রাস্তাটি গ্রীষ্মকালে ধুলোয় পরিপূর্ণ হয়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানান। তখন ধুলোর কারণে চলাচল করা দায় হয়ে পড়ে। এ রাস্তার পাশে গত ১২ বছর ধরে ব্যবসা করছেন জিয়াউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি যতদিন এখানে ব্যবসা করছি, রাস্তা সংস্কার হতে দেখিনি। শুনেছি ১৫-২০ বছর ধরে রাস্তাটি সংস্কার হয় না। নগরীর একদম মূল জায়গার এমন রাস্তা সংস্কার না হওয়া দুঃখজনক। বৃষ্টির সময় পানি আর কাদার কারণে চলাচল করা যায় না। আবার গরমের সময় ধুলো-বালির কারণে চলাচল দায় হয়ে পড়ে।’ অতিদ্রুত তিনি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে এ রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানান। একটু এগিয়ে কু-ু বেকারি এ্যান্ড কনফেকশনারির মালিক মিলনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘রাস্তাটি সম্পূর্ণ অবহেলিত। রাজশাহী নগরীর সব বড় নেতাই এ রাস্তায় চলাচল করেন। তারা তো সবই দেখেন। তারপরও কেন রাস্তাটি সংস্কার হয় না জানি না। সবাই শুধু সান্ত¡না দেন শীঘ্রই সংস্কার হবে। কিন্তু সংস্কার কবে হবে কে জানে। আমার দোকানের পণ্য পরিবহনের জন্যও অনেক সমস্যা পোহাতে হয় এ ভাঙ্গা রাস্তার কারণে।’ স্থানীয় পথচারী আবদুল্লাহ বলেন, সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয় বর্ষাকালে। জুতা-স্যান্ডেল প্রায়ই ছিঁড়ে যায়। এখানে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই দেখা যাবে রিক্সা-ভ্যান-অটোরিক্সা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। আর মালামাল পড়ে যাওয়ার ঘটনা তো নিত্যনৈমিত্তিক। এত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অথচ সংস্কার হয় না। সড়কটি সংস্কার করলে নগরীর মূল রাস্তার ওপর চাপ অনেকটা কমবে। এতে যানজটও অনেকখানি কমানো সম্ভব হবে। এ সড়কের অবস্থান নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডে। এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন দিলদার বলেন, আগামী অক্টোবরের মধ্যে রাস্তাটি সংস্কার করা হবে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, এটি শুধু সান্ত¡নার কথা। এমন কথা যুগের পর যুগ বলে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, নগরীর সাহেববাজার এলাকায় এ রাস্তাটি সংস্কারের জন্য রাসিকের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে কবে তা সংস্কার করা হবে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য নেই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের।
×