ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিদিন ভর্তি থাকেন নয় শ’ থেকে এক হাজার রোগী

ঠাঁই নেই জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১৫ জুলাই ২০১৭

ঠাঁই নেই জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঠাঁই নেই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইসিভিডি)। প্রতিদিনই রোগী ভর্তি হচ্ছেন এখানে। এই হাসপাতালের তিনটি ভবনের কেবিন, ওয়ার্ড মিলিয়ে বেডের সংখ্যা ৪৩৪টি। কিন্তু এই বেডের বিপরীতে এই হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি থাকেন ৯০০ থেকে ১ হাজার রোগী। হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, কয়েক বছরে আশঙ্কাজনক হারে হৃদরোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আর হৃদরোগ চিকিৎসায় এটি দেশের একমাত্র সরকারী হাসপাতাল হওয়ায় এখানে রোগীর সংখ্যাও বেশি। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গেলে চোখে পড়ে তৃতীয় তলার ডান পাশের সিঁড়ির নিচে বিছানা পেতেছেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থেকে আসা রইসুল হক। তিনি বুকের ব্যথা নিয়ে গত ৬ জুলাই থেকে এই হাসপাতালে আছেন। চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করছেন, তাকে হাসপাতালে থাকতে হবে আরও কিছুদিন, কিন্তু এখানে বেড না পাওয়ায় মাদুরের ওপর চাদর বিছিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। তৃতীয় তলার প্রশাসনিক ভবনের ফটকের বাইরে বিছানা পেতেছেন নুর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, বারান্দায় বিছানা সাজিয়েছি ওয়ার্ডে সিট না পেয়ে। মাঝে মাঝেই বৃষ্টি হচ্ছে আর তাতে ভিজে যাচ্ছে সব। পড়িমরি করে বিছানা তুলে কোনরকমে সবাই মিলে কোথাও গিয়ে দাঁড়াই, আবার বৃষ্টি কমলে জায়গাটা মুছে বিছানা পাতি। একই অবস্থা মাদারীপুর থেকে আসা কোহিনুর বেগম, চাঁদপুরের আলী আহমেদসহ অনেক রোগীরই। তারাও বিছানা পেতেছেন হাসপাতালটির বারান্দা ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের ফ্লোরে। হৃদরোগ হাসপাতাল থেকে জানা যায়, তিনটি ভবনের কেবিন, ওয়ার্ড মিলিয়ে এখানের অনুমোদিত বিছানা সংখ্যা ৪১৪। রোগীদের ভিড়ের কারণে হাসপাতালটির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ এসটিএম আবু আজম নিজ উদ্যোগে ২০টি বিছানার একটি ওয়ার্ডের মতো করেছেন। কিছু মিলিয়ে বিছানা সংখ্যা ৪৩৪টি হলেও হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি থাকেন ৯০০ থেকে ১ হাজার রোগী। ৫০ থেকে ৫৩ বিছানার একেকটি ওয়ার্ডে রোগী থাকছে প্রায় ২০০’র ওপর। হাসপাতালের রোগীদের বারান্দায়, ফ্লোরে কেন রাখা হয়েছে জানতে চাইলে পরিচালক অধ্যাপক আফজালুর রহমান বলেন, এই হাসপাতাল থেকে কাউকে ফেরানো হয় না। সিট নেই, এমন কথা কাউকে বলতে পারি না। এছাড়া, আমাদের অনেক হাসপাতাল রয়েছে, যারা নির্ধারিত সিটের বাইরে কোন রোগী ভর্তি নেয় না। সেক্ষেত্রে ঢাকা মেডিক্যাল ও আমরা ব্যতিক্রম। কাউকে না কাউকে তো রোগীদের নিতেই হবে। তাই অনেক রোগীই যখন অন্য হাসপাতালে বিছানা পান না তখন তারা এ হাসপাতালে চলে আসেন। এভাবেই বেড়েছে রোগীর ভিড়। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, আইসিডিডিআরবি এবং যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ব্রেভ স্টাডি (বাংলাদেশ রিস্ক অব একিউট ভাসকুলার ইভেন্টস) নামক এক জরিপে জানিয়েছিল, ২০২০ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ায় হৃদরোগের আক্রমণ ১০০ শতাংশ বাড়বে। সম্প্রতি সেই জরিপের মাত্রাও বাংলাদেশে ছাড়িয়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে হৃদরোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ট্রেসফুল লাইফ, দারিদ্র্য, পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা, ধূমপান, তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার, এ্যালকোহল পান, অপুষ্টিজনিত সমস্যা, দারিদ্র্যের কারণে গর্ভকালীন অপুষ্টি, জটিলতা, তামাক-জর্দা সেবন, কায়িক পরিশ্রম না করা, জীবনযাত্রার পরিবর্তনসহ কিছু কারণ এর সঙ্গে জড়িত। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ৫৩ ভাগ মৃত্যুর কারণ হলো অসংক্রামক ব্যাধি, যার অন্যতম হচ্ছে করোনারি হৃদরোগ। এটি শতকরা প্রায় ২৭ ভাগ মৃত্যুর কারণ। এদিকে, দেশে বর্তমানে প্রতি ১ হাজার শিশুর মধ্যে ১০ থেকে ১২ শিশু জন্মগ্রহণ করছে হৃদরোগ নিয়ে। সে হিসেবে গড়ে প্রতিবছর ২ লাখের বেশি শিশু জন্মগ্রহণ করছে জন্মগত হৃদরোগী হয়েই। আবার এই শিশুদের মধ্যে যথাযথ চিকিৎসাসেবা না পেয়ে জন্মের ৬ থেকে ৭ মাস বয়সের মধ্যেই তারা মারা যাচ্ছে। কিছু কিছু এলাকার মানুষ হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে হাওড় এলাকা, দক্ষিণাঞ্চল। পরিবেশগত ভারসম্যহীনতা, ব্যাড ফুড হেবিট চর্বি হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলছে বলে জানান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার। তিনি বলেন, মানুষ এখন সচেতন বেশি। তারা বুকে একটু ব্যথা হলেও হাসপাতালে চলে আসছেন। অনেক রোগীই আসেন, যাদের এক থেকে দুই দিনে রিলিজ দেয়া হয়। কিন্তু যত ছোট চিকিৎসাই হোক না কেন, তাদের তো আর ফেরানো যায় না। তাই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
×