ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে শুরু হয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ধান চাষ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৫ জুলাই ২০১৭

যশোরে শুরু হয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ধান চাষ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ডিজিটাল পদ্ধতিতে শুরু হয়েছে ধান চাষ। এ পদ্ধতির ব্যবহারে দীর্ঘক্ষণ রোদে ঘেমে, পানিতে ভিজে ধান রোপণ থেকে কৃষক যেমন রক্ষা পাবেন, তেমনি সনাতন পদ্ধতির তুলনায় বিঘাপ্রতি ফলনও পাবেন বেশি। ফলে এ পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ধান বীজ ফ্রি সরবরাহের মাধ্যমে মাজান্ড কনসোর্টিয়াম ও ইরি বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে চলছে এ ব্যবস্থাপনা। সোলার ইরিগেশনের মাধ্যমে প্রায় হাজার বিঘার ওপর যন্ত্রের ব্যবহারে ডিজিটাল এ ধান চাষ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। মাজান্ড কনসোর্টিয়াম ও ইরি বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সহযোগিতায় যশোরেই স্থাপিত হয়েছে ৭টি সোলার ইরিগেশন পাওয়ার প্লান্ট। পাশের জেলা মাগুরায় রয়েছে ২টি এবং ঝিনাইদহতে ১টি। মোট ১০টি প্রজেক্টে ১ হাজার বিঘা জমিতে কৃষকরা ধান চাষ শুরু করেছেন। কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী মাজান্ড কনসোর্টিয়াম ও ইরি বাংলাদেশ ইরি-২৮, ইরি-৫৭, ইরি-৬২, ইরি-৭০, ইরি-৭২ এর বীজ সরবারহ করেছেন। বিশেষ পদ্ধতিতে প্লাস্টিকের ট্রেতে বীজ থেকে উৎপাদিত চারা আধুনিক রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে জমিতে রোপণ করাও হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ‘এ যন্ত্রের সাহায্যে কৃষকরা রোপণ করতে পারবে ধানের চারা। এতে কৃষকের সময় যেমন বাঁচবে তেমনি ফলনও বেশি পাবে।’ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) কনসালটেন্ট লতিফুল বারী জানান, গবেষণা অনুযায়ী এ যন্ত্রে ধান চাষ করলে কৃৃষক সনাতন পদ্ধতির তুলনায় প্রায় ১৫ ভাগ ফলন বেশি পাবে। সময় বাঁচবে, কমবে উৎপাদন খরচও। তাছাড়া সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে চারারোপণ করতে সারা দিনে ৪-৫ জন শ্রমিক প্রয়োজন হতো। যন্ত্রের মাধ্যমে মাত্র ২ জন শ্রমিক সেই পরিমাণ চারা ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই রোপণ করতে পারবেন। আর খরচও বাঁচবে হাজার টাকার বেশি। মাজান্ড কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ মাসুম বিল্লাহ জানান, জেলায় লেবুতলা, বাঘারপাড়ার হালিয়াসহ ৭টি প্রজেক্ট এবং মাগুরা ও ঝিনাইদহতে আরও ৩টি প্রজেক্টে কাজ চলছে। প্রতি প্রজেক্টে ১শ’ বিঘা করে প্রায় হাজার বিঘার মতো এ পদ্ধতিতে ধানচাষ হচ্ছে। ৩৫ জন লোকাল সাপোর্ট প্রভাইডারকে (এলএসপি) প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের এ চাষ পদ্ধতির জন্য উপযোগী করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, কোন বীজতলা ছাড়াই বিশেষ ব্যবস্থায় প্লাাস্টিকের ট্রেতে চারা তৈরি করে করা হয়। সেই চারা কৃষক অতি সহজেই আধুনিক রোপণ যান্ত্রের মাধ্যমে জমিতে রোপণ করতে পারেন। দুর্যোগ মুহূর্তেও কৃষক বিশেষ ব্যবস্থায় ধানের চারা তৈরি করতে পারবেন। এ পদ্ধতির মাধ্যমে এমন এক সময় আসবে, যেখানে কম জমির মালিক কৃষকেরা শুধু চারা উৎপাদনের মাধ্যমে উপার্জন করতে সক্ষম হবেন। শ্রম বণ্টনের যুগে দাঁড়িয়ে যশোর বাঘারপাড়া উপজেলার হালিয়ার কৃষকরাও জানালেন এসব কথা। সেখানে ৫ বিঘা জমিতে এ পদ্ধতিতে চাষ করছেন কৃষক আনছার আলী। তিনিসহ ওই এলাকার কৃষক ইকরামুল হোসেন, সিরাজুল ইসলাম গোলাম মোস্তফা জানান, ‘এ চাষ পদ্ধতিতে আগাছা দমনও সহজ। যন্ত্রের মাধ্যমে একই সারিতে একই দূরত্বে ধান জন্মায়। ফলে আগাছা দমনই না, ধানের রোগবালাইও কম হবে।’
×