ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে অপরিকল্পিত পুকুর খনন ॥ রুদ্ধ নিষ্কাশন পথ

মাঠে মাঠে জলাবদ্ধতা ॥ বিপাকে চাষী

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৫ জুলাই ২০১৭

মাঠে মাঠে জলাবদ্ধতা ॥ বিপাকে চাষী

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী অঞ্চলে অনুমোদন ছাড়াই যততত্র পুকুর খননের কারণে বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফসলি জমিতে ইচ্ছেমতো পুকুর খননের কারণে জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘা ফসলের ক্ষেত। এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষীরা। শুধু জেলার পবায় একটি পুকুরের জন্য জলাবদ্ধায় নষ্ট হতে বসেছে হাজার বিঘা জমির ফসল।কয়েক বছর থেকেই রাজশাহী জেলাজুড়ে চলছে পুকুর খননযজ্ঞ। ফসলি জমির পাশাপাশি পুকুর খনন করতে গিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কালভার্ট ও ব্রিজের মুখ। ফলে পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে চলতি মৌসুমে চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষিজীবীরা। এদিকে গত বুধবার এক রাতের রেকর্ড বৃষ্টিতেই ডুবে গেছে পবা উপজেলার তেঘর, বসন্তপুর, উলাপুর, থালতা, বাগধানি, বাগসারা, কুমড়াপুকুর গ্রামের কয়েক হাজার বিঘা ফসলের মাঠ। সরেজমিন দেখা যায়, এ বছর তেঘর-বসন্তপুর গ্রামের মাঝখানে পানি নিষ্কাশনের উৎসমুখ বন্ধ করে প্রায় ১৫ থেকে ২০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। এখন প্রবল বর্ষণের পর পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় ডুবে গেছে ওই পুকুরের আশপাশের জমি। এ অবস্থায় চাষিরা পানিতে ডুবে যাওয়া ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হলে আগামী আলুচাষও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। শুক্রবার ওই মাঠে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় চাষীরা ক্ষেত থেকে অপরিপক্ক বেগুন, মরিচ, ঢেঁড়স, পটোল তুলছেন। চাষীরা জানান, শুধু অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের কারণে তাদের সর্বনাশ হয়েছে। তারা বলেন পানিতে পচে যাওয়ার আশঙ্কায় তারা অপরিপক্ক ফসল তুলে নিচ্ছেন।স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রভাবশালীরা মাছচাষে অধিক লাভবান হওয়ায় পুকুর খননে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তবে পুকুর খননকারীদের উচিত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা। তিনি বলেন, এসব বিষয় প্রশাসনের নজরদারিতে আসা দরকার। এদিকে এমন চিত্র শুধু পবায় নয় পুরো জেলার খাল-বিলের উৎসমুখে অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে বিপাকে পড়েছেন হাজারো চাষী। দুর্গাপুর উপজেলার দুটি খালের মুখে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করায় জলাবদ্ধতায় প্রায় ৩০০ একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এ মৌসুমে ওই জমিতে আলুচাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কৃষকেরা বলছেন, গত বর্ষায় পানি জমে বেশ কিছু স্থানে ফসল নষ্ট হয়ে গেছিল। এবারও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকরা জানান, গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে ফসলের জমি কেটে পুকুর খননের হিড়িক পড়ে গেছে। পুকুর মালিকেরা সাধারণ চাষীদের বাধ্য করছেন জমি বিক্রি করতে। উপজেলার জুগিশো-পালশা গ্রামের কৃষক খুরশিদ আলম বলেন, এক পুকুর মালিক তার জমি জোর করে দখলে নিয়েছেন। তবে পুকুর খননকারীদের একজন বলেন, নিজের জমিতে পুকুর খনন করেছেন তিনি। পানি নিষ্কাশনের বিষয়টি সরকার দেখবে। পানি নিষ্কাশনে তার কিছু করার নেই।
×