ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপত্তা ছাড়পত্র এসএফ-৮৬ জবাবদিহিমুক্ত রেখেছে তাকে

ট্রাম্প প্রশাসনে অমিত প্রভাবশালী কুশনার!

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৫ জুলাই ২০১৭

ট্রাম্প প্রশাসনে অমিত প্রভাবশালী কুশনার!

যুক্তরাষ্ট্রে বেশ ক’দিন ধরে ভেসেলনিটস্কায়া নামের এক রুশ নারী আইনজীবীর সঙ্গে প্রেসিডেন্টের বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের রহস্যময় সাক্ষাতকারের ঘটনা দারুণ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এই নারী আইনজীবী হিলারি ক্লিনটন সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর খবর দেবেন বলে ট্রাম্প জুনিয়রকে ট্রাম্প টাওয়ারে ডেকে নিয়ে এই বৈঠক করেন। খবর এএফপি। কিন্তু সর্বশেষ খবরে জানা গেছে যে, ট্রাম্প টাওয়ারের এই বৈঠকের সময় ওই নারী আইনজীবীর সঙ্গে ট্রাম্প জুনিয়র ছাড়াও তার প্রভাবশালী জামাতা জারেড কুশনারও ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রধান পল ম্যানাফর্টও উপস্থিত ছিলেন। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের সময় জারেড কুশনারের তৎপরতা ছিল দারুণ রহস্যময় ও গোপনীয়তার ভরা। তিনি বেশ কয়েকবারই ওয়াশিংটনস্থ রুশ দূতাবাসের প্রধান সের্গেই কিসলিয়াক এবং রুশ ব্যাঙ্কারসহ অন্যান্য রাশিয়ার এজেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন অজুহাতে দেখা-সাক্ষাত করেন। কিন্তু কখনও তা প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি। সংশ্লিষ্ট অপর কারও মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ হয়ে গেলে কুশনার এগুলোকে ব্যবসা সংক্রান্ত সৌজন্য সাক্ষাত বলে পাশ কাটিয়ে যেতেন। ট্রাম্প জুনিয়রের সঙ্গে কুশনারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এটি প্রকাশ হয়ে গেলে ভেসেলনিটস্কায়া নামের ওই নারী আইনজীবী বলেন, হ্যাঁ, কুশনার সেখানে উপস্থিত ছিলেন তবে মাত্র সাত থেকে দশ মিনিটের মধ্যে তিনি স্থান ত্যাগ করেন। ওই নারী আইনজীবী আরও বলেন, নির্বাচনে হিলারির ভরাডুবি হয় এমন কোন তথ্য হস্তান্তরের কোন উদ্দেশ্য তার ছিল না। তবে এখন আর এসব কিছুই জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। হিলারি ক্লিনটন তথা ডেমোক্রেটদের ক্ষমতাচ্যুত করতে রিপাবলিকানরা ট্রাম্পের কিছু বিশ্বস্ত লোকজন নিয়ে যেভাবে আদাজল খেয়ে লেগেছিল তা অবাক করার মতো ঘটনা। এবং তা করতে গিয়ে তারা বিদেশী শক্তির (রাশিয়া) সাহায্য নিতেও কুণ্ঠিত হয়নি। রুশ হ্যাকাররা হিলারির বিরুদ্ধে নানা ধরনের উদ্ভট-ভিত্তিহীন খবর ও গুজব ছড়িয়ে এবং আরও নানাবিধ কায়দায় তাকে হারিয়ে দেয়ার পথ উন্মোচন করে। তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, দেশীয় রাজনীতিতে বিদেশীদের প্রভাব বিস্তারের এই ঘটনা মার্কিন রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে এবং একটি নিকৃষ্ট নজির সৃষ্টি করবে। তবে, ওয়াশিংটনে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছে তা হচ্ছে জারেড কুশনারের সীমাহীন ক্ষমতা প্রয়োগ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার মেয়ের জামাইকে হোয়াইট হাউসের সব নীতি-নির্ধারণী ক্ষেত্রে একচ্ছত্র ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন। বিশেষ করে পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে কুশনারই প্রধান ব্যক্তি বলে জানা গেছে। সম্প্রতি আমেরিকার এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, উপসাগরীয় দেশ কাতারকে তার প্রতিবেশীদের দ্বারা অবরুদ্ধ করার পরিকল্পনা নাকি জারেড কুশনারের মস্তিষ্ক প্রসূত। কেননা, এর আগে কুনলার তার ব্যবসায় লগ্নি করার জন্য কাতারের আমিরের কাছে বিপুল অর্থ ঋণ চেয়েছিলেন। কাতার তা দিতে রাজি না হওয়ার দেশটির বিরুদ্ধে এই মোক্ষম কূটচাল দিলেন কুশনার। তবে কুশনারকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা সিনেট কমিটি জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলে তিনি নিরাপত্তা ছাড়পত্র দলিল এসএফ-৮৬-এর কথা উল্লেখ করে কোন প্রকার জবাব না দিয়ে চলে যান। এসএফ-৮৬-এর সুবিধা নিয়ে সরকার বা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় জড়িত থাকলেও তার কেশাগ্র স্পর্শ করার শক্তি কারও নেই। তাছাড়া এসএফ-৮৬-এর বদৌলতে কুশনার প্রশাসনের গোপনতম খবর ও আগেভাগে জেনে ফেলেন এবং সেই অনুযায়ী ট্রাম্পকে সঙ্গে নিয়ে আত্মরক্ষার্থে প্রতিকার বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম হন। সে জন্য জারেড কুশনারের এই সীমাহীন ক্ষমতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে গত মাসে হাউস ওভারসাইট কমিটির প্রায় ২০ জন সদস্য হোয়াইট হাউসে এক পত্র পাঠিয়েছেন।
×